স্টামফোর্ডে সফল সিএসই ফেস্ট

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি কম্পিউটার সোসাইটির তরুণরা স্বপ্ন দেখেছিলো একটা তারুণ্য উৎসবের। যে উৎসবে থাকবে আইটি ক্ষেত্রে তরুণদের অংশগ্রহণ। তরুণরা ঠিক দেড়মাস ধরে যে বিশাল প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিযোগীতাটি শেষ করলো, নাম তার “সিএসই ফেস্ট২০১৬”।

Post MIddle

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে গত ২৩-২৪ নভেম্বর দুদিন ব্যাপী আয়োজনটি শেষ হয়েছে। আয়োজনে দেশের দশটি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিয়েছে, এছাড়া কলেজ পর্যায়েও অনেকগুলো প্রজেক্টে ঢাকার নামকরা কলেজগুলো অংশ নিয়েছে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশরী ক্যাম্পাসে গত ২৩শে নভেম্বর সকাল দশটায় “সিএসই ফেস্ট ২০১৬” এর উদ্বোধন ঘোষনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড.এম ফিরোজ আহমেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার আবদুল মতিন, সিএসই ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড.কামরুদ্দিন মো.নূর, বিভাগের শিক্ষক এম মনজুরুল ইসলামসহ বিভাগের ফ্যাকাল্টিবৃন্দ।

উদ্বোধনের পর অতিথিবৃন্দ প্রজেক্টগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড.এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, “সিএসই ফেস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আইটি খাতের বিভিন্ন কাজে পারদর্শী হয়ে উঠবে, এধরনের আয়োজনকে তিনি সবধরনের সহযোগীতা করবেন বলে ঘোষনা দেন।”

দুদিনব্যাপী আয়োজনে ছয়টি প্রজেক্টে প্রতিযোগীতা অনুষ্টিত হয়। যেগুলো হলো এ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড প্রজেক্ট শো, পোগ্রামিং কনটেস্ট, রোবো রেইস বা লাইন ফলোয়ার , রোবো সকার, গেমিং কনটেস্ট, আইটি কুইজ।প্রথমদিনে প্রতিযোগীতার প্রত্যেকটি প্রজেক্টের দুটি করে রাউন্ড শেষ হয়, শেষদিন বাকি অংশ সমাপ্ত হয়।প্রতিযোগীতায় রোবো রেইসে ১২টি দল অংশ নেয়, রোবো সকারে ১২টি, আইটি কুইজে দ্বিতীয় রাউন্ডে কোয়ালিফাই হন ৮জন। বিভাগের শিক্ষক ও আয়োজনের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর এম মনজুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ” রোবো রেইস, রোবো সকার এবং গেমিং কনটেস্টে বাইরের ইউনিভার্সিটি গুলো অংশ নেয়।এরমধ্যে গেমিং কনটেস্টে আইইউবি, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি অংশ নিয়েছে।” তিনি আরো জানান, আগামী বছর আরো বড় পরিসরে স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ফেস্টটি করার পরিকল্পনা নিচ্ছেন তারা। এবারের সিএসই ফেস্টের মাধ্যমে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি কম্পিউটার সোসাইটি(SUSC) তাদের বড় একটি সফলতা অর্জন করলো।

পুরো ক্যাম্পাসে সিএসই ফেস্ট ঘুড়ে দেখা মিললো বিভিন্ন ধরণের মেধাবী তরুণদের।গেমিং কনটেস্টের রুমে দেখা মিললো ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির অর্কের সঙ্গে।বললেন, “সিএসই ফেস্ট প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা উচিত, এটার জন্য স্টামফোর্ডের এবারের আয়োজনটি ভালো দৃষ্টান্ত।” এ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড প্রজেক্ট শো আর রোবো সকারে অংশ নেয়া স্টামফোর্ডেরই সিএসই ৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুকিত মুতাক্কিম বললো “আমার প্রজেক্টটি ছিলো মূলত ব্লাড ম্যাচিংয়ের উপর। একটি স্বয়ংক্রিয় এ্যাপস ব্যাবহার করে রক্তদাতার সন্ধান পেতে আমার এ্যাপসটি সাহায্য করবে।আমি আশা করছি এ্যাপ ডেভেলপমেন্টে প্রাইজ আসবে, রোবো সকারে আমি আর ইউসুফ মিলে রোবট টি তৈরী করেছিলাম। অল্পের জন্য সেমিফাইনালে হেরে যায় আমাদের রোবটটি। তিনটি প্রজেক্টে অংশ নেয়া সিএসই পরিবারের নবীনতম সদস্য ও বিতার্কিক সজিব খান জানালো ভিন্ন কথা, “এবারের আয়োজনটি আমাদের জন্য একটা অনুপ্রেরণা। দারুণ আয়োজন, সত্যি আমাদের ডিপার্টমেন্ট নিয়ে গর্ব হচ্ছে।”রাজশাহী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর চ্যাম্পিয়ন হবার আনন্দোচ্ছাসটা দেখলাম ফেস্টেই।

সর্বশেষে যখন ফলাফল ঘোষনার পালা, সবার চোখে মুখে টানটান উত্তেজনা। মুহুর্তেই একবার এদিক থেকে বিজয়োৎসব, অন্যদিক থেকে পরাজয়ে মনখারাপ করা প্রতিযোগীদের।

২৪ নভেম্বর বিকেলে ফেস্টের পুরষ্কার বিতরণীতে প্রীতম ধরের উপস্থাপনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বেসিস’র প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা জাব্বার।অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড.লুৎফর রহমান, বেসিস’র ডিরেক্টর ও কনভেনর রিয়াদ এসএ হুসাইন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্টের একাডেমিক এডভাইজর প্রফেসর ড.মাহফুজুল ইসলাম, সিএসই ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড.কামরুদ্দিন মো.নূর উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথি বেসিস’র প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা জাব্বার বলেন, “আমি অভিভূত এমন চমৎকার আয়োজনে। শেষ যে প্রতিযোগীতাটি দেখলাম, বলা যায় ব্রিলিয়ান্টদের মাঝে বসে আছি আমি!” তিনি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান এরকম সৃষ্টিশীল আয়োজন করায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান কামরুদ্দিন মো.নূর সমাপনী বক্তব্য বলেন,” পুরো আয়োজনে আমাদের সহযোগীতার জন্য বেসিস কতৃপক্ষ কে ধন্যবাদ। আমি ধন্যবাদ জানাই বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে প্রথমবারের মত এত বড় একটি আয়োজনে সবধরনের সহযোগীতার জন্য, অভিনন্দন জানাচ্ছি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি কম্পিউটার সোসাইটির প্রতিটি সদস্যকে যাদের নিরলস পরিশ্রম আজকের দিনটি আমাদের উপহার দিয়েছে। ধন্যবাদ জানাচ্ছি সকল স্পনসর, বিশেষ করে আসুস কর্তৃপক্ষকে, মিডিয়া পার্টনারসহ সবাইকে স্টামফোর্ড সিএসই ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

সবশেষে বিভিন্ন প্রজেক্টে সেরাদের নাম ঘোষনার পালা, এ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এবং প্রজেক্ট শো তে চ্যাম্পিয়ন হয় টিম নেমো, প্রথম রানার্সআপ হয় টেকনোব্লাস্ট। এ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এবং প্রজেক্ট শো তে দরকারী বিভিন্ন এ্যাপের মাধ্যমে সহজে কাজ করার পদ্ধতি বের করেন প্রতিযোগীরা। লাইন ফলোয়ারে চ্যাম্পিয়ন হয় টিম ম্যাগনেটো আর রানার্সআপ হয় টিম নট লেস দ্যান।সিএসই ফেস্ট জমিয়ে তোলা আইটি কুইজে চ্যাম্পিয়ন হয় Peoatat, রানার্সআপ হয় ব্লাক বার্ডস এবং Sb53। রোবো সকারে রোবট গুলো মেতে উঠে গোল উৎসবে, ফাইনালে রোবোদা ৪-১গোলে হারায় টার্মিনেটর এক্স কে,এসময় অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গেমিং কনটেস্টে ফিফায় চ্যাম্পিয়ন হয় মেনন খান, রানার্সআপ রিয়াজ উদ্দিন। এনএফএসে চ্যাম্পিয়ন হন মো.মাহফুজুল ইসলাম, রানার্সআপ হন আহমেদ নোমান।

আয়োজনের শেষে স্বস্তির হাসি দেখা গেলো আয়োজনের স্টুডেন্টস প্রতিনিধি এস এস অনিক এবং ইশতিয়াক আহমেদের মুখে, বললেন “আগামী বছর আরো পরি পরিসরে এরকম আয়োজন করার চিন্তাভাবনা করছি।”

পছন্দের আরো পোস্ট