উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

bou gateউন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৪ বছরে উপনীত হলো। ১৯৯২ সালের ৩৮নং আইন দ্বারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। দেশে উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাদান ২৪ বছর ধরে চলছে। ১৯৫৬সালে এদেশে অডিও ভিস্যুয়াল সেল প্রতিষ্ঠা দিয়ে দূরশিক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়। দেশে ১৯৬২ সালে অডিও ভিস্যুয়াল এডুকেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা হয়। এরই এরই ধারাবাহিকতা ১৯৭৮ সালে স্কুল ব্রডকাস্টিং প্রোগ্রাম (SBP) চালু হয়। ১৯৮৩ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশানাল মিডিয়া এন্ড টেকনোলোজী (NIMET) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এডুকেশন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম দূরশিক্ষণে চালু হয়। পরবর্তিতে (BIDE) উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথে এর সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়। শিক্ষার মহাসরণী থেকে ঝড়ে পড়া, কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা গ্রহণ, পেশাজীবী হিসেবে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা গ্রহণ, জীবন ব্যাপি শিক্ষা সাধনা, যোগাযোগ বঞ্চিতদের জন্য শিক্ষা, নারী শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি বাস্তবায়নে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই দেশে পরিচিতি লাভ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ০৬ টি স্কুলের অধীনে বর্তমানে ৪৩ টি আনুষ্ঠানিক ও ১৯টি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এর মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মাস্টার্স অব এডুকেশন (এমএড), মাস্টার্স অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ),কমনওয়েল্থ এক্সিকিউটিভ মাস্টাস অভ্ বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিমবা), কমনওয়েলথ এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স অভ্ পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিমপা) চার বছর মেয়াদী স্নাতক সম্মান পর্যায়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, ইতিহাস, ইসলামী শিক্ষা, দর্শন, আইন এবং বি.এস.সি (অনার্স) ইন কম্পিউটার সায়েন্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে।

এছাড়া চার বছর মেয়াদী বিবিএ, তিন বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অব আর্টস (বিএ) ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স (বিএসএস), ব্যাচেলর অব বিজনেস স্টাডিজ (বিবিএস) চালু রয়েছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ব্যাচেলর ব্যাচেলর অব এডুকেশন, ইংরেজি শিক্ষার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যাচেলর অব ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টিচিং (বেল্ট), কৃষি শিক্ষার শিক্ষক হতে আগ্রহিদের জন্য ব্যাচেলর অব এগ্রিকাল্চারাল এডুকেশন (বিএজিএড)

ডিপ্লোমা পর্যায়ে ব্যবসায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য পোস্ট গ্র্যাাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ম্যানেজমেন্ট (পিজিডিএম), যুব উন্নয়নে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ডিপ্লোমা ইন ইয়্যুথ ইন ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক (ডিওয়াইডিডব্লিউ), কম্পিউটার শিক্ষায় আগ্রহিদের জন্য ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড এপ্লিকেশন (ডিসিএসএ) প্রোগ্রাম চালু রয়েছে।

সার্টিফিকেট পেশাগত শিক্ষা গ্রহণের জন্য সার্টিফিকেট ইন লাইভস্টক এ্যান্ড পোল্ট্রি (সিএপি), সার্টিফিকেট ইন পিসিকালচার এ্যান্ড ফিস প্রসেসিং (সিপিএফপি) এবং ভাষা শিক্ষার জন্য সার্টিফিকেট ইন এ্যারাবিক ল্যাংগুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি (কাল্প), সার্টিফিকেট ইন ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি (সেল্প), প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষনের জন্য সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (সিএড) প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। পেশাগত শিক্ষায় বি. এসসি ইন-নার্সিং (বিএসএম) প্রোগ্রামে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এছাড়াও এসএসসি ও এইচএসসি প্রোগ্রামে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা গ্রহণ করছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং ৮০টি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন, পাঠসামগ্রী বিতরণসহ শিক্ষা বিষয়ক কর্মকান্ড সমন্বয় ও তদারক করা হয়ে থাকে। দেশ জুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলে ১৪৭৫ টি স্টাডি সেন্টার রয়েছে। স্টাডি সেন্টার গুলোতে মাসে দুইদিন টিউটোরিয়াল ক্লাস পরিচালনার জন্য ২৪ হাজার শিক্ষক সংযুক্ত রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৫ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে- “বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য হইবে যে কোন ধরণের যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বহুমূখী পন্থায় সর্বস্তরের শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সম্প্রসারণ, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষাকে গণমুখীকরণের মাধ্যমে সর্বসাধারণের নিকট শিক্ষার সুযোগ পৌঁছাইয়া দেওয়া এবং সাধারণভাবে জনগণের শিক্ষার মান উন্নীত করিয়া দক্ষ জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করা”।

Post MIddle

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় একটি ব্যাতিক্রমধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা নির্ভর এ শিক্ষা ব্যবস্থা। মিডিয়া, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও রেডিও ব্রডকাস্টিং, মোবাইলে ও অডিও প্লেয়ারে মাইক্রো এসডি কার্ড ,ই-লার্র্র্নিং, ভিডিও কনফারেনসিং, মাল্টি মিডিয়া, ই-বুক, ইউটিউব, বাউবি টিউব, টুইটার, ওয়েবটিভি, ওয়েব রেডিও , ডিভিডি ও ইন্টার একটিভ ভার্চুয়াল ক্লাসরুম (আই ভিসিআর), এফএম রেডিও,ওপেন এডুকেশন রিসোর্স, অনলাইন ই এলটি প্রোগ্রাম, মোবাইল এ্যাপস, এলএমএস, ভিডিও স্ট্রিমিং ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে ১৩৭ জন শিক্ষক, ৫০৬ জন কর্মকর্তা ও ৬২৫ জন কর্মচারী কর্মরত আছে। ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫,৭০,২০১ জন।

bouএ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংঙ্গে সর্ম্পকিত রয়েছে। এগুলির মধ্যে The Commonwealth of Learning (COL); SAARC Consortium on Open and Distance Learning (SACODiL); Asian Association of Open Universities (AAOU); International Council for Open and Distance Learning (ICODL); Association of Commonwealth Universities (ACU); Commonwealth Educational Media Center for Asia (CEMCA); Association of SAARC Universities (ASU); Global Alliance for Transnational Education (GATE); International Research Foundation for Open Learning (IRFOL); Commonwealth Open Schooling Association (COMOSA); International Council for Open and Distance Education (ICDE); Open University of Sri Lanka; Open University, UK; Open University of Malaysia; Yunan Open University, China; Indira Gandhi National Open University (IGNOU), India

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সৈনিকদের শিক্ষা সুবিধা দেবার লক্ষ্যে নিশ-১ ও নিশ-২ শিক্ষা গ্রোগ্রামের অধীনে এইচএসসি প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত এক্সেস টু ইনফরমেশন (a2i) প্রোগ্রামের আওতায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার পরিসর বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ওপেন এডুকেশন রিসোর্স (OER) প্রোগ্রামে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সংযুক্ত হয়েছে।

বিশ্বব্যাপি উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষা ব্যবস্থা খুবই জনপ্রিয় শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রযুক্তির সহায়তায় এ শিক্ষা ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বায়নের এ যুগে তাই সকলের কাছে শিক্ষাগ্রহণের জন্য প্রিয় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। উর্দ্ধতন সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ি, পেশাজীবীরা যেমন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তেমনি ঝড়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীরাও এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষা গ্রহণ করে কর্মক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা দেখাচ্ছে।

ব্যবস্থাপনা নির্ভর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম এ মাননান একজন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ। তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে খ্যাতনামা সমাজ বিজ্ঞানী প্রো-উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ আবু তাহের এর সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে।

মোঃ আবুল কাসেশ শিখদার: যুগ্ম-পরিচালক, তথ্য ও গণসংযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

পছন্দের আরো পোস্ট