নিউইয়র্ক বাঙালী কমিউনিটির এক সফল নেত্রী মাজেদা আকতার উদ্দিন

unnamed-1নেতৃত্ব এমন একটি জিনিস যেটা ব্যক্তির সহজাত দক্ষতা মুল্যবোধ প্রখর ব্যক্তিত্ব দুরদৃষ্টি ও বুদ্ধিমত্তার বিচারে মুল্যায়িত হয়। মাজেদা আকতার উদ্দিন নর্থ আমেরিকা বাঙালী কমিউনিটির ব্যাপক পরিচিত একটি নাম। বাঙালী কমিউনিটির কল্যাণে নিবেদিত। বহু ত্যাগ তিতিক্ষা করে আজ মাজেদা উদ্দিন গোটা  নিউইয়র্কে তাঁর সুদৃঢ় অবস্থান বজায় রেখেছেন। সমাজে মাজেদা উদ্দিনের নিরলস অবদানের কথা আমরা এবং পরবর্তী প্রজন্ম আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

আগে হাসপাতাল গুলোতে বাংলা ভাষা চালু ছিলনা। ইংরেজির পরেই স্প্যানিশ ভাষার অবস্থান। কারন আমেরিকায় এটা সরকারীভাবে স্বীকৃত যে “Spanish is the second language of America”এই ব্যানার দেখতে ও নিয়ম মানতে সবাই অভ্যস্ত। স্প্যানিশ ভাষার সরকারী স্বীকৃতি দেখে আমার খুব মন খারাপ হত কিন্তু কিছুই করার নেই। যেখানে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। হাসপাতাল গুলোতে ইটালিয়ান হিব্রু উর্দু হিন্দী আরবী পোলিশ রাশান আলবেনিয়ান জাপানিজ কোরিয়ান চায়নিজ ফ্রেঞ্চ গ্রীক ভাষার কত দখলদারিত্ব দেখেছি। কিন্তু বর্তমানে বাংলা ভাষা সেখানে তার অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে মাজেদা আকতার উদ্দিনের অবিস্মরণীয় অবদানের কারণে

এমনকি নিউইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব মোটর ভিহেইকেল ডিপার্টমেন্টে ড্রাইভিং লাইসেন্স টেস্ট সিস্টেমে বাংলা ভাষা চালু করেছেন মাজেদা উদ্দিন। যারা ইংরেজি ভাষায় অদক্ষ তারা বাংলায় পরিক্ষা দিয়ে অনায়াসে রোড পারমিট নিতে পারছে। মাজেদা উদ্দিন যখন দেখলেন অধিকাংশ মানুষ ইংরেজিতে দুর্বল এবং তারা রোড পারমিট টেস্টে ফেল করছে,তখন তিনি জামাইকা থেকে নির্বাচিত এসেম্বলিম্যান ডেভিড ওয়েপ্রিনের সাথে মিটিং করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডেভিড ওয়েপ্রিন ডিএমপিকে চিঠি লিখে বাংলা চালু করার নির্দেশ দেন।   ডিমপির ডেপুটি কমিশনার টিমোথি বি লেলন কম্পিউটার স্ক্রিন টেস্টে বাংলা চালুর ঘোষণা দেন।

unnamed

নিউইয়র্কের স্কুলগুলোতে  মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের জন্য হালাল ফুড সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানেও মাজেদা উদ্দিনের অসামান্য অবদান রয়েছে। সমাজের কল্যানে তিনি রাতদিন পরিশ্রম করে চলেছেন। তিনি নেতৃত্ব দেয়ার অসামান্য যোগ্যতা রাখেন বলেই এগুলো সম্ভব হয়েছে।

Post MIddle

পাবলিক স্কুলে হালাল ফুড সরবরাহের বিল এসেম্বলি সিটি কাউন্সিল ও সিনেটের মাধ্যমে পাশ হওয়ার পথে। সিটি মেয়র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আসন্ন নির্বাচনের পর পরই উক্ত বিলটি অনুমোদিত হবে । এটাও আমাদের জন্য বিরাট অর্জন। মাজেদা উদ্দিনই একমাত্র বাংলাদেশী যিনি ইলেকশন বোর্ডের মেম্বার। ইউএস স্পিকার এই পদে তাঁকে নিযুক্ত করেছেন।

আরও গৌরবের বিষয় হল, তাঁর কারণে নিউইয়র্ক সিটিতে ব্যালট পেপার বাংলায় করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী এবার বাংলা ভাষা যাবে হোয়াইট হাউজে। সিনেটর ইলেকশনে যখন ব্যালট পেপারে অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলা দেখেছি,  খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। পোলিং অফিসার থেকে যখন সাইন করে ব্যালট পেপার নিচ্ছিলাম নিজের অজান্তে  ‘ইয়াহু…. বাংলা’ বলে চেঁচিয়ে উঠলাম। বুথে কর্মরত অফিসার এজেন্টরা হেসে উঠলেন আমার উচ্ছ্বাস দেখে। তাঁরা একটুও মাইন্ড করলেন না। মার্কিনীরা সব সময় সবক্ষেত্রে খুব অনুপ্রেরণা যোগায় মানুষকে।

সম্ভবত হিলারী ক্লিনটন হতে যাচ্ছেন আমেরিকার ইতিহাসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। ৮ নভেম্বর ইলেকশনে জনগণ ব্যালট পেপারে হিলারীর প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন জানাবে। কারণ উগ্রস্বরের ডোনাল্ড ট্রাম্প সাধারণ মানুষের জন্য কখনই কল্যাণকর হবেনা। এটা প্রত্যেক সচেতন নাগরিক  জানেন ও বোঝেন। গণমানুষের উন্নয়নের জন্য হিলারীকেই প্রয়োজন, উগ্র ট্রাম্পকে নয়। যে কিনা নির্বাচিত হবার আগেই অফিসিয়ালি ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে, সে নির্বাচিত হলে টেরোসিস্ট মুসলিমদেরকে আমেরিকা থেকে বের করে দেবে।কিন্তু এখানে প্রশ্ন থেকে যায়। আমরাও খুব চাই আতঙ্কবাদীরা বিনাশ হোক  নির্মূল হোক। আমরাও চাই।কারণ তারা ইসলামেরও শত্রু। একজন সত্যিকারের মুসলিম কখনো মানুষ হত্যা করতে পারেনা। ধ্বংসাত্বক জঘন্য কার্যকলাপে অংশ নিতে পারেনা। সে পবিত্র  ইসলামের চোখেও অপরাধী।

unnamed-2

কথা হচ্ছে ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন,  তাতে শান্তিপ্রিয়  ধর্মপ্রাণ বহু মুসলিম বলির পাঁঠা হতে পারে। আমেরিকা গণতন্ত্রের দেশ। সংবিধানে উল্লেখ আছে, “You can practice religion or Non practice religion”. এই দেশে নিরপরাধ বহু মুসলিম আছেন। কিন্তু রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের উগ্র ঘোষণার পর আশংকা করা হচ্ছে নিরপরাধ মুসলিমদের ঘাড়ে অন্যায়ভাবে করাত চালিয়ে দেয় কিনা। যদিও ট্রাম্পের এমন নিন্দাজনক উক্তিতে খোদ আমেরিকানরাও বিরক্ত। তারা নেমেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।মাজেদা উদ্দিন ডোর টু ডোর নক করে বেড়াচ্ছেন কমিউনিটির মানুষকে।

৮ নভেম্বর সবাই যেন ব্যালট পেপারের মাধ্যমে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। মাজেদা উদ্দিন বিগত ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে বহু উন্নয়নমুলক কর্মকাণ্ড ও সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন। তিনি সঠিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের কমিউনিটির। জামাইকা মুসলিম সেন্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি। চালু করেছেন এডাল্ট ডে কেয়ার সেন্টার। বাংলাদেশে যেটার নাম ‘বৃদ্ধাশ্রম’,  এছাড়া তিনি “SAFEST” এর ফাউন্ডার এবং প্রেসিডেন্ট । SAFEST হচ্ছে South Asian fund for Education Scholarship & Training. উক্ত সংগঠনটি অত্যন্ত সাফল্য ও গৌরবের সাথে এগিয়ে চলেছে। মাজেদা আকতার উদ্দিনের মত সুদক্ষ ব্যক্তি এই গৌরবময় অধ্যায় রচনা করেছেন। বাঙালী  হিসেবে আমরাও সেই গৌরবের অংশীদার।

পছন্দের আরো পোস্ট