সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি !!!

আমার কলেজ জীবনটা কেটেছে যশোরে। মারকুটটা শহর। কথায় কথায় মারামারি। পাড়ায় পাড়ায় বড় বড় মাস্তানদের ছড়াছড়ি। সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে-ফিরতে যখন প্রায় হাপিয়ে উঠেছি তখনই কলেজে মৎস্য কন্যার মত এক মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করলাম। ভেবেছিলাম প্রেম বড়ো কঠিন -কিন্তু সেই প্রেম যেনো বাড়ির পোষা কবুতরের মত খুব সহজে আমার পিছনে লেগে গেলো। আমি কোনোরকম দৌড়ে পালালাম। বন্ধূরা সবাই অবাক। কেউ কেউ বাংলা সিনেমার ডায়লগের মতো বলতে থাকলো – হ্যারে ..তুই পারলি ? তুই এতো পাষান ! তুই ‘

সেই ঘটনার বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে কিনা -আমি প্রেমের কবিতা লেখা শুরু করলাম ! আহারে কবিতা ! আমি আর মাজেদ। বিকেল হলেই যশোর সাহিত্য পরিষদের পাশের চায়ের দোকানে ঘন্টার পর ঘন্টা কবিতার লাইন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট। কখনো স্বরবৃত্ত, কখনও অক্ষরবৃত্ত। কখনও মাত্রাবৃত্ত। কখনও ঝুম বৃষ্টির ভিতরে নিজেই নিজের কবিতা পড়ি। ‘চোখের ভেতর ঘুম নেমেছে /চোখের তাতে কি ?/চোখের ভেতর ভালোবাসা সামলে রেখেছি ‘! তারপর আমাদের প্রায় অকথিত গুরু কবি আজিজুল হক অথবা দারা মাহমুদ (দারা ভাই ) কে সেই কবিতা শোনাতাম। দারা ভাই মিষ্টি একটা হাসি হেসে বলতেন , ভালো হয়েছে !

Post MIddle

বাহ্। . তারপর সেই এক অদ্ভুত জীবন-যাপনে ব্যস্ত আমরা কয়েকজন। পকেটের পয়সা বাঁচিয়ে নিয়মিত পদ্যপত্র বের করা। কখনো নিজের সম্পাদনায় চোখ আর কাটাকুটি। কখনও সবাই মিলে লেখা পোস্ট করি ঢাকার কাগজে। যশোরে আমাদের সাথে তখন মাশুক শাহী , মনিরুজামান লিটন , পাবলো শাহী , লিখন মালাকার, ওয়ারিসুল আবিদ, সজল , মোস্তাক আহমেদ , মুজিবর রহমান , টিটো জামান, সাকিব সিজার , উত্তম চক্রবর্তী, জন প্রভুদান, সাদি তাইফ , ইফফাত আরেফিন তন্বি , সিমি এরকম আরো অনেকে ।

তাছাড়া সাহিত্য পরিষদে আবদুর রব , ফখরে আলম, নান্নু মাহবুব, কেবল ভাই সহ আরো অজস্র কবি আর লেখক বন্ধু এবং বড়ো ভাই।
বড়ই জমজমাট এক উৎসবের মত আমাদের সেই কবি আর কবিতার পরিবার ছিলো। আহারে সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি !!!

লেখকঃ নির্বাহী পরিচালক,বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা

পছন্দের আরো পোস্ট