আরও দুই দিন ধর্মঘট করবে জবি শিক্ষার্থীরা

পুরাতন কারাগারের জমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালকে প্রদানের দাবীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিণারে সংহতি সমাবেশ শেষে আরও দুই দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।  শুক্রবার বিকাল ৩ টায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্দোলনকে যৌক্তিক দাবী করে সংহতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ। তাঁরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌক্তিক দাবী সরকারকে মেনে নেওয়ার আহবান জানান।

সমাবেশে বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার প্রাণ কেন্দ্র পুরাণ ঢাকা ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেনা। কেন্দ্রীয় কারাগারের জমিসহ অন্যান্য ফাঁকা সরকারী জমিতেই বিশ্ববিদ্যালয়টির হল নির্মাণের দাবী জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, চট্রগ্রাম ও শাহজালালসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হল আন্দোলন ও আজকের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন।

মানবাধিকার নেতৃ সুলতানা কামাল, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জুবাইর টিপু সহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যক্তি সমাবেশ চলাকালে সমাবেশের পরিচালনাকারীদের কাছে মোবাইল ফোনে এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন। সংহতি সমাবেশে উপস্থিত হয়ে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্টা নারী অধিকার বিষয়ক নেতত্বৃ কে.এম রাশেদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রুবায়্যাত ফেরদৌস, গনজাগরন মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, যমুনা টিভির বিশেষ রিপোর্টার সুশান্ত সিনহা, পিপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফখরুল মুন্সী, সামাজিক সংগঠন ‘অরুনোদয়’ এর আহবায়ক সালমান খান সহ বিশিষ্টজনরা এই আন্দোলনে সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন।

যমুনা টিভির বিশেষ রিপোর্টার সুশান্ত সিনহা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আপনাদের এই আন্দোলন সারা বাংলাদেশের জন্য নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করলো। ২৫ দিন ধরে আপনারা যে আন্দোলন করছেন তা সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। সারা বাংলাদেশকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন আপনারা। আপনাদের ২১ হাজার ছাত্র-ছাত্রী যদি কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা করেও মাসে খরচ করেন, তাহলে প্রতি বছর ৭৫ কোটি টাকা শুধু থাকা ও যাতায়াত বাবদ খরচ করছেন। হল থাকলে এই এত টাকা আপনাদের দিতেই হতোনা।’

গনজাগরন মঞ্চ মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘আপনাদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত হল না পাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যান। আর খুব কষ্ট হচ্ছে আর লজ্জাও লাগছে এই ভেবে যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক আজকের এই সমাবেশে আসেননি।’

Post MIddle

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রুবায়্যাত ফেরদৌস বলেন, ‘তোমরা ছাত্ররা আজ যে আন্দোলন করছো, তাতে আমার পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। তোমাদের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক। আজ বিভিন্ন মহল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢাবার বাহিরে স্থানান্তর করার অপচেষ্টা করছে। আশা করি এটা তোমরা করতে দিবেনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই হলগুলো আশেপাশে নির্মাণ করা হয়েছে। তাহলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কেন ঢাকার বাহিরে হবে!’

কে.এম রাশেদা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্যই। অথচ এখন ছেলেমেয়েদের থাকার জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলছি, আপনি এদেশের শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, একজন সেবকও। এই শিক্ষার্থীদের হলের ব্যবস্থাসহ সকল সমস্যার সমাধানে সংযুক্ত হোন।’

সংহতি সমাবেশে বক্তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বেতন স্কেল নিয়ে ১ মাস ব্যাপী যে আন্দোলন আপনারা করেছিলেন সেখানে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নিয়েছিল। অথচ আজ যদি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশে না দাঁড়ান তবে সেটা হবে খুবই অশোভন।
সমাবেশে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে অংশ নেয়।

পরবর্তী কর্মসূচীঃ
সংহতি সমাবেশ শেষে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষনা করেছে সাধারন শিক্ষর্থীরা। শিক্ষার্থীদের পক্ষে রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী রোববার ও সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট কর্মসূচী পালন করা হবে। সোমবার একনেকের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে যদি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ অক্ষুন্ন না রাখা হয়, তাহলে ঐদিন পরবর্র্তী কর্মসূচী দেওয়া হবে। সুতরাং আগামী রোববার ও সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল এবাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’

নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারের জমিতে হল নির্মাণ ও নতুন আবাসনের দাবিতে ১লা আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন জবির শিক্ষার্থীরা। ধর্মঘট, বিক্ষোভসহ ক্যাম্পাস ও বাইরে শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। আন্দোলনকারীরা বলছেন,ন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে হল নির্মাণের সুস্পষ্ট ঘোষণা না পাওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না। ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।##

পছন্দের আরো পোস্ট