খুবিতে যথাযথ মর্যাদায় শোক দিবস পালিত

সোমবার (১৫ আগস্ট) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযথ মর্যাদায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম প্রয়াণ বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় নতুন প্রশাসন ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন এবং ট্রেজারার খান আতিয়ার রহমান কালো পতাকা উত্তোলন করেন। এর পর কালোব্যাজ ধারণ করা হয়। পরে উপাচার্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।

Post MIddle

সকাল ৮-৪৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে পবিত্র কোরআনখানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সকাল ৯টায় উপাচার্যের নেতৃত্বে এক শোকর‌্যালি বের হয়। শোকর‌্যালিটি নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে ক্যাম্পাসের হাদী চত্ত্বর ও কটকা হয়ে একনম্বর একাডেমিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। ৯-১৫ মিনিটে এক নম্বর একাডেমিক ভবনে বঙ্গবন্ধুর ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন উপাচার্য। সকাল সাড়ে ১০ একই ভবনের ইউআরপি ডিসিপ্লিনের লেকচার থিয়েটারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ওপর এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় এবং বঙ্গবন্ধুসহ ১৫আগস্টে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ আগস্টের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরে একটানা দেড়ঘন্টারও বেশি সময়ধরে দেয়া তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর পিএস হিসেবে নানা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন মানুষকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেয়ার অপরিসীম দূরদৃষ্টি ছিলো বঙ্গবন্ধুর। সমাজ পরিবর্তন করতে হলে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া যে সম্ভব নয় তা তিনি যথার্থই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ছিলো রাজনীতি হবে জনগণের সেবার জন্য। সকল ধর্মের প্রতি সকল ধর্মের মানুষের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। মানবতাবোধ, মর্যাদাবোধ দেশপ্রেম ও দূরদৃষ্টি তাঁকে ক্যারেসমেটিক নেতৃত্বে পরিণত করেছিলো।

তাঁর মানবতাবোধের উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন জাপানে সফরে যাওয়ার সময় তিনি জাপান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারীর অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে বিশেষ বিমানের ফ্লাইটে নিজের ভিআইপি বেডটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর দল ও মতের সাথে মিল নেই এমন রাজনীতিকদের স্ত্রী পুত্রের দুঃসময়ে তিনি আর্থিক সাহায্য করেছেন যেন তারা কষ্ট না পায়। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিশক্তি ছিলো প্রখর। জঙ্গীবাদ তৎপরতা সম্পর্কে তিনি বলেন ধর্মের যারা সঠিক অনুসরণ না করে নিজেদের অপবিত্র চেতনা ও স্বার্থ ধর্মের মধ্যে ঢুকাতে চাইছেন তারাই জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ত।

খন্দকার মোশতাক সম্পর্কে তিনি বলেন তাঁর নামই নিতে চাইনা। অনেক আগে থেকেই তো তার বিশ্বাসঘাতকতা শুরু এটা প্রতীয়মান। প্রণীতব্য সংবিধানের খসড়া দেখার কথা বলে দুইদিন বাড়ি রেখে তা তিনি পাকিস্তানের পত্রিকায় ফাঁস করেন। তিনি বলেন আমাদের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে এবং শিক্ষাব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তিগত সংশ্লিষ্টতা বাড়ছে তা অর্থনীতিকে টেকসই করতে সহায়ক হবে। তিনি বলেন আমরা যদি ৪.৫০ % বিনিয়োগ করতে পারি তবে প্রবৃদ্ধি আরও ১% বাড়বে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি আরও ২% অর্জনে সক্ষম হতে পারি।

তিনি বলেন সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের আর্থিক অভাব থাকলেও তিনি বিশ্বব্যাংক বা আই এম এফ’র কাছে স্বার্থ বিক্রি করেননি। বরং তাঁর দূরদর্শীতা ও যুক্তি দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশের পক্ষে এনেছেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর ক্যারিসমেটিক নেতৃত্ব আজও সারা দুনিয়ায় আলোচিত বিষয়। নানা তথ্য গবেষণায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অজানা তথ্য ও সত্য বের হয়ে আসছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে যেসব অপপ্রচার চালানো হয় তা মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে। সকল অপপ্রচারের ধোঁয়াশা কেটে যাচ্ছে, মানুষ প্রকৃত বঙ্গবন্ধুকে অনুধাবন করতে পারছে। নতুন প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও আলোচনা, গবেষণা প্রয়োজন। যতোই তা হবে বঙ্গবন্ধু সর্স্পকে অজানা তথ্য, দিক বের হয়ে আসবে যা আমাদের জাতীয় জীবনের সংকট মোকাবেলায় কাজে আসবে।

সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন বঙ্গবন্ধুর জীবনকেন্দ্রিক আলোচনা, গবেষণা, প্রকাশনা আরও হওয়া দরকার এ কারণে যাতে তাঁকে হত্যার পর যে সমস্ত অপপ্রচার চালানো হয়, সেসব যে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য প্রচার করা হয় তা মানুষ যেন বুঝতে পারে। তিনি বলেন রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতে পারে। ভারতে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু আছে, বিভিন্ন দল ও মত আছে। কিন্তু মহাত্মাগান্ধী সবার ঘরে আছে। সবাইর কাছে শ্রদ্ধারপাত্র হয়ে আছেন।

বঙ্গবন্ধুর মানবিকতা, দূরদর্শীতা, দেশপ্রেম, রাজনৈতিক আদর্শের সাথে কারও তুলনা হতে পারে না। তিনি প্রতিদিন আমাদের কাছে সমহিমায় আর্বিভূত হন। ইতিহাসের পাতায় বঙ্গবন্ধু অমর ও অক্ষয়। এই সত্যকে মাথায় নিয়ে দেশ ও জাতিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সকল মত-পথের, সমালোচনার উর্ধ্বে রেখে, তাঁর প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে এবং আমাদের মননে বঙ্গবন্ধুকে সার্বজনীনরূপে স্থাপিত করতে পারলেই আমাদের জাতীয় জীবনের অপরাপর সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব।

ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. অনির্বাণ মোস্তফার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ট্রেজারার খান আতিয়ার রহমান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আহমেদ আহসানুজ্জামান, সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. সারওয়ার জাহান, প্রভাষক এম ফয়সাল আহমেদ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ও আরিফা সুলাতানা বক্তব্য রাখেন।

সভায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ, ভাষণ ও বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্বৃত করা হয়। পরে বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জাতির জনক ও তার পরিবাবেরর সদস্য যারা ১৫ আগস্টে শাহাদত বরণ করেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস।##

পছন্দের আরো পোস্ট