ঢাবি রোকেয়া হলে স্বর্ণপদক ও বৃত্তি প্রদান

যথাযোগ্য মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল (৯ ডিসেম্বর ২০১৬) শুক্রবার দিনব্যাপী ‘রোকেয়া দিবস-২০১৬’ উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল মিলনায়তনে ‘রোকেয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন বক্তৃতা, স্বর্ণপদক ও বৃত্তি প্রদান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশন বক্তৃতা প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের রবীন্দ্র চেয়ার অধ্যাপক ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়।

রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষা অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথি এবং প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ ও প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রোকেয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও হলের খন্ডকালীন আবাসিক শিক্ষিক সৈয়দা আতিকুন নাহার।

অধ্যাপক ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায় “গৌড়ীয় নৃত্য ও সমাজ : নারী প্রসঙ্গ” শীর্ষক ফাউন্ডেশন বক্তৃতায় প্রাচীন আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ও সংস্কৃত শাস্ত্রানুযায়ী সমাজে নারীর অবস্থান এবং বিভিন্ন শতকের শিল্পকলা চর্চায় বিশেষত নৃত্যকলা শাস্ত্রে নারীদের অবস্থান ও ভূমিকা প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনা করেন। বেগম রোকেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব ধর্মের সব মেয়েদেরই দৃঢ় হতে হবে, নির্ভীক হতে হবে, আত্মপ্রত্যয়ী হতে হবে। বিশ শতকের গোড়াতে যখন শিক্ষিত সমাজে প্রতিষ্ঠিত বহু বাঙালি মুসলমান রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবী উর্দু ভাষায় চর্চা করছেন, তখন রোকেয়া শুধু সাধারণ শিক্ষা বিস্তারে নয়- নারী শিক্ষা বিস্তারেও মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। উর্দু ও ফার্সি ভাষাকে নিজেদের মাতৃভাষা হিসেবে গণ্য করার প্রবণতাকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। মাতৃভাষা ছাড়া একটি জাতি মাতৃহীন একথা তিনি দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করেছেন। চিন্তা, চেতনা, মননে, কর্মে তিনি ছিলেন একজন প্রদীপ্ত বাঙালি। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা রোকেয়ার মতো একজন মহীয়সী নারীর উত্তরসূরী। তিনি বলেন, আমি সমাজ সংস্কার নই, রাজনীতিবিদ নই, আমাদের মহীয়সী নারীদের দেখানো পথে হাঁটতে চাই।

Post MIddle

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতে বিজয়ের মাসে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। এই মাসের সাথে যুক্ত আছেন বেগম রেকেয়া, তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিন একই। ঐতিহাসিক ঘটনা এই দিনটিকে কেন্দ্র করে আছে। উপাচার্য ফাউন্ডেশন বক্তা অধ্যাপক ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি নৃত্য আন্দোলনের সাথে যুক্ত। তাঁর প্রবন্ধে নৃত্যের বিভিন্ন গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে। তিনি নৃত্যকে ভালোভাবে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। বেগম রেকেয়ার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বলেন, বেগম রোকেয়ার ৫২ বছর জীবনের প্রতিটি দিনই তিনি নারীদের কথা ভেবে ব্যয় করেছেন। নারীদের অগ্রগতি, উন্নতির কথা রোকেয়া তুলে ধরেছেন তাঁর লেখনীতে। বেগম রোকেয়ার আদর্শকে ধারণ করে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে হবে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর উদ্বৃতি তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, একজন মানুষের যেমন দুটো হাত, দুটো পা থাকে, ঠিক তেমনি সমাজেরও দুটো হাত বা পা আছে। আর তা হলো নারী ও পুরুষ। নারী পুরুষকে সমানভাবে এগিয়ে যেতে হবে। নারীদের পেছনে ফেলে সমাজ কখনো সামনের দিকে এগুতে পারবে না। উপাচার্য রোকেয়া হলের ছাত্রীদের বেগম রোকেয়ার দর্শন, শিক্ষা, মানবতাবোধ, সমাজ এবং সাংস্কৃতিক চেতনা অনুসরণ ও অনুকরণ করে তাঁর আদর্শকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

পরে উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক রোকেয়া হলের মেধাবী ছাত্রীদের মাঝে স্বর্ণপদক ও বৃত্তি প্রদান করেন। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে হলের স্বর্ণপদক পেয়েছেন- আদিবা সুলতানা মীম (এম.এস.এস, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ)। মেধাবৃত্তি লাভ করেছেন- মারজান তাফরীন (এম.এ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ), আয়েশা রহমান (এম.এস, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ), আফরিনা খাতুন (এম.এস, তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট), প্রণীতা দত্ত (এম.এস.এস, লোক প্রশাসন বিভাগ)। সাধারণ বৃত্তি পেয়েছেন- নওশীন জাহান ইতি (বি.এস.এস, ৩য় বর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ), তাসফিয়া তাজিন (২য় বর্ষ, বি.এস.এস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ), সাবিহা আল হুমায়রা মমি (১ম বর্ষ, বি.এ, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ) ও প্রতিমা সাহা (১ম বর্ষ, বি.বি.এ, ফিন্যান্স বিভাগ) এবং কল্যাণ বৃত্তি দেওয়া হয়েছে নুসরাত জাহান মুনকে (২ম বর্ষ, বি.এস.এস, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ)।

এছাড়া, রোকেয়া দিবস উপলক্ষে ৯ ডিসেম্বর ২০১৬ সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে রোকেয়া হলের উদ্যোগে হল চত্বর থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এসময় প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীনসহ হলের বিপুল সংখ্যক ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন।#

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট