জাবি: একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়

ju জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’ অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে দুই বছর এটি একটি প্রকল্প হিসেবে পরিচালিত হয়। ১৯৭০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখে অধ্যাপক ড, মফিজউদ্দিন আহমদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। অর্থনীতি, ভূ-গোল, গণিত ও পরিসংখ্যান এই চারটি বিভাগে ১৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। ১৯৭০ এর ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন চ্যান্সেলর রিয়ার এডমিরাল এসএম আহসান কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও প্রকৃত পক্ষে এর যাত্রা শুরু হয় এক বছর পরে ১৯৭১ এর ১২ জানুয়ারি। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ’ অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নামকরণ করা হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’।

ju administration bhabonক্যাম্পাসের অবস্থান ও প্রকৃতিক সৌন্দর্যের কথা বলতে গেলে বলতে হবে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রাজধানী ঢাকা থেকে ৩২ কি.মি. দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে প্রায় ৭২০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তত। এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অন্যন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। ঘনসবুজ গাছপালায় আবৃত বন্ধুর ও সমতল ভূমিতে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল ইটের অবকাঠামোগুলো সহজেই দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

এই ক্যাম্পাসে রয়েছে অনেক ছোট-বড় ১৭ টি লেক যেখানে প্রতিবছর শীতের সময় অসংখ্য অতিথি পাখির সমাগম ঘটে। লাল, সাদা ফুটন্ত পদ্মফুলের বিচিত্র সৌন্দর্য আর অতিথি পাখির

কলরব এই ক্যাম্পাসকে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি পর্যটন এলাকায় পরিণত করেছে।

বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিযুক্ত আছেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

অনুষদ ও বিভাগসমূহ বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫টি অনুষদের অধীনে ৩০টি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এসব বিভাগে ছাত্র-ছাত্রদের ভর্তি করা হয়। অনুষদভিত্তিক বিভাগগুলো হচ্ছে কলা ও মানবিক অনুষদ: ৮টি বিভাগ

বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শন, প্রত্নতত্ত্ব, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব, জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। জীববিদ্যা অনুষদ: ৬টি বিভাগ

উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, ফার্মেসী, প্রাণ রসায়ন ও জৈবানু বিজ্ঞান, অনুজীববিদ্যা জীব প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদ: ৭টি বিভাগ পদার্থবিদ্যা, পরিসংখ্যান, রসায়ন, গণিত, ভূতত্ত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ: ৬টি বিভাগ অর্থনীতি, নৃ-তত্ত্ব, সরকার ও রাজনীতি, ভূ-গোল ও পরিবেশবিদ্যা, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা,লোক-প্রশাসন। বাণিজ্য অনুষদ: ৪টি বিভাগ একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং,মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ ইনস্টিটিউটসমূহ

বিশেষায়িত গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি, ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার।

Post MIddle

ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা:
অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা- ১০৫০০ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা- ৬৭২ জন। কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা- ১৪০৬ জন।

ভর্তি প্রক্রিয়া: সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বর সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় ও ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
ইউনিটসমূহ:
ক ইউনিট: গণিত ও পদার্থবিদ্যা অনুষদের বিষয়সমূহ।
খ ইউনিট: সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিষয়সমূহ।
গ ইউনিট: কলা অনুষদের বিষয়সমূহ।
ঘ ইউনিট: জীববিদ্যা অনুষদের বিষয়সমূহ।
ঙ ইউনিট: বাণিজ্য অনুষদের বিষয়সমূহ
চ ইউনিট: ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন
ছ ইউনিট: আইআইটি
জ ইউনিট: আইন অনুষদের বিষয়সমূহ

ভর্তির যোগ্যতা: এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্য শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসিতে সর্বমোট ন্যূনতম জিপিএ ৭.৫ (৪র্থ বিষয়সহ) পেতে হবে। তবে পৃথকভাবে অবশ্যই ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০ পেতে হবে।
ইংরেজি মাধ্যমের পরীক্ষার্থীদের অত্যন্ত ৫টি বিষয় নিয়ে ‘ও’ লেভেল উত্তীর্ণ হতে হবে এবং অত্যন্ত ৩টি বিষয়ে ‘বি’ গ্রেড থাকতে হবে। ‘এ’ লেভেলে অত্যন্ত ২টি বিষয়ে ‘সি’ গ্রেড পেতে হবে।

ভর্তি ফরম প্রাপ্তি ও জমাদান
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম ‘অগ্রণী ব্যাংকের নিম্নোক্ত শাখাসমূহে কিনতে পাওয়া যায়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শাখা ফার্মগেট শাখা শাহবাগ, জাতীয় জাদুঘর শাখা ফার্মগেট শাখা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকেও আবেদন ফরম ডাউনলোড করা যায়। পরবর্তীতে পত্রিকায় ও ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশের পর প্রথমে মেধা তালিকা থেকে এবং পরবর্তীতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে মৌখিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায়।

ju hallআবাসিক হল: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭টি ছাত্র হল এবং ৫টি ছাত্রী হল রয়েছে।
ছাত্র হলগুলো হচ্ছে আল বেরুনী হল, মীর মোশাররফ হোসেন হল, আ. ফ. ম কামালউদ্দিন হল
শহীদ সালাম-বরকত হল, মওলানা ভাসানী হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, রফিক-জব্বার হল, ছাত্রী হলগুলো হচ্ছে: নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল, ফজিলাতুনন্নেসা হল, জাহানারা ইমাম হল, প্রাতীলতা হল, বেগম খালেদা জিয়া হল।
আবাসিক হলগুলোতে ১ শয্যা, ২ শয্যা ও ৪ শয্যাবিশিষ্ট কক্ষ রয়েছে। কক্ষগুলো প্রশস্ত ও প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন বিছানা, পড়ার টেবিল, চেয়ার ইত্যাদিতে সজ্জিত। প্রতিটি হলেই পৃথক পৃথক ডাইনিং রুম, মসজিদ, ক্যান্টিন, কমন রুম ও গেস্টরুম রয়েছে প্রতিটি হলের দায়িত্বে একজন প্রাত্যক্ষ ও একাধিক সুপার এবং ওয়ার্ডেন রয়েছেন।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চমৎকার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে একাডেমিক ভবন ও ছাত্র হলগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এই লাইব্রেরীতে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য প্রায় ৯৫০০০ বই রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মানসম্পন্ন কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। যেখানে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার পাওয়া যায়। এখানে একসঙ্গে প্রায় ৩০০ জন খাওয়া-দাওয়া করতে পারে। এখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে কুপনের মাধ্যমে খাবার সংগ্রহ করতে হয়।

ju muktomachমুক্তমঞ্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনন্য স্থাপনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার পাশে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে গ্রিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মুক্ত মঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন- নাটক, বিতর্কপ্রতিযোগিতা, কনসার্ট ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। এই মুক্তমঞ্চের দর্শক গ্যালারিতে একসঙ্গে প্রায় ৭০০০ দর্শক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে।

জহির রায়হান মিলনায়তন:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের নামে নামকরণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসমৃদ্ধ এই মিলনায়তনে প্রায় ১০০০ দর্শকের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদির আয়োজন করা হয়ে থাকে।

কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ:
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি খেলার মাঠ রয়েছে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়াও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল ও ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগ ইত্যাদি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

অন্যান্য স্থাপনা:
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ছাড়াও একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ, একটি সুইমিংপুল, একটি ইনডোর স্টেডিয়াম কাম জিমনেসিয়াম এবং একটি মেডিকেল সেন্টারও রয়েছে।#

পছন্দের আরো পোস্ট