যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ উদ্যোক্তারদের চিরস্মরণীয় মিলন মেলা
বিশ্বের ৪৩টি দেশের ২৬৩ জন তরুণ উদ্যোক্তা। ভিন্ন তাদের পেশা-জীবিকা, আচরণ, ভাষা, সংস্কৃতি, চিন্তাচেতনা। এদের সবারই আছে নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তি এবং সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আর নিজেদের স্বপ্নগুলোকে সফল করে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়। এই অমিত সম্ভাবনাময় তরুণদের নিয়ে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ব্যুরোর উদ্যোগে গত ৩১ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানি ওয়াশিংটন, ডি সিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলপ্রফেশনাল ফেলো কংগ্রেস স্প্রিং ২০১৬।
![Post MIddle](https://lekhapora24.net/wp-content/uploads/2022/03/920X80.gif)
এই কংগ্রেসের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের যুব উদ্যোক্তাদের ও একে অনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের জন্য কাজ করা। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ ব্যবসায়িক উদ্যোগ, ব্যবসায় প্রশাসন, সরকার, এনজিও ও শিক্ষা ক্ষেত্রকে পরিচিত করানো এবং দি-পাক্ষিয় বিভিন্ন উদ্যোগের সমন্বয় করাও কংগ্রেসের অন্যতম লক্ষ্য।
মুলত স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরুন উদ্যোক্তা ফেলোশিপ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম ২০১৬ আওতায় এসব উদীয়মান উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের ২৯টি অংগরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মাসব্যাপী প্লেসমেন্ট সমাপ্ত করে প্রফেশনাল ফেলো কংগ্রেসে যোগদান করেন। মাসব্যাপী এই আয়োজনে চীন, রাশিয়া, ব্রাজিলের মতো উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি এসেছিল উগান্ডা, মালদভা আর নিকারাগুয়া সহ আরও দেশের প্রতিনিধিরাও। এশিয়া ও প্যাসিফিকের ১২৮ জন, মধ্যপ্রাচ্য ওআফ্রিকার ৫৮, ইউরোপের ৫০ জন, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সাতাশ জন—সব মিলিয়ে যেন জাতিসংঘের এক ক্ষুদ্র সংস্করণে পরিণত হয়েছিল এইকংগ্রেস।
ফেলো কংগ্রেস অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শুধু জাতিগত বৈচিত্র্যই নয়, বয়স, পেশা আর অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্যও ছিল চোখে পড়ার মতো। তিন দিন ধরে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫ পর্যন্ত চলে এই কংগ্রেস আর বিকাল থেকে রাত অব্দি চলে ওয়াশিংটন ডি সিতে ঘোরা ফেরা। এবারের কংগ্রেসেরপ্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘ইম্পেক্টিং দি ফিউচারঃ ইট স্টার্টস উইথ আছ’ (Impacting the Future: It starts with us) । বিভিন্ন বিষয়ের আলচনা ও ওয়ার্কশপছাড়াও আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা—দুভাবেই প্রত্যেকে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শেয়ার করে অন্যদের সঙ্গে। আগের বছরের ফেলোদের মধ্য থেকে আলামুনাই আনগেইজমেন্ট ইনভেসন ফান্ড (Alumni Engagement Innovation Fund) প্রাপ্ত চার আলামুনি বক্তৃতা, আলোচনা ও তাদের অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রম তুলে ধরেন।
জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিনিময়ে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে তিন দিনের ফেলোশিপ প্রোগ্রামের প্রতিটি মুহূর্ত। দ্বিতীয় দিনের প্রধান অংশ ছিল ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন ও সেখানে রাতে ডিনার। কংগ্রেসের শেষদিন ‘গিভিং ভয়েস টু আওয়ার প্রফেশনাল ফেলোস এক্সপেরিএঞ্চ’ (Givining Voice to our Professional Fellows Experience) শিরোনামে এক বিশেষ ভিডিও প্রদশনি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এবারের অংশ গ্রহনকারীরা তাঁদের চমক জাগানো অভিজ্ঞতা, ভাবনা অন্তরঙ্গ মুহূর্ত গুলো তুলে ধরেন সবার সামনে। আনুষ্ঠানিক ব্যস্ততা গুলোর সমাপ্তি টেনেই হোয়াইট হাউজ ,ক্যাপিটাল , মনুমেন্ট, লিঙ্কন মেমোরিয়াল, বিভিন্ন যাদুঘর আর শপিংমল গুলো ঘুরে বেড়ানো। বিভিন্ন দেশের রেস্টুরেন্ট গুলোর অদ্ভুত সব খাবারের স্বাদ নেওয়া, আড্ডা, গল্প, গান আর নির্ভেজাল আনন্দের অসংখ্য মুহূর্ত—যা কখনো ভোলার নয়। এ যেন বিশ্ব তরুণ উদ্যোক্তারদের চিরস্মরণীয় মিলন মেলা।
বাংলাদেশ থেকে আমি সহ আরও ৩ জনের সুযোগ হয়েছিল এই মাসব্যাপী এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম সহ প্রফেশনাল ফেলো কংগ্রেস অংশগ্রহণ করার। আমরা চার বাংলাদেশী হলাম আমি, ফ্রিলেন্স সাংবাদিক ও র’দিয়া মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী, জেনল্যাবের উদ্যোক্তা রাতুল দেব, মণ্ডল এগ্রো’র পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান এবং ড্রিমকাস্ট মার্কেটিং’র বাবস্থাপক মহিউদ্দিন চৌধুরী। এছাড়াও আমাদের দলে ছিল ভারত ও মিয়ানমার থেকে তিন জনকরে তরুণ উদ্যোক্তা। আমাদের এই দশজনের দলটির হোস্ট ছিল ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালইয়ের গেলর্ড সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ কলেজ যেখানে আমারা ৩০এপ্রিল থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ছিলাম। উল্লেখ্য, গেলর্ড সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ কলেজ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা উন্নয়ন কেন্দ্র, ব্র্যাক মায়ানমার ও ভারতের উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এই ১০ তরুন উদ্যোক্তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ সপ্তাহ ব্যাপী ফেলোশিপ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আয়োজন করে। ( radiadhk@gmail.com)
আরএইচ