প্রাথমিক শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তি। মো: আনিছুর রহমান

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। শিল্প বিপ্লবের পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন উন্নতির ফলে গোটা বিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজ-এ পরিনত হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি দূরকে এনেছে চোখের সামনে, পরকে করেছে আপন, অসাধ্যকে করেছে সাধন। তথ্য প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকান্ডের মূল হাতিয়ার। যে জাতি তথ্য প্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ তাদের সার্বিক অবস্থাও ততবেশি উন্নত।

একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমন্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে হলে তথ্য প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। কারণ একবিংশ শতাব্দির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ দুই-ই আবর্তিত হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে ঘিরে। তথ্য প্রযুক্তিই আগামীদিনে জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেব। এবং শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে। বিশ্বায়নের সমস্ত আঙ্গিনায় তথ্য প্রযুক্তির বিশাল অবদানের ফলে সম্ভাবনাময় যে নয়া অর্থনীতির আদল গড়ে উঠেছে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা কতটা প্রস্তুত সে ব্যাপারে পর্যালোচনা করা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়।

তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থাপনা এবং বিতরণের জন্য ব্যবহৃত প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির সমন্বয়কে তথ্য প্রযুক্তি বলা হয়ে থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের সাথে এটি অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে জড়িত। প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষণ শিখন ব্যবস্থায় ডিজিটাল মুদ্রণ ব্যবস্থার বই প্রস্তুত করণে যেসব কালার কমিউনিকেশন করা হয়েছে তা অত্যন্ত চমৎকার। কোমলমতি শিশুদের মনে খুব তাড়াতাড়ি এর রেখাপাত ঘটবে। প্রতিটি বিষয়ের শিখনফল নিশ্চিত করতে হলে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সেই ধারা অব্যাহত থাকলেও প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কম্পিউটারের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করা সহ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের কৌশল জানতে হবে। শিক্ষকগণের এই ধরণের ক্রমাগত ধাপেধাপে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও তাদের আন্তরিকতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। পারস্পারিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বেগবান করতে হবে। শিক্ষকদের শিক্ষা বিষয়ক ওয়েব সাইট যেমন শিক্ষক বাতায়ন (www.teachers.gov.bd) ই-বুক (www.ebook.gov.bd)-এ গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে শ্রেণি কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।

Post MIddle

Multimedia-Class-Roomকোন দেশকে জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমন্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জল করতে হলে তথ্য প্রযুক্তি বিকাশের কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গিকার ছিল তথ্য প্রযুক্তির সম্ভাব্য সর্বোচ্চ বিকাশের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন। এই উন্নয়ন সাধন করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর করে তুলতে হবে। আর সেটা শুরু করতে হবে প্রাথমিক স্তর থেকে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করা হয়েছে। সেখানে কম্পিউটার ল্যাব তৈরি হয়েছে। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তর শেষ করে তার শিক্ষা জীবন শেষ করে থাকে। সেক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের ধারনা প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করতে হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ব্রত নিয়ে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকার তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে নানা পদক্ষেপের মধ্যে ২০১৩ সালে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০২১ সালে প্রাথমিক স্তরে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামুলক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন মর্মে আমরা জানি। এজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন ও আইসিটি ইনকিউবেটর গড়ে তোলা উচিৎ। প্রাথমিক স্তরের জন্য তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সতন্ত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষার কারিকুলামকে যুগোপযোগী ও সর্বাধুনিক করণের জন্য একটি স্থায়ী তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা বিভাগ গঠন করতে হবে। মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি অন্যতম একটি সহায়ক ভুমিকা রাখবে বলে আমার ধারণা। #

মো: আনিছুর রহমান
উপজেলা শিক্ষা অফিসার
মোরেলগঞ্জ,বাগেরহাট।

পছন্দের আরো পোস্ট