বর্তমান সম্পর্কগুলো কতটা নিরাপদ !! নুর ইসলাম সংগ্রাম

এইতো কয়েকদিন আগে ক্যাম্পাসে ঘুরছিলাম দুপুরের দিকে। হঠাৎ দেখি কয়েকজন বন্ধুর জটলা। সবাই একখানে জড়ো হয়ে কি যেন নিবীরভাবে গবেষণা করছে। মনে হলো কোন বাদরামী নিশ্চয়ই। তাদের থেকে আমি যে আলাদা তা কিন্তু একে বারেই নয়। তাই কৌতুহলী হয়ে তাদের পাশে গিয়ে চুপটি করে দাড়ালাম।

দেখছি সবার চোখ ফোনের দিকে। তারা সবাই সবচেয়ে ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে কি যেন দেখছে! আমি নিজেও কৌতুহল বশত চোখ বুলাতে দেড়ি করলাম না। একটা অশ্লীল ভিডিও! তাও না কি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কোন এক প্রেমিকযুগলের। প্রেমিকযুগল বললাম এই জন্য যে, তারা যে ভিডিওটি করেছে তাতে দু’জনেরই সমর্থন ছিল। এতে কোন সন্দেহ নাই।

কিন্তু আমার প্রশ্ন আগে এই খানে নয় যে, তারা কেন ভিডিও করলো এমন একটা নিবীর মুহূর্তকে? কেন তারা ক্যামেরায় ধারণ করারপর সংরক্ষণ করে রাখলো? ধরেই নিলাম তারা তাদের এই মধুর মুহূর্তকে সংরক্ষণ করার জন্য ধারণ করছে। কিন্তু তা কি নিরাপদ? বিশেষ করে মেয়েটির জন্য? এর উত্তর কি তাদেও মতো কেউ দিতে পারবেন!

আমার আগে এই খানেই প্রশ্ন জাগে যে, তারা কি দু’জনে আদৌ জানত যে তারা এটা ইউটিউবে ছেড়ে দিবে? যেটা কিনা ভাইরাল আকারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়াবে। আর সেখান হতে লিংকে ঢুকে তরুণ সমাজ তা দেখবে। এতে শুধু তরুণ সমাজের চারিত্রিক অবক্ষয় নয়, তাদেরও সামাজিক হেয়প্রতিপন্য হতে হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই।

কয়েকদিনপরে শুনতে পারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কোন এক শিক্ষার্থী ( শোনা কথা, ঐ মেয়েটি কিনা তা স্পষ্ট করে বলতে পারবো না) আত্মহত্যা করেছে। হয়ত সবাই জানাজানি হওয়ার পর, লোক সমাজে চক্ষু লজ্জার ভয়ে এই পথ বেছে নিয়েছেন। কিন্তু তিনি না হয়, মরে গিয়ে আপাতত বেচে গেলেন। তার পরিবার? তার পরিবার সমাজে কিভাবে চলছেন একটু চিন্তা করলে চিন্তার রেখায় সবারই একই উত্তর আসবে হয়তবা। আর তাহলো, সে মরে গিয়েও সবাইকে জলন্ত অংগারে ধুকে ধুকে তার পরিবারকে মরার ব্যববস্থা করে গেছে।

উইকিপিডিয়া ও গুগলে এ বিষয়ে সার্চে জানা গেলো-২০০৪ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন শিক্ষার্থী, ২০১০ সালে ২১ দিনের ব্যববধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন, ২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন, ২৪ জানুয়ারী ২০০৯ এ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, ১৯ মার্চ ২০১৬ তে আহসানুল্লাহ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, ১১ মার্চ ২০১৬ এ সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, টেক্সটাইল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে প্রেমঘটিত কারণে। তাদের মধ্যে অনেকেই ভিডি শেয়ারিং হওয়ায়, অনেকেই ব্রেকআপ হওয়ায় এ চরম জঘন্যপথ বেছে নিতে দিধা করেনি। তারা কি শুধু নিজেরা এর ভয়বহতার শিকার! না। তারা মওে গিয়ে একপ্রকার বেঁচেই গেছেন। কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্যদের অগ্নিকুন্ডে রেখে গেছেন। সমাজের বাকা চোখ ঐসব পরিবারের দিকে যে যায় না তা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন বলে মনে হয় না।

২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে ২১-৩০ বছর বয়সী তরুণরাই এই পথ বেশি বেছে নিচ্ছেন। আর তার পরিসংখ্যানটা ভয়াবহ! প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন।

আর এই বয়সী ছেলে-মেয়েরাই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়াশুনা করেন। তারা সবাই নিজের ভালো-মন্দ বুঝেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেই ছলনাময়ী প্রেমের ফাঁদে পড়ে উপভোগ করছে একটা সময়। আর এই সামান্য সময়ের উপভোগ, কেড়ে নিচ্ছে ভবিষ্যৎ নেতা কিংবা নেত্রীর জীবন।

আপনি কি একবারেও চিন্তা করেছেন যে, আপনার পরিবার কতটা আশা নিয়ে, নিজে না খেয়ে হলেও তোমাকে কিংবা আমাকে পাঠিয়েছে পড়াশুনা করার জন্য? শুধু কি নিজের পরিবার! প্রতিবেশি কিংবা দেশ আপনার উপর কতটা অধিকার রাখে তা কি একটিবারেও চিন্তা করেছেন?

রিলেশনশীপে জড়িয়ে তাকে নিরাপদ না করে কেন তা মৃত্যুর ফাঁদ করে গড়ে নিচ্ছেন! অন্তত এই একান্ত মুহূর্তগুলো সম্পর্কে প্রাইভেসি রক্ষা করুন। আর যদি মনে হয় এটাতে নিরাপদ না, তবে কেন এটা করেন? যদি এই সম্পর্কগুলোকে নিরাপদ করা না যায় তবে সে সম্পর্ক থেকে দূরে সরে থাকুন। আর প্রয়োজন হলে বাবা-মা’কে বলে বিয়েও করতে পারেন।

আর বাবা-মা যদি তার সন্তানের এই কথা না শুনে, তবে যদি তার সন্তান আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিয়ে জলন্ত ক’পে তাদের থাকার জায়গা করে দেন, তাতে পরিবারেরও দায় এড়ানের কোন সুযোগ নাই।

আসলে পরিবারের পাশা-পাশি নিজেরা এ ব্যাপারগুলো সম্পর্কে সচেতন না হলে এই মৃত্যুপথের মিছিল ক্রমশ বেড়েই চলবে! কাজেই নিজেদের বুঝার ক্ষমতা হয়েছে। স্বজ্ঞানে কেন নিজেকে অনলক’পে নিক্ষেপ করছেন? আপনি বলুন, বর্তমানের এ ধরনের রিলেশনশীপ আপনাকে কতটা নিরাপদ রাখতে পারবে? যদি মনে হয় পারবে না। তবে কেন নিজের নিরাপত্তা-নিরাপদ আশ্রয় খুজছেন না ?

যদিও ১০ সেপ্টেম্বরকে, ২০০৩ সাল হতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করে আসছেন। কিন্তু কোন ক্রমেই কি আমরা এটা হ্রাস করতে পেরেছি? আমাদের নিরাপদ সম্পর্কগুলোর দিকে ঝুকে যাওয়া ভালো। অনরিাপদ সম্পর্ককে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা দরকার। আপনি পারবেন তো নিরাপদ থাকতে??

নুর ইসলাম সংগ্রাম। শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

E-mail: sangrambru95@gmail.com

পছন্দের আরো পোস্ট