শাবির ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি,আটক ৮

Sahjalal Universityশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বড় রকমের জালিয়াতি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চেষ্টার ঘটনায় কমপক্ষে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে।আটককৃতরা হচ্ছে আল আমিন, ভর্তিচ্ছু ৫ পরীক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী।

অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার জানান, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভোর ৬টায় কুমারগাও বাসস্ট্যান্ডে এসে জালালাবাদ থানা এবং অন্যান্য পুলিশ ৬জনকে আটক করে। এর মধ্যে ৪জন পরীক্ষার্থী যারা বাসে আসছিল, একজন ওই কোচিংয়ের শিক্ষক কিন্তু সেই প্রকৃত হোতা, সে-ই ওই ডিভাইসগুলি দিয়ে থাকে।আবাসিক হল থেকে কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে(হল থেকে) নিয়ে আসা হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে। এ মূহুর্তে আমরা তথ্য দিতে চাচ্ছি না।

কতজন আটক হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি বলেন, সকালে ৬জন আর পরে ২জন। এর মধ্যে পরীক্ষার্থী ৫জন, যাদের মধ্যে একজনকে হল থেকে আটক করা হয়েছে। একজন শাবির, দুইজন বাইরের। পরীক্ষার্থী বাইরে থেকে ৪জন এবং হল থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাত ইমতিয়াজ হৃদয়।

কোতোয়ালি থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার নুরুল হুদা আশরাফীর বক্তব্য

এই চক্র অনেক বড় একটা চক্র। আমাদের কাছে তথ্য ছিলো অনেক দিন যাবতই এই চক্র শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি জালিয়াতির চেষ্টা করছে। সে তথ্য পাওয়ার পর থেকেই আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করা শুরু করে। আমরা খবর পাই , বগুড়া জেলার গুগল নামের একটি ভর্তি কোচিং সেন্টার এ কাজের সাথে জড়িত। গুগল কোচিং সেন্টার এর সহকারী পরিচালক আবির ওরফে তুহিন ওরফে জিহান। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম তারা পূরণ করে থাকে। ফরম পূরণের আড়ালে তারা ভর্তি জালিয়াতিসহ এই ধরনের অপকর্মগুলো করে থাকে। এছাড়া তারা আমরা খবর পাই বি ইউনিটের পরীক্ষা দিতে এই পার্টি সিলেট চলে আসে। মূলত চারভাগে এই পার্টিগুলো কাজ করে। প্রথম টিম শিক্ষার্থীদের সংগ্রহ করত, দ্বিতীয় দল প্রশ্ন সংগ্রহে জড়িত, তৃতীয় দলটি প্রশ্ন সমাধানে কাজ করে আর অন্যদিকে চতুর্থ দলটি এই প্রশ্নের সমাধান টেকনোলজির মাধ্যমে তাদের কাছে প্রেরণ করত।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ঐ চক্রের মূল দুই হোতাকে গ্রেফতার করি। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাত ইমতিয়াজ হৃদয়। হৃদয় গুগল কোচিং সেন্টারে নিয়মিত ক্লাস নেয়। ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি হৃদয় প্রথম টিমের প্রধান হিসেবে কাজ করত। অর্থাৎ শিক্ষার্থী সংগ্রহ করত। অন্যজন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী। ফুড এন্ড টি টেকনোলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থীর নাম আল আমিন। সেও প্রথম টিমের সদস্য। শিক্ষার্থী সংগ্রহের সাথে সেও জড়িত ছিলো। আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। ডিভাইসগুলো তারা সরবারহ করবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাদের আটক করি।

Post MIddle

প্রত্যেক ছাত্রের কাছে তারা ৫-৬ লক্ষ টাকা নেয় এসবের বিনিময়ে। তবে কেউ যদি পাঁচের অধিক শিক্ষার্থী যোগাড় করে দিতে পারে তবে তার জন্য ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা ছিলো। সেক্ষেত্রে তারা আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা দিয়ে এ কাজ করে দেয়।তারা স্বীকার করেছে তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা সফলতার সাথে এ কাজ সম্পন্ন করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন জানান এরা মূলত জালিয়াত চক্র। তারা বিভিন্নভাবে ছাত্রদেরকে প্রতারিত করে থাকে।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় হল থেকে কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হল থেকে আটক করা হয়েছে এমন তথ্য আছে জানালে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন। কোন আবাসিক হলের শিক্ষার্থী কিনা সে জানতে চাইলে তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান তারা।

এছাড়া হৃদয় ও আলআমিনকে ছাড়া অন্য কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আরো পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান আশরাফী। তবে জিহান ওরফে আবীর ওরফে তুহিন এখনো ধরাছোয়ার বাইরে আছে।ডিভাইসগুলো পরীক্ষার্থীদের কাছে বিতরণ করার আগেই চক্রটিকে ধরে ফেলায় তাদের পুরো পরিকল্পনাটিই নস্যাৎ হয়ে যায়। তথ্যের ভিত্তিতে গত কয়েকদিন ধরেই তারা বিভিন্ন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগীতায় রেড চালায়। যা শনিবার সকালে সফলতার মুখ দেখে।শিক্ষার্থীদের অন্যান্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা নেয়া হয়েছে। তারা প্রতারিত হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট কোনো কিছু পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরা সবাই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী।

হল থেকে ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে প্রশ্নটা কিভাবে যায়? ডিভাইসটা যাদের কাছ থেকে নিয়ে যাবে তারা শিখিয়ে দিবে কিভাবে এটা বাইরে পাঠানো যায়? হলে ঢোকার সাথে সাথে প্রশ্নপত্র বন্টনের পরপরই কোনো সোর্সের মাধ্যমে তা বাইরে চলে আসবে। বাইরে আসার পর তাদের প্রশ্নপত্র সলভ টিমের লোকগুলো তা সমাধান করে তারা সিমের মাধ্যমে ফিরতি মেসেজ পাঠাবে । যা ইনবক্সে বাংলা উত্তর আসবে।

তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হবে কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি বিশ্লেষণ করে মামলা করা হবে বলে জানান আখতার হোসেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।প্রথমে এনসার তারপর ইএক্সপি চাপ দিলে সরাসরি মেসেজ আকারে উত্তর চলে আসে শিক্ষার্থীদের কাছে। এনসার বাটনে মোবাইল অন হয়। এটাতে কোনো কল করা যায় না। শুধু বাইরে থেকে মেসেজ আসবে।

পছন্দের আরো পোস্ট