ঢাবিতে ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক আলোচনা

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন (ডিইউএএ)-এর উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডিইউএএ-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। প্রধান আলোচক হিসেবে এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এবং আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিইউএএ’র সাবেক সভাপতি মনজুর এলাহী ও প্রাক্তন সভাপতি রকীবউদ্দিন আহমেদ।

সূচনা বক্তব্য রাখেন মোল্লা আবু কায়সার। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সভাপতি এ কে আজাদ। অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিইউএএ-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার।

প্রধান আলোচক অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে জাতির পিতা হয়ে আবির্ভুত হয়েছিলেন। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্র নেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়ত্বশাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে ৭৩’র অধ্যাদেশ দিয়েছিলেন। আমরা শিক্ষক সমাজ বঙ্গবন্ধুর মূলভাব এবং মূল চেতনার সাথে আদর্শকে বজায় রেখে তা রক্ষা করতে পারিনি। আজ বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের ঋণ স্বীকার করতে হবে এবং বুঝতে হবে বঙ্গবন্ধু কেন অপ্রতিরোধ্য ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ যেমন বাংলাকে একভাবে পরিচিত করে তুলেছিলেন বিশ্ব দরবারে, বঙ্গবন্ধু তেমনি বাংলার ভাবমূর্তিকে গড়ে দিয়েছেন বিশ্ব সমাজে।

Post MIddle

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্মরণীয় শপথে ১৫ই আগস্ট উল্লেখ করে জাতির জনক ও তাঁর পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, বঙ্গবন্ধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত থেকে সমাধান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা। তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এই সম্পৃক্ততা ইতিহাসেরই অংশ। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাড়ে সাত কোটি মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। তাঁর এই ভালোবাসাই তাঁকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে। মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। তাঁর এই বিশ্বাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের কথা বলতেন। আমাদের আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু তাঁর শাসন পরিচালনার সময়ে আমাদের জাতির শিক্ষার ভীত রচনা করে দিয়ে গেছেন। তিনি দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষার মানসম্মত ব্যবস্থাপনা এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষার প্রতি দিয়েছেন স্বশাসনের মর্যাদা। করে গেছেন স্বাধীন দেশের যুগোপযোগী শিক্ষা নীতির প্রস্তাবনা। অর্ন্তদৃষ্টি ও দূরদৃষ্টি দিয়ে দেশকে দিয়ে গেছেন এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। বাংলাদেশের চাহিদা মূল্যায়ন করে তিনি যে পরিকল্পনা করেছিলেন সে পথেই চলেছে পরবর্তী বাংলাদেশ। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে উপাচার্য বলেন, আজকে চলছে নানা ষড়যন্ত্র, নানা চক্রান্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সন্তানেরা মানুষ হত্যা করছে। সেই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র থেকে উত্তরণে ও প্রতিরোধের জন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তাঁর দর্শনকে অনুসরণ করে সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে তারুণ্যের শক্তি দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্র আন্দোলন আর জাতীয় রাজনীতির নানা স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গরীব কর্মচারীদের পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। এই বহিষ্কারের পথ ধরে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন জাতীয় নেতা হিসেবে। জাতিয়তাবাদী আন্দোলনে তিনি আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন ‘জাগো জাগো, বাঙালি জাগো’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’। বঙ্গবন্ধু শিক্ষকদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন করতেন। সেই শিক্ষক বড়ই হউন আর ছোটই হউন। বঙ্গবন্ধুর স্নেহে আমার জীবন ধন্য হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল্যবোধ, আশা-আকাঙ্খাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। কিন্তু আদর্শ মুজিব, বাংলার মানুষের নয়নের মণি মুজিব বাঙালির হৃদয়ের মনিকোঠায় বিরাজ করছেন। যতদিন পৃথিবীর আলো-বাতাস, চন্দ্র-সূর্য থাকবে, ততদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় বিরাজ করবেন। ##

পছন্দের আরো পোস্ট