বিসিএসে ফরেন ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন উজ্জ্বলের

Ujjal Hosen sayem picসাফল্যের চূঁড়ার সিঁড়ি বেয়ে চলার যে দীর্ঘ পথ, সম্ভাবনার সে পথেই হাঁটা শুরু। স্বপ্ন আর বাস্তবতা এ দুয়েই মনের মধ্যে উদ্ভাসিত হয়েছে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য। ছোটবেলা থেকে যে স্বপ্ন নিয়ে পথচলা সেগুলোই বীজ বুনে দিয়েছে ভবিষ্যৎ এ লক্ষ্যের। তবে মনের গহীনের সে স্বপ্ন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা। যে অপেক্ষার পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে সুউচ্চ চূঁড়ার একটা পর্যায়ে এসে পৌছেছে যেখান থেকে আর একটু দূর গেলেই হয়তো দেখা মিলবে কাঙ্খিত গন্তব্যস্থল।

Post MIddle

জীবনের পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলোর মতোই গল্পটি ধারাবাহিকভাবে শুরু হয়েছে। যেখানে দুচোখ ভরা স্বপ্ন ছিলো, এখন একটা স্থির লক্ষ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মানুষ হবো, একদিন প্রতিষ্ঠিত হবো। আর বাস্তবায়িত করবো গল্পের একটা অংশে ঝাপসা পড়ে থাকা প্রেরণা দাতার স্বপ্ন।

এমনই স্বপ্ন দেখেন উজ্জ্বল হোসেন সায়েম। শৈশবের দুরন্তপনায় বেড়ে উঠেছেন মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়ার চাচিতারা গ্রামে। মধ্যবিত্ত পরিবারের কোলে ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি প্রবল অনুরাগ। শৈশবে তাই কাঁদা মাটির খেলা শেষে আবার বইয়ের প্রতি মনোযোগেরও কমতি ছিলো না। ছোটবেলাতেই পড়েছেন নজরুল। সেখান থেকে ভালো লাগার জায়গাতেও বিদ্রোহী কবি।

পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষায় থানা পর্যায়ে দ্বিতীয় ও অষ্টম শ্রেণীতে চতুর্থ হয়ে মেধার পরিচয় তুলে ধরেন। মাধ্যমিকে পড়েছেন এম বোরহান উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক দরগ্রাম সরকারি ভিকু মেমোরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে উর্ত্তীর্ণ হওয়ার পর মনের মধ্যে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার প্রবল আগ্রহ চেপে বসে। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা সায়েম স্বপ্ন দেখেন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। সে পথেই হাঁটা শুরু।

ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি যে মনোযোগ ছিলো, প্রবল বাসনা ছিলো সে জায়গা থেকেই পথচলায় কখনো হোঁচট খেতে হয়নি। প্রবল আগ্রহ আর প্রেরণা দাতাদের অনুপ্রেরণাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সাহস যুগিয়েছিলো। যে সাহস তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে একটুও কুণ্ঠাবোধ করেনি। সেই সাথে একটা মনের মতো সাবজেক্ট। সবকিছু মিলিয়ে এক সম্ভাবনার পথেই সফল যাত্রা শুরু। তিনি এখন পড়াশুনা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে।

দিনটি ছিলো ১১ আগস্ট। ক্যাম্পাসের রীবন্দ্র ভবনের সামনে বসেই বন্ধুদের সাথে চা আড্ডা। হঠাৎ বন্ধুদের মধ্যে কেউ এসে বললো ‘এবার ছাড়ছি না, খাওয়াতে হবে, ফার্স্ট হয়েছিস (প্রথম বর্ষের রেজাল্ট)।’ এই কয়েকটা শব্দ তখনকার জন্য অবিশ্বাস্য হলেও মনের মধ্যে চেতনা জাগে এমনটিই চেয়েছিলেন সায়েম। এক অনাবিল প্রশান্তির নিশ্বাস নিয়ে ভিন্ন এক চিন্তার জগতে প্রবেশ হয়। দুচোখের কোণে হয়তো দু’ফোটা আনন্দ অশ্রু ছিলো, যদিও কেউ তা অবলোকন করতে পারেনি; তবে তা এক অসমাপ্ত গল্পের পটভূমিতে পড়ে থাকা নাম না জানা পরিচালক বা প্রেরণা দাতার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে। যিনি প্রতিটা মূহুর্তে ভালোবাসা দিয়ে, সবকিছু দিয়ে তাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন।

উজ্জ্বল জানান, স্বপ্নের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছি আর তার সাথে মিলেছে পছন্দসই সাবজেক্ট। ক্লাস, বন্ধু, আড্ডা সবমিলিয়ে এক দূর্দান্ত সময় পার করছি। যদিও স্বপ্নের গন্তব্যের পথের কেবল এক অনভিজ্ঞ পথিক, তবে ছুটতে চাই সেই গন্তব্যের পানেই যেখানে আমার সকল স্বপ্ন, সাধ। লক্ষ্য হিসেবে বিসিএসে ফরেন ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নই দেখি। জানি না কতটুকু সফলকাম হবো।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া উজ্জ্বল হোসেন সায়েমের ভালো লাগে গান শুনতে। তবে ভালো লাগার জায়গাতে কবি, কবিতা ও লেখালেখিতে মনোযোগের কমতি নেই। ভালো লাগে নজরুল, রবীন্দ্রনাথ। তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে ‘সখের বশে’, ‘সম্পাদ্য’ সাহিত্য পত্রিকায়।

ভালো লাগে সাংবাদিকতা, বিতর্ক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজগুলোতে। সেই জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কের সংগঠন ‘রেটোরিক’ এর যুক্ত হওয়া। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ হিসেবে চাচিতারা জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে কাজ করছেন banglatalknews24.com এ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য।

সাফল্যের চূড়ার যে দীর্ঘ পথের কথা বলছিলাম তার নবীন পথিক সায়েম। তবে প্রবল উদ্দমী এ পথিকের পথচলায় তৈরি হচ্ছে শিরোনামহীন এক গল্প। সময়ের পরিক্রমায় এ গল্পের শিরোনাম দিতে চান তিনি। আর তুলে ধরতে চান তার গল্পের পেছনে পড়ে থাকা ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ জায়গার মানুষের স্বপ্নটি। এ স্বপ্ন তার মায়ের।

পছন্দের আরো পোস্ট