জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা শুরু মঙ্গলবার

এ বছর অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হচ্ছে কাল মঙ্গলবার। সপ্তমবারের মতো এ পরীক্ষায় ২৪ লাখ ১২ হাজার ৭৭৫ পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। এর মধ্যে আটটি বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৩০৩ জন এবং মাদরাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭২ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে।

গেল বছরের তুলনায় এবার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৮৬ হাজার ৮৪২ জন। গেল বছর পরীক্ষার্থী ছিল ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৩ জন। এবার দুইটি পরীক্ষায় ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা বেশি ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৯ জন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এ সময় শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ মাহবুবুর রহমানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সারা দেশে জেএসসিতে ১৯ হাজার ৭০৬ এবং জেডিসিতে ৯ হাজার ৫৫টিসহ মোট ২৮ হাজার ৭৬১ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে। জেএসসিতে ২ হাজার ২টি এবং জেডিসিতে ৭৩২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ১২৯টি আর কেন্দ্র ১০৭টি। এছাড়া বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ৬৮১ পরীক্ষার্থী অংশ নেবে।

বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবার পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, এবার বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়। আমরা এ বিষয়ে সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি। আগে পরীক্ষার হলে ঢুকে গেলে আমরা ১৫ মিনিট আগে খাতা দিয়ে দেব। ভবিষ্যতে আমরা হয়তো এটি বাধ্যতামূলক করে দেব।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শেষ হবে ১৭ নভেম্বর, আর ফল প্রকাশ করা হবে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা চালু হয়। সপ্তমবারের মতো এ পরীক্ষা হচ্ছে।

পরীক্ষায় নকল ও প্রশ্ন ফাঁসের সমস্যাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ পরীক্ষায় কেন্দ্রের সংখ্যা বেশি। প্রশ্ন ছাপানো, বিলি করা এবং দিনের পর দিন পাহারা দিয়ে নিশ্চিত করা কঠিন কাজ। তবে এ বিষয় নিয়ে কিছু লোক ব্যবসা করে এবং বিভ্রান্তির চেষ্টা করে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য। এজন্য ৩ বছর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসে বিজি প্রেসে সবচেয়ে বড় অভিযোগ আসত, সেটা বন্ধ করতে পেরেছি। কোচিং থেকে প্রশ্ন ফাঁস করার প্রচেষ্টা হয়Ñ এটাও নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এবার প্রশ্ন ফাঁস রোধে গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর রয়েছে। কেউ কোনো বিশৃঙ্খলা করতে পারবে না। করলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটক করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবে বলে জানান তিনি।

এবার শিক্ষার মান নির্ধারণে অভিন্ন মূল্যায়ন পদ্ধতির ফলে সারা দেশে স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার মানে যে ভিন্নতা রয়েছে, তাতে স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন বা প্রমিতকরণ করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, অষ্টম শ্রেণীর উত্তীর্ণ সনদ পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বিধায় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এনরোলমেন্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্য অনেকাংশে সফল হয়েছে। ২০১০ সালে যেখানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৮০২, বর্তমানে তা ২৪ লাখে উন্নীত হয়েছে। পরীক্ষায় সব শিক্ষার্থীর বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শ্রবণপ্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর জন্য নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পলসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই, তাদের জন্য শ্রুতিলেখকের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক বা অভিভাবক বা সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ এবারও থাকছে।

জেএসসির সূচি :

১ নভেম্বর বাংলা প্রথম পত্র, ২ নভেম্বর বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ৩ নভেম্বর ইংরেজি প্রথম পত্র, ৬ নভেম্বর ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র, ৭ নভেম্বর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা হবে। এছাড়া ৮ নভেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ১০ নভেম্বর শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, ১৩ নভেম্বর গণিত, ১৪ নভেম্বর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, ১৫ নভেম্বর বিজ্ঞান, ১৬ নভেম্বর চারু ও কারুকলা, ১৭ নভেম্বর কৃষিশিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, আরবি, সংস্কৃত, পালির পরীক্ষা হবে।
জেডিসির সূচি :

১ নভেম্বর কুরআন মাজীদ ও তাজবিদ, ২ নভেম্বর আকাইদ ও ফিকহ, ৩ নভেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (শুধু অনিয়মিত), ৬ নভেম্বর ইংরেজি প্রথম পত্র, ৭ নভেম্বর ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র, ৮ নভেম্বর বাংলা প্রথম পত্র, ৯ নভেম্বর বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ১০ নভেম্বর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ের পরীক্ষা হবে। এছাড়া ১২ নভেম্বর গণিত, ১৩ নভেম্বর আরবি প্রথম পত্র, ১৪ নভেম্বর আরবি দ্বিতীয় পত্র, ১৫ নভেম্বর সামাজিক বিজ্ঞান (শুধু অনিয়মিত), বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ১৬ নভেম্বর বিজ্ঞান, ১৭ নভেম্বর কৃষিশিক্ষা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি (শুধু অনিয়মিত) এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের পরীক্ষা হবে।