বর্ষায় স্নিগ্ধ প্রাণের ইবি ক্যাম্পাস

“বাইরে থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অনেক রকম কথা শুনেছি। বাস্তবে একদমই ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। গ্রামীণ শান্ত শীতল পরিবেশে এত সুন্দর ও পরিপাটি একটি ক্যাম্পাস সত্যিই নয়নাভিরাম। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও পাক-পাখালির মুখোর কলকাকলী আমাকে মুগ্ধ করেছে। ঝালচত্বরে প্রায়ই একাএকা বসে থাকি, জায়গাটা বেশ কোলাহলপূর্ণ। আড্ডাবাঁজদের আদর্শ পছন্দের হতে পারে এই চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রাস্তায় হেটে হেটে বৃষ্টিতে ভেঁজার অভিজ্ঞতা আমার এখানেই প্রথম। ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না সে অনুভূতি। কুমিল্লা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা ঢাকা তিতুমীর কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র শাওন এভাবেই তার অনুভূতির কথা জানান।

 

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফাতেমা বলছিলেন-“পড়াশুনার জন্য প্রয়োজন প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ। প্রকৃতির সাথে বৃষ্টির একটি নিবীড় সম্পর্ক রয়েছে। বর্ষাকালে প্রকৃতি সাঁজে নতুন রুপে। বৃষ্টিতে ভেঁজার মধ্যেও একটা প্রাকৃতিক আবহ ও ভালবাসা বিদ্যমান। তাই সুযোগ পেলেই বৃষ্টিতে ভিঁজি। ক্যাম্পাস কিংবা বাসা যেখানেই থাকি বৃষ্টিতে ভেঁজা একটা নেশার মত ব্যাপার। তবে ক্যাম্পাসের পরিপাটি সাঁজানো গোছানো সবুজ প্রকৃতি বর্ষাকালে পুরো অন্যরকম দেখায়। এ অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না।”

 

ফাতেমার কথা শেষ হতে না হতেই অনেকটা মুখের কথা কেড়ে নিয়েই সহপাঠি লিসা বলেন-‘ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে যখন প্রবেশ করি, তখন চোখ সরানো যায় না। সোনালু ফুলের সারি, দু-একটা ফুটে থাকা টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূঁড়ার কুঁড়ি ঘন সবুজের মাঝে উঁকি দেয়। মাঝে মাঝে দাড়িয়ে থাকি। আমাদের ক্যাম্পাসের এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সত্যিই মনোরম। আর বর্ষাকালে ক্যাম্পাসের খোলা মাঠ গুলো তকতকে সবুজ চাদরে ছেয়ে যায়। মন চাই, ঘাঁসের মধ্যে গিয়ে বসে থাকি। অবশ্য বৃষ্টি না থাকলে প্রায়ই বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে আড্ডা দেই আমরা।’

 

Post MIddle

ফাতেমা ও লিসার মত ক্যাম্পাসের হাজারো শিক্ষার্থীর একই রকম অনুভূতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষাকালের সৌন্দর্য্য নিয়ে। শিক্ষার্থীদের কথার সাথে বেশ মিল পাওয়া যাবে যদি স্বচোখে দেখতে আসেন সবুজ ক্যাম্পাস ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে যথাক্রমে ২৪ কিঃমিঃ ও ২২ কিঃমিঃ দুরে এক নিবীড় গ্রামীন পরিবেশে স্থাপিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই বিদ্যাপীঠ দক্ষিণ পশ্চিম বাংলার সর্ববৃহৎ বিদ্যাঙ্গনই নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। শহরের কোলাহল ছেড়ে কালী নদীর তীরে গড়ে উঠেছে এক প্রাণোচ্ছঁল শিক্ষাকেন্দ্র।

 

শহরের ধুঁলোবালি আর কোলাহল মুক্ত পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অবস্থান হওয়ায় এখানে রয়েছে প্রকৃত গ্রামের ছোঁয়া। শহরের আদলে গড়ে উঠেছে সুউচ্চ দালান। যেখানে চলছে জ্ঞান-বিজ্ঞান বিতরণের মহাসমারোহ। গ্রামীন পরিবেশের সবুজ সতেজ গাছ-পালার মধ্যে দালানের উঁকি-ঝুঁকি এক ভিন্ন দৃশ্যের অবতারনা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জুড়ি মেলা ভার। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা যেকোন ঋতুতেই ষোলকলায় পূর্ণ এই ক্যাম্পাস। ডায়না চত্বর, ফেন্ডশীপ চত্বর, ঝালমুড়ি চত্বর, বকুল চত্বর, খেলার মাঠ, বঙ্গবন্ধু হল পুকুরসহ এমন কোন জায়গা নেই যা প্রকৃতিতে অবহেলার। বর্ষাকালের আচমকা বাদলে ক্ষনেক্ষনে বদলে যায় ক্যাম্পাসের দৃশ্যপট। বৃষ্টির এলোমেলো ঝাঁপটা থেকে বাঁচার জন্য দিক-বিদিক ছুটোছুটি শুরু হয় শিক্ষার্থীদের। আবার অনেক শিক্ষার্থী বন্ধুদের সাথে নেমে পড়েন রাস্তায় জলে ভেঁজার নেশায়।
তবে বৃষ্টির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসিতে চলে নানা রকম আড্ডা। গান, কবিতা চলে হরদম। অনেকে আবার সখের বশে বন্ধুদের নিয়ে মেতে ওঠে তাসের বান্ডিলে। এছাড়া আবাসিক হলের ছাত্ররা ফুটবল নিয়ে নেমে পড়েন খেলার মাঠে। বৃষ্টিতে ভিঁজে ফুটবল খেলার ফেলে আসা শৈশবের স্মৃতিকে ঝাঁলিয়ে নেন অনেকে। এমনকি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এখন বর্ষারাণী কদম ফুলের দেখা মিলবে। মীর মশাররফ হোসেন ভবনের পাশে, মেডিকেল সেন্টার, বঙ্গবন্ধু হলের পাশে, খালেদা জিয়া হলের সামনে, জিমনেশিয়ামের পশ্চিমে, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনের পশ্চিম পাশে, কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা সহ নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য কদম গাছ। বর্ষার পানিতে শাখায় শাখায় কদম ফুল যেন প্রকৃতির রঙ্গিন নাঁক ফুল। যা এই সবুজ চত্বরকে সাঁজিয়েছে বধূ বেশে।#

 

 

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট