কানাডায় উচ্চ শিক্ষার সুযোগ

স্কলারশীপ-কানাডাপ্রতি বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রচুর শিক্ষার্থীকে কানাডায় পড়াশোনার সুযোগ দেয়া হয়। যারা কানাডায় পড়াশোনার জন্য আসতে চান, তারা কীভাবে ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারেন সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য দেয়া হলো।

কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুইটি স্টেপ রয়েছে :
১. আন্ডার গ্রাজুয়েট (ব্যাচেলর ডিগ্রি)।
২. পোস্ট গ্রাজুয়েট (মাস্টার্স এবং পিএইচডি)।

প্রতি বছর তিনটি সেমিস্টার রয়েছে :
১. ফল (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) : এটাকেই একাডেমিক ইয়ারের (শিক্ষাবর্ষের) শুরু ধরা হয়। সাধারণত সব ছাত্রছাত্রীকে এ সেমিস্টারে ভর্তি করা হয়। সাধারণত আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেল জুনের দিকে এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট লেভেল মার্চ-এপ্রিলের দিকে।
২. উইন্টার (জানুয়ারি-এপ্রিল) : আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলে অনেকেই উইন্টারে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করে। ভর্তির শেষ সময় আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
৩. সামার (মে-আগস্ট) : এ সময় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর ছুটি থাকে। বিশেষ করে যারা আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলে পড়ে। পোস্ট গ্রাজুয়েটদের গবেষণা অথবা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।

শিক্ষাগত মান : কানাডার শিক্ষার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এদের মান প্রায় সমান। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি, কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত। যে বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রোগ্রাম অফার করে, তার ভালো অবকাঠামো আছে।

থাকা-খাওয়ার খরচ : বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে থাকতে হলে ডরমেটরিতে থাকতে হবে। খরচ হবে প্রতি ৪ মাসে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার ডলার পর্যন্ত।
যারা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন তাদের খরচ একজনের জন্য এরকম হয় :
১. বাসা ভাড়া : ২৫০ থেকে ৮০০ ডলার (শেয়ার করে থাকলে কম খরচ)।
২. যোগাযোগ : বাস পাস ৬০ থেকে ১৫০ ডলার। অনেক জায়গায় আবার শিক্ষার্থীদের বাস পাস ফ্রি (যেমন আলবার্টা)।
৩. খাওয়া : বাসায় রান্না করলে ১০০ থেকে ২০০ ডলার, বাইরে খেলে ৩০০ থেকে ৬০০ ডলার।
ফোন এবং ইন্টারনেট : শেয়ার করলে খরচ অনেক কমে যায়। কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ ডলার ধরে রাখুন।
শহর থেকে শহরে খরচ আলাদা হতে পারে। আপনার থাকার ওপরও নির্ভর করবে।
পড়ালেখার খরচ : প্রতি একাডেমিক ইয়ারে বিশ্ববিদ্যালয় ফি বাবদ খরচ প্রায় ১৫ হাজার থেকে ২৮ হাজার কানাডিয়ান ডলার পর্যন্ত। ইমিগ্রেন্ট বা সিটিজেনদের জন্য এ খরচ ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার আরও অনেক কম বেতন (৮ থেকে ১৪ হাজার ডলার)।
সাধারণত এসব বিশ্ববিদ্যালয় একটু ছোট শহরে অবস্থিত হয়।

স্কলারশিপে পড়াশোনা : ভালো রেজাল্ট করলে ছোটখাটো কিছু স্কলারশিপ পাওয়া যায়। একাধিক স্কলারশিপ পেলে চাপ অনেক কমে যায়- যা পাওয়া অনেক কঠিন।

পোস্টগ্রাজুয়েট : এ লেভেলে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সাধারণত এ লেভেলে আসা সব ছাত্রছাত্রী স্কলারশিপ এবং বিভিন্ন ফান্ডিংয়ে আসেন।

তবে ভর্তি অনেক প্রতিযোগিতামূলক। শর্ত একটাই, এভারেজ সাধারণত ‘এ’ রাখতে হবে। এর চেয়ে কমে গেলে বেতন আবার পুরোটা দিতে হবে আপনাকে। তাই এ কথাটি মাথায় রেখে মন দিয়ে পড়লে আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।

Post MIddle

ভর্তি হবেন যেভাবে : বাংলাদেশ থেকে আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলে ডাইরেক্ট অ্যাপ্লাই করা একটু কষ্টসাধ্য। তবে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড থাকলে কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়। নিচে কিছু লিংক দেয়া আছে, যেগুলো আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েব সাইটে গেলেই দেখবেন শুরুর পেজে ‘প্রোস্পেক্টিভ স্টুডেন্ট’ অথবা ‘ফিউচার স্টুডেন্ট’ নামে একটি লিংক আছে। মোটামুটি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইটে এটি একই। এখানে ক্লিক করলে জানতে চাইবে আপনি কোন লেভেলে আগ্রহী। এখন নিশ্চয়ই জেনে গেছেন কোন লেভেল। সেখানে প্রয়োজনীয় সব তথ্য, যোগ্যতা, আবেদনপত্র পাবেন।

দুইভাবে আবেদন করা যায়
১. কাগজের মাধ্যমে : এই মাধ্যমে আবেদন করার ফরম অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট আউট করতে পারেন। ব্যাংক ড্রাফট করতে একটু ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। হয়তো এটাই হবে আপনার প্রথম বাধা।

২. অনলাইনে : অনলাইনে অ্যাপ্লাই করার সময় মনে রাখবেন- আবেদনপত্র শেষ হওয়ার পর প্রয়োজনীয় ফি না দিলে এটা কোনো কাজে আসবে না এবং আবেদন করার আগে শিওর হয়ে নেবেন সেটা ঠিক সাইট কি না। অনেক ভুয়া সাইটে প্রতারিত হতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অবশ্যই খবর নেবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় চয়েজের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন :
১. বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম আপনি আগে কারও কাছ থেকে শুনেছেন কিনা।
২. আপনি যে বিষয়ে আগ্রহী সে বিষয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা সাইট আছে। সেখানে যান। তাদের ফ্যাকাল্টিদের প্রোফাইল দেখুন। কী কী রিসার্চ করে তা দেখুন।
৩. আপনার আগ্রহের প্রোগ্রামে কী কী ফেসিলিটি আছে তা দেখুন। ওই বিষয়ে তাদের কোনো সাম্প্রতিক সাফল্য দাবি করার মতো কিছু আছে কিনা দেখুন।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়টি স্কলারশিপ প্রদানে কতটা উদার, খবর নিন। পোস্ট গ্রাজুয়েট লেভেলে হলে ডিপার্টমেন্টের ওপরের দিকে কারও (চেয়ার, ডিন, অ্যাসোসিয়েট ডিন অথবা আপনার গবেষণার বিষয়ের সঙ্গে মেলে এমন কোনো অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন অ্যাপ্লাই করার আগে।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়টি যে শহরে অবস্থিত তা সম্পর্কে জানুন। সেখানে কী কী ইন্ডাস্ট্রি আছে, সেসব জায়গায় আপনার বিষয়ের চাহিদা কেমন। দিন শেষে লোকালদের প্রাধান্য সবাই দেয়।
৬. থাকার সুবিধা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে খবর নিন। এসব খবর সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অফিসে পাওয়া যায়। (আইএসও নামে সাধারণত পরিচিত) পোস্ট গ্রাজুয়েট লেভেলে কোথাও কোথাও আপনাকে বলবে আসার পর একটা পরীক্ষা দিতে, কোনো মডিউলে পাস না করলে কিছু আন্ডার গ্রাজুয়েট কোর্স নিতে বলবে।

নিচে কিছু প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস দেয়া হলো:
১. http:/www.ouac.on.ca/– এটি অন্টারিওর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির অনলাইন সাইট। এটার মাধ্যমে অ্যাপ্লাই করতে পারেন অথবা সরাসরি অ্যাপ্লাই করতে পারেন। এটা নির্ভরযোগ্য। খরচ একটু বেশি; কিন্তু টাকা কোথায় ঢাললেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না এবং অনলাইনে আপনার ভর্তির স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন।

২. যঃঃঢ়://পরপ.মপ.পধ/বহমষরংয/ংঃঁফু/রহফবী.ধংঢ় এটি সরকারি সাইট, এখানে স্টাডি পারমিট এবং পড়াশোনাবিষয়ক সব ধরনের ফরম এবং সরকারি সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন। (তথ্যসূত্র-আলোকিত বাংলাদেশ।)#

rh

পছন্দের আরো পোস্ট