ফিরে এসেছে অতিথি পাখিরা জাবি ক্যাম্পাসে! 

ju-photo-3প্রতিবছর শীতকাল এলেই জলাশয়, বিল, হাওড়, পুকুর ভরে যায় নানা রংবেরঙের নাম না জানা পাখিতে। আদর করে আমরা সেগুলোকে বলি অতিথি পাখি। নাম অতিথি হলেও এই পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে হাজির হয় নিজেদের জীবন বাঁচাতে।

ঢাকার অদূরে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও লীলাভূমি খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। ক্যাম্পাসে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪টি লেকে অতিথি পাখি বেশি বসে থাকে। এবারো প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক। এছাড়াও বোটানিকেল গার্ডেনের পাশের লেকেও লাল শাপলার মাঝে দেখতে পাবেন খুনসুঁটিতে ব্যস্ত অতিথি পাখিরা।

দৃষ্টিনন্দন লেকে নানান জাতের শাপলা, তার মাঝে অতিথি পাখিদের খুনসুঁটি, পানির মাঝে ডুবোডুবি আর উড়োউড়ি এসব দেখতে, ক্যাম্পাসের কুয়াশায় গা জড়াতে, ঠান্ডা বাতাসে গাটাকে শিহরিত করতে, ব্যস্তময় এ জীবনে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে আরে এ সৌন্দর্য দেখে মনকে প্রশাস্ত করতে লাল মাটির ক্যাম্পাস জাবির যেন বিকল্প নেই। অতিথি পাখির জন্য এই লেকগুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতিথি পাখির জন্য আরো কয়েকটি লেক পরিষ্কার করেছে।

প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের দিকে হিমালয়ের উত্তরে প্রচন্ড শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীত প্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। তুষারপাতে টিকতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার অতিথি পাখি দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ দেশ বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের  যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

Post MIddle

অক্টোবরের শেষে ও নভেম্বরের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকগুলোতে অতিথি পাখি আসতে শুরু করে এবং ফেব্রুয়ারির শেষ ও মার্চের প্রথম দিকে আবার ফিরে যায়।আর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক অতিথি পাখি এ লোকগুলোতে আসে সাইবেরিয়া  থেকে।

বর্তমানে লেকগুলোতে  যে পাখি দেখা যাচ্ছে তা এসেছে নেপাল ও ভারতের হিমালয় ও বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চল থেকে।

unnamedবিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের জরিপে দেখা যায়, ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম অতিথি পাখি আসে। এ সময় ৯০ প্রজাতির অতিথি পাখি দেখা যায় এ ক্যাম্পাসে। বর্তমানে ১৯৫ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। যার মধ্যে ১২৬টি প্রজাতি দেশীয় এবং ৬৯টি পরিযায়ী বা অতিথি পাখি।

দুই ধরনের পাখির আগমন ঘটে এ ক্যাম্পাসে। এক ধরনের পাখি ডাঙ্গায় বা শুকনো স্থানে বা ডালে বসে বিশ্রাম নেয়। আরেক ধরনের পাখি পানিতে থাকে ও বিশ্রাম নেয়। এদের বেশির ভাগই হাঁস জাতীয়।

এ ক্যাম্পাসে যে সব পাখি আসে তার মধ্যে ৯৮% ছোট সরালি। আর বাকি ২% অন্য প্রজাতির পাখি। এদের মধ্যে রয়েছে, বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুনতে হাঁস, ভূতি হাঁস, ঝুঁটি হাঁস ইত্যাদি।

অতিথি পাখিরা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই প্রতিবছর ভ্রমণ করছে। প্রতিবছরই তারা শীতপ্রধান অঞ্চলের তীব্র শীত থেকে বাঁচতে উড়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মাইল দূরের অপেক্ষাকৃত কোনো উষ্ণ অঞ্চলের দিকে। সাদা চোখে কিছু না বোঝা গেলেও পাখিদের এই ভ্রমণের একটা আন্তর্জাতিক গুরুত্ব আছে। ২০০৬ থেকে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে।

পছন্দের আরো পোস্ট