আগাছাপুর্ণ বেরোবি ক্যাম্পাসে শেয়াল-পোকা মাকড়ের আতঙ্ক
দীর্ঘদিন থেকে পরিস্কার না করায় এবং সঠিক পরিচর্যার অভাবে আগাছায় পরিপুর্ণ হয়ে উঠেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গোটা ক্যাম্পাস। জঙ্গলে আচ্ছন্ন ক্যাম্পাসে মাদকের বিস্তার, অসামাজিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি বেড়েছে শেয়াল, সাপসহ বিভিন্ন বিষাক্ত পোকা- মাকরের উপদ্রব । এর ফলে শেয়াল, সাপসহ বিষাক্ত পোকা- মাকরের ভয়ে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা সংকীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি অনুপোযোগি হয়ে পড়েচে খেলার মাঠগুলো । কারন হিসেবে প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করছে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন থেকে সঠিক পরিচর্জার অভাবে ও সম্প্রতি টানা বৃষ্টির পানি পেয়ে গোটা ক্যাম্পাস আগাছায় ছেয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আবাসিক শিক্ষকগণ, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের চলাচলের পথে, ক্যাফেটেরিয়া ও শিক্ষক ডরমেটরির ঠিক মাঝখানে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে বিশাল জঙ্গলের স্থুপের সৃষ্টি হয়েছে যেখান থেকে প্রায়ই বিষাক্ত পোকামাকড় বের হয়ে আসে।
জঙ্গলের প্রসার রাস্তায় নেমে আসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বগূর্ণ মোড়ে জন্ম নেয়া এই জঙ্গলের স্তুপটি এখন ভীতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে । ফাইন্যান্স এ্যন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪র্থ সেমিস্টারের এক শিক্ষার্থী জানান, গত শুক্রবার রাতে হলে ফেরার সময় একটি লম্বা সাপ আমার সামনে পড়ে। সৌভাগ্যক্রমে আমি বেচে গেছি।
এই স্তুপটি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল ও মসজিদের মাঝে, মেয়েদের হলের সম্মুখভাগ, ডরমিটরি ভবনের আশপাশ সহ গোটা ক্যাম্পাসে এরকম অনেক জঙ্গল দেখা যায়। জঙ্গলের আকার এত বড় যে কেউ তার ভিতরে বসে পড়লে তাকে আর দেখা যায়না ফলে এসব জঙ্গলই মাদক সেবন ও অসামাজিক কার্যকলাপের নিরাপদ স্থলে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, ইদানিং বাহির থেকে ছেলে-মেয়েরা জঙ্গলে ঢুকে প্রেমের নামে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব অসামাজিক কর্মকান্ড রোধে সোচ্চার হলেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না। চলতি মাসেই প্রায় ২০ জন ছেলে মেয়েকে অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে আটক করে পুলিশ। পরে তাদেরকে তাদের অবিভাবকের উপস্থিতিতে ছেড়ে দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাহাত ও রাসেল বলেন, জঙ্গলের কারণেই মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে পোকা মাকড়ের উৎপাতও বেড়েছে। রাতে শেয়ালের ডাকে পড়াশুনা ও ঘুমে বিঘ্ণ ঘটে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। জানতে চাইলে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক নিরব খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জঙ্গল ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট করছে। এছাড়া এসব জঙ্গলের কারণে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা কমে আসছে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের চারটি খেলার মাঠের মধ্যে দুটি মাঠ ভালো আছে। আর দুটি মাঠে জঙ্গলের পরিমান এত বেশি হয়েছে যে তাতে খেলা তো অসম্ভব, স্বাভাবিক চলা ফেরায় করা যায়না। এতে মাঠ কমে আসায় খেলার মাঠ দখল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিন বাক-বিতন্ডা লেগে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য প্রফেসর ড. একে এম নূর-উন-নবী এগুলোকে জঙ্গল হিসেবে নয় দেখছেন প্রকৃতি হিসেবে। তিনি বলেন, এগুলোর কারণে ক্যাম্পাস সবুজ দেখাচ্ছে। এই ঘাসগুলো না থাকলে ক্যাম্পাস মরুভুমি মনে হয়। ক্যাম্পাসে প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে এগুলো একটু বড় হলেই ওইসব ঘাস আর থাকবেনা। তবে যদি পোকামাকরের বাস হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ##