বেরোবির গৌরবময় আট বছর পূর্তি

BEROBIগৌরবের আট বছর পূর্ণ করে আজ (১২ অক্টোবর) নবম বছরে পা দিলো রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা গবেষণার ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয় যে ইতোমধ্যেই ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেছে, তা নয়। নানা ক্ষেত্রে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে, প্রতিকূলতারও অন্ত নেই। অর্জন আর সীমাবদ্ধতা নিয়েই এগিয়ে চলছে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম এই বিদ্যাপীঠ।

এ বছর ১২ অক্টোবর পবিত্র মহরমের ছুটি উপলক্ষে আগামী ১৯ অক্টোবর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। দেশের উত্তরাঞ্চলের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে উচ্চশিক্ষার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।

২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল ৩০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে নগরীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরে মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ হয় ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর’। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর ক্যাডেট কলেজ ও রংপুর কারমাইকেল কলেজের নিকটবর্তী ৭৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাস।

৬টি বিভাগ নিয়ে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ২১টি যুগোপযুগী নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। বর্তমানে ২১টি বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার। সেমিস্টার পদ্ধতিতে চার বছর মেয়াদি অনার্স এবং এক বছর মেয়াদি মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান করছে প্রতিষ্ঠানটি। এমফিল ও পিএইচডিসহ উচ্চতর গবেষণার জন্য এখানে রয়েছে একটি ইনস্টিটিউট। অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক মিলে দেড় শতাধিক শিক্ষক, ছয় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণের পাশাপাশি ক্যারিয়ার গঠনমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলোচনা, সভা-সেমিনার-কর্মশালা। শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন বিতর্ক, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপি।

Post MIddle

এদিকে বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে সমাজের অবহেলিতদের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে অন্যান্য বিশেষ কোটার পাশাপাশি রাখা হয়েছে বিলুপ্ত ছিটমহল অধিবাসী কোটা। এছাড়া গেল বছর ভর্তি পরীক্ষা থেকে রাখা হয়েছে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ ও ‘হরিজন সম্প্রদায়’ বিশেষ কোটা। যার ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

তবে পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণিসংকট, অপর্যাপ্ত আবাসিক ও পরিবহন ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বই স্বল্পতা, চিকিৎসা কেন্দ্রের নাজুক অবস্থায়, ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাফেটেরিয়ার কাজ সম্পন্ন হলেও তা কেবল ব্যবহার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষকদের সভা-আলোচনার কাজেই। নেই অডিটোরিয়াম, জিমনেশিয়াম। চার বছর আগে শুরু হওয়া স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যের কাজ আজও অসম্পূর্ণ।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী জানান, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষক সংকটসহ শিক্ষার যাবতীয় উপকরণ সংকট নিরসনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের অধীনে ছাত্রীদের জন্য ১০তলা বিশিষ্ট এক হাজার আসনের শেখ হাসিনা নামের হলটির নির্মাণকাজ শুরু হবে।

একই সঙ্গে ১০তলা বিশিষ্ট ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবনের নির্মাণ ও স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যের কাজও শুরু হচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপের কম্পোনেন্টগুলো নির্মাণের জন্য দ্বিতীয় প্রকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে। পরিবহন সংকট নিরসনে আগামী ১৯ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের এবং কর্মচারীদের জন্য দুইটি বাস উদ্বোধন করা হবে বলেও জানান তিনি।#

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট