শহরের অতিথি

ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে শহরের গলিতে অচেনা মুখ!
দালানের গা বেয়ে নেমে আসা চারুলতার ডগায় আজ প্রেমের অপেক্ষা,
বিটুমিনের কার্পেটে আলতো পদক্ষেপ যেন ডাকছে ইশারায়,
হে অচেনা যুবক, ভর দুপুরে স্যাঁতসেঁতে এ পঁচা গলিতে তোমার কি গো?
যাও বলছি, সটকে পড় আগে ভাগে।

 

অভুক্ত কাঁকের ক্ষুধাতুর বেরসিক চিৎকারে আমি পথ ভুলে যায়,
শহুরে জওয়ানদের আড় চোখের হুমকি নাকি তাতে বিস্ময়ের ছবি বোঝা গেল না।
তবুও আমি হাটছি অশেষ! স্থীর, স্থুল ভঙ্গিতে হেলিয়ে দুলিয়ে চলছি সম্মুখে।
যদি দালানের কুচ কালো থাইগ্লাস সরিয়ে দেখা মেলে কোন ভুতুড়ে রাণীর,
তবে আকর্ষণের বেড়াজালে সপে দেবো না ইন্দ্রিয় সব।

 

হাটবো, যতদুর যাওয়া যায়, আমি হেটেই চলে যাবো!
পরিচিত এ শহর আজ বড্ড অচেনা,
সেই জোড়াপুকুর, কাঠগোলায় মৃত গাছের ল্যাংটা স্তুপ,
গ্যারেজের হামার পেটার বিকট আওয়াজ এখন দেয়ালের স্তরে বন্দী।
পঁচা জলে ডুবে যাওয়া পৌরসভার কংক্রিটের রাস্তা গুলো এখন ঝকঝকে,
ক্যাচকুঁচ শব্দ আর ঝক্কাম ঝক্কাম ঝাকুনির রিসকা গুলো এই শহরে আজ অতিত হবার শেষ প্রান্তে।

 

Post MIddle

কারণে অকারণে যন্ত্র রিসকার উটকো উৎপাত আর প্যাঁ পুঁ আমাকে জানিয়ে দেয়,
হে যুবক, পথভ্রষ্ট নীড়হারা বাউন্ডুলে ছোকরা,
এখনো সময় আছে শহরে ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার!
বিটুমিন রোড, কালো কাঁক, উটকো অটোর হুমকি বৃথা লাগে ঢের।
ওরা জানে না হয়তো, আমি শহরের অতিথি,
সখের অতিথি নয়, স্বপ্নের অতিথি।
শোন হে নবরুপা শহর, তোমার বুকে আমি থাকতে আসিনি।

 

বেঁচে থাকার রসদ ভরে নিয়ে যেতে এসেছি তোমার কাছ থেকে।
খালি হাতে আবদার করবো না, কিনে নেব তোমার শহরের সব, কিনে নেবো ভালবাসার দরে।
আমার নিবাস? হা হা হা,, ঐ যে দেখো বুড়ো শিমুল গাছের ডগা!
কি? দেখা যায়? ঐ শিমুল গাছটি পেরিয়েই আমার ঘর!
অল্প একটু জায়গায় আমার মৃত্তিকাবৃত ঠাঁসা মাটির ঘর।

 

যে ঘরের নির্যাসে চলে আমার হাত,
যে ঘরের আহ্বানে আমি কেঁদে উঠি,
যে ঘরের মায়া আমাকে পাঠিয়ে দেয় তোর কাছে হে শহর!
ওই ঘরখানা না থাকলে তোর দিকে কেউ ফিরেও তাকাতো না,
আর যাইহোক আমি তো না!!

 

তবে তুই ভাল থাকিস শহর, বুকে জড়িয়ে সহস্র পায়ের ধুলিকণা,
ছেঁড়া প্যাকেটের স্তুপ আর হাজারো পোড়ামাটির থেমে যাওয়া সুপ্ত ক্ষোভ নিয়ে!!!
আমি ফের করি আবদার…………
ফিরে যাবো ওই আমার মৃত্তিকাবৃত ঠাঁসা মাটির ঘর!!!!!!

পছন্দের আরো পোস্ট