নানা কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবস পালন

যথাযোগ্য মর্যাদায় সোমবার (১৫ আগস্ট)  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করে। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল- সকল ভবন ও হলে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।

এ উপলক্ষে সকালে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের উপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক ড. নীলিমা আকতার, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আলী আকবর, বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন শেখ, মুক্তিযোদ্ধা প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ড ইউনিটের সদস্য মো: গোলাম রব্বানী সরকার, কর্মচারী সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের, প্রাক্তন সভাপতি মোঃ রেজাউল ইসলাম, কারিগরি কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক, চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো: এনামউজ্জামান অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমনের কথা ছিল। সেদিন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা প্রদান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা হয় নি। এর আগেই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে তাঁকে শাহাদাৎ বরণ করতে হয়।

Post MIddle

উপাচার্য বঙ্গবন্ধু চরিত্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, তিনি অত্যন্ত সৎ, উদার, দেশপ্রেমিক, সাহসী ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সাধারণ মানুষের ভাগোন্নয়নের সংগ্রামে তিনি মৃত্যু, জেল, জুলুমকে কখনও ভয় পান নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারীদের পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ তিনি ছাত্রত্ব হারান। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ মুচলেকা ও ১৫ টাকা জরিমানার বিনিময়ে তাঁকে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল। তখনও তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি এবং ছাত্রত্ব ফিরিয়ে নেননি।

বঙ্গবন্ধু পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান বাহিনীর বন্দুকের মুখেও তিনি বাসায় অবস্থান করছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো আত্মগোপন করেননি বা পালিয়ে যাননি। আজীবন তিনি আভিজাত্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটের সামনেও তিনি অবিচল ছিলেন। এই আভিজাত্য নিয়েই তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন।

উপাচার্য বলেন, ১৫ আগস্টকে শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য উপাচার্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর বসার জন্য নির্মিত চেয়ারটি আজ টিএসসি মিলনায়তনে উদ্বোধন করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এই চেয়ার উদ্বোধন করেন। এর আগে উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘মানচিত্রে রক্তের ফোয়ারা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং চারুকলা অনুষদ আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। এছাড়া, বাদ যোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ প্রত্যেক হল ও আবাসিক এলাকার মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। ##

পছন্দের আরো পোস্ট