”অসাধারন এক সময় পার করছি “ বিদেশ বিভুঁয়ে পড়তে আসার গল্প

13466341_1304663182897148_6977656831817366459_nপ্রতি বছর আমাদের দেশের অসংখ্য তরুন উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমাচ্ছেন। কেউবা আমেরিকা, কেউবা ইউরোপ আবার কেউবা এশিয়ার কোন নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু আমরা কি চিন্তা করে দেখেছি, আমাদের দেশে কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য অন্য দেশ থেকে আসছেন কি না। আসলেও তারা কি অবস্থায় আছেন ?

 

ছেলেটির নাম ইমতিয়াজ আনসারী। একটু শান্ত শিষ্ট নরম স্বভাবের হলেও সবসময় হাসিখুশি থাকতে ভালবাসেন। পড়ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী চতুর্থ বর্ষে। সুদূর নেপালের সুনসারী জেলা থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়তে এসেছেন এই ক্যাম্পাসে। নিজের দেশ ফেলে এখানকার পরিবেশের সাথে বেশ ভালই মানিয়ে নিয়েছেন। তাঁর সাথে আমার খাতির হল বেশ কিছুদিন আগে।

 

জানালেন কিভাবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে ছুটে এসেছেন জাবি ক্যাম্পাসে। জাবিতে পড়তে আসার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নেপাল একটি সার্ক ভুক্তদেশ। সার্কভুক্ত দেশ গুলোর যে কোন দেশের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সনের যে কোন সাবজেক্টে দুটি করে আসন সার্কভুক্ত বিদেশী ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ থাকে। সেই অনুযায়ী আমি এদেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য আবেদন করি।

 

তারপর এদেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয় নেপাল অ্যাম্বাসি থেকে আমার সম্পর্কে সকল বিষয়ে তথ্য নেয় । যাকে বলে ভেরিফিকেশন। সেসকল তথ্য যাচাই বাছাই শেষে এদেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয় আমাকে এখানে ভর্তি হতে অনুমতি দেয় এবং অবশেষে এখানে পড়ার সুযোগ পেয়ে যাই।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখানে আমাদের দেশের তুলনায় যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে এখানকার শিক্ষার জন্য ব্যয় অনেক কম। এখানকার আবাসিক হল গুলোতে সাচ্ছন্দ্যে থাকার ব্যবস্থা, ক্যাম্পাসের সব জায়গায় খুব সাশ্রয় মূল্যে খাবার পাওয়া, ঢাকাতে আসা-যাওয়া করার জন্য যানবাহন সুবিধা সহ চিকিৎসা সুবিধার কথা তিনি উল্লেখ করেন।

 

Post MIddle

নিজের দেশের উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের মানুষ শিক্ষিত হলেও উচ্চ শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম। তাছাড়া উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশে অল্প কিছু সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যেমন কম তেমনি ব্যায় বহুল। নেপাল সরকার উচ্চ শিক্ষার জন্য ছাত্রদের জন্য যে সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে তা এখান তুলনায় অনকে কম।

 

তাছাড়া সেখানে থাকা-খাওয়া সহ যাতায়াত ও চিকিৎসার জন্য যে ব্যায় প্রয়োজন তা একজন ছাত্রের নিজেকে বহন করতে হয়। তাই সেখানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করাটা সবার জন্য সম্ভব নয়।

 

ক্যাম্পাসে রাজনীতি চর্চার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে রাজনীতির চর্চাটা তাঁর দেশের তুলনায় অনেক বেশী। সেই দিক থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকে অনেকটা স্বাধীনচেতা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

নতুন ক্যাম্পাসে এসে কোন সমস্যায় পড়েছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, প্রথমে ভাষা গত কিছু সমস্যায় পড়ে ছিলাম। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বাংলা ভাষা রপ্ত করতে পারায় এরকম সমস্যায় আর পড়তে হয়নি। তাছাড়া ক্যাম্পাসের সিনিয়র ভাইয়েরা অনেক সাহায্য করেছেন।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই মনোরম। সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসকে বেশ উপভোগ করি। বন্ধু, সহপাঠি, সিনিয়র, জুনিয়র সব মিলে অসাধারন এক সময় পার করছি।
10850117_953907691306034_5712806504802425241_n

plabonju43@gmail.com

পছন্দের আরো পোস্ট