দিল্লীর বিশ্বমিলে ঢাবি দলের জয়জয়কার

img_6562মূল শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকার পরও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে ঠিকই সাড়া ফেলছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিদ্যাপীঠের ছাত্রছাত্রীরা। আত্মপ্রচেষ্টা আর দৃঢ় আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে বিশ্বের নানা দেশে গিয়ে তোলে ধরছে তাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশকে।

Post MIddle

সম্প্রতি ভারতের রাজধানী দিল্লীর সনিপাতে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্বমিল’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসবে প্রতিনিধিত্ব করে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ১৫সদস্যের দল। তিনদিন ব্যাপী উৎসব আয়োজন করে ও. পি. জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি।

দিল্লীর সনিপাতে অবস্থিত শীর্ষস্থানীয় এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বেশ এগিয়ে। ২০০৯সালে যাত্রা করা এই বিশ্ববিদ্যালয় অল্প কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিদ্যাপীঠ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। প্রতি বছর এখানকার শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেন ‘বিশ্বমিল’ আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব।

১৪-১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এবারের উৎসবে ভারতের নানা প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ৫৮টি দল অংশ গ্রহণ করে। বাংলাদেশ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অংশ নেয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট)।

উৎসবে নাচ, গান, স্কাইম, মঞ্চ নাটক, একক আভিনয়, শর্টফিল্ম, ফটোগ্রাফি; সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দল।

‘সর্ব রোগের মহাচিকিৎসক’ শিরোনামের মূকাভিনয় প্রযোজনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মূকাভিনয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়। এই প্রযোজনাটি রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন তরুণ মাইম শিল্পী মীর লোকমান। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরিয়ার শাওন, খায়রুল বাসার রেজভী, ফরিদ উদ্দীন, কামরুন্নাহার মৌসুমী, মো. রায়হান বাসার ভুইয়া, সানোয়ারুল হক, সাইফুল্লাহ সাদেক ও মীর লোকমান। আবহ সংগীতে ছিলেন এসএম জুম্মান সাদিক, কারিগরী সহযোগিতায় ছিলেন ইসরাত জাহান মুক্তি, সাইফুল্লাহ মাহফুজ অর্ক ও জেরিন মার্জান আশরাফি। ক্যামেরায় ছিলেন আলী আহসান ও আলোক প্রক্ষেপণে ছিলেন অতসী আমিন।

অন্যান্য ইভেন্টগুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্য সাইফুল্লাহ মাহফুজ অর্ক পরিচালিত ‘ইনভিজিবল লাইন’ শিরোনামের শর্টফিল্ম শ্রেষ্ঠ ফিল্মের পুরস্কার জিতেছে। একক অভিনয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন অতসী আমিন। একক অভিনয় এবং একক হিন্দি গানে দ্বিতীয় হয়েছেন এসএম জুম্মান সাদিক। ওযেস্টার্ন ডান্সে দ্বিতীয় হয়েছেন মীর লোকমান। এছাড়াও লজিস্টিক সাপোর্টের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সফলভাবে প্রদর্শিত হয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের জনপ্রিয় মাইমোড্রামা ‘লাইট ভার্সেস ডার্কনেস’র পঞ্চম প্রদর্শনী।

নিজ দলের এমন সাফল্য সম্পর্কে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তরুণ মূকাভিনেতা মীর লোকমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রত্যাশার নাম। আমাদের দিল্লী আসার খবর দেশের পত্রপত্রিকার মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ অবগত হয়েছেন। ফলে আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিলো এবং চাপ ছিলো। অবশেষে আমরা সব চাপ পেছনে ফেলে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কিছু করতে পেরেছি, তাই আমরা আনন্দিত’।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এই উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের সাংস্কৃতিক দলটির মডারেটর হিসেবে ছিলেন বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান এবং মাইম অ্যাকশনের মডারেটর সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাদার তপন ডি রোজারিও। দলের এমন সাফল্যে বেশ উৎফুল্ল ফাদার তপন ডি রোজারিও।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সাফল্য আশাতীত। প্রতিযোগিতার নানা শর্ত ও প্রস্তুতির অনেক কিছুই তাৎক্ষণিক মেনে নিতে হয়েছে। চ্যালেঞ্জিং ছিলো। ‘লাইট ভার্সেস ডার্কনেস’ এর জন্য লজিস্টিক সাপোর্টের স্বল্পতার জন্য তাৎক্ষণিক কারিগরী পরিবর্তন করা ছিলো একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। অন্যথায় আমরা বঞ্চিত হতাম আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ থেকে। স্কাইম তথা মাইম ইভেন্টে আমরা অন্য একটি বিষয় ‘সর্বরোগের মহাচিকিৎসক’ প্রদর্শনীতে অংশ নিই এবং প্রথম হই। একইভাবে শর্টফিল্মে প্রথম এবং মনোলগ(একক অভিনয়) যথাক্রমে প্রথম স্থান ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আমাদের ছেলেরা।

ফাদার রোজারিও আরও বলেন, আমাদের এই দলটির অধিকাংশ সদস্যই আন্তর্জাতিক উৎসবে নবীন। এরপরও নিজেদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের সংস্কৃতির জন্য সাফল্য বয়ে এনেছে, যা সবচেয়ে আনন্দের।

পছন্দের আরো পোস্ট