সিরাজ-উদ্-দৌলা : নাটোরের নবাব, নবাবের নাটোর

f9448c96-73d8-4a4a-9600-9cedf75ba72b

Post MIddle

দেশপ্রেমিক বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ্-দৌলাকে এদেশের মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করে। এই অনুভবে অগ্রগামী নাটোরের মানুষ তাদের প্রিয় নবাবের নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেছেন, যা বাংলাদেশে একমাত্র। সম্ভবত নবাবের সাথে নাটোরের মানুষের আত্মার এই সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছেন নাটোরের রাণী ভবানী।

আজ ২৩ জুন পলাশী দিবস। ১৭৫৭ সালে এই দিনে পলাশীর আম্রকাননে যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ্-দৌলা পরাজিত হন। এ পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হয়ে যায়। তাই এ দিনটি বাঙালি জাতি একটি শোকাবহ দিন হিসেবে স্মরণ করে আসছে। তবে নাটোরের মানুষ নবাবকে স্মরণ করে ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন মাত্রায়। সেটা রাণী ভবানীর কারণে।

ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, সিরাজ উদ্-দৌলার রাজ পরিষদ ছাড়াও নদিয়ার মহা প্রতাপশালী রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, রাজা মহেন্দ্র, রাজা রাম নারায়ন, রাজা কৃষ্ণ দাস ষড়যন্ত্র করে ইংরেজদের সহযোগিতায় উপমহাদেশে নবাব শাসনের অবসান ঘটিয়ে ইংরেজ শাসন সূচনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু নাটোরের রাণীভবানী। ধার্য্যকৃত রাজকরের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নিয়মিত সরবরাহ ও সহযোগিতা ছাড়াও বাস্তবতা উপলব্ধি করে তিনি ছিলেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার মতই ইংরেজ বিদ্বেষী। তিনি ইংরেজদের এদেশে বাণিজ্য করার অধিকার না দেওয়ার জন্য নবাবকে উপদেশ দিয়েছিলেন।

f197ecd3-8698-4812-8b3b-b830316a462c

পলাশী যুদ্ধের মহড়া চলাকালীন সময় থেকেই বিদুষী রাণীভবানী এই এলাকার রাজা, জমিদার, অমাত্যবর্গদের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, “নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা তরুণ মাত্র, অল্প দিন হয় তিনি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার সিংহাসনে বসেছেন। তাকে আপনারা সুচারুরূপে রাজ্য পরিচালনার সুযোগ দিন। আপনারা সকলে অভিজ্ঞ রাজপুরুষ। ইংরেজরা আক্রমণ করতে প্রস্তুত হয়েছে। এখন তরুণ নবাবের বিপণ অবস্থা। এ অবস্থায় নবাবকে সাহায্য করলে শুধু তাকেই সাহায্য করা হবে না বরং বাংলা ও বাঙ্গালীদের সাহায্য করা হবে। দিল্লীর বাদশা আমাদের নামমাত্র শাসক, বাংলার নবাবই হিন্দু, মুসলমানদের ভাগ্য বিধাতা। তাই আপনারা নবাবের প্রতি আপনাদের বৈরি মনোভাব ত্যাগ করুন”।

শুধু তাই নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে রাণীভবানী স্বসৈন্যে পলাশী প্রান্তরের দিকে যাত্রা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে পরাজয়ের সংবাদ পয়ে ফিরে আসেন। রাণীভবানী নবাবের নির্মম এই পরাজয় মেনে নিতে পারেননি। মানতে পারেননি নাটোরের মানুষেরাও।নবাবের পরাজয়ের এই হাহাকার নিয়ে নাটোরে উচ্চ শিক্ষার প্রথম বিদ্যাপিঠ নাটোর কলেজের নাম পরিবর্তন করে ১৯৫৯ সালে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি নামকরণ করে- নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজ। ১৯৮০ সালে সরকারিকরণকৃত বর্তমানে ১৩টি বিষয়ে স্নাতক ও ৯টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী পাঠদানের এই কলেজে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। শহরের বড়গাছা এলাকায় নারদ নদের দুই পাশে ৩৪ বিঘা জমির উপর স্বগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা নাটোর নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা সরকারি কলেজ জানান দিচ্ছে, এদেশে নবাবের নামে নামকরণকৃত একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান। নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলার নামে নামকরণ করতে পেরে নাটোবাসী গর্বিত।

নাটোরের সাথে নবাবের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নাটোর কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্যাপার কলেজের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক ফারুক হোসেন অনন্য এক উদ্যোগ নিয়েছেন। সিকান্দার আবু জাফরের নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা নাটককে যাত্রাপালায় রূপান্তর করে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঞ্চায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে “চলন নাটুয়া” প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে।

ফারুক হোসেন বলেন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্য বই সহজ করে উপস্থাপনের পাশাপাশি নবাব সিরাজ-উদ্ দৌলার বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানান দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। ইতোমধ্যে শিল্পকলা একাডেমীর মঞ্চ সহ সারাদেশে নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা যাত্রাপালার ১২টি প্রদর্শনী হয়েছে।

b261fe74-3576-4170-a1c4-9d0537ceebc4

নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলার বিরোচিত সংগ্রাম ও আত্মদান নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার মূল্য অনুধাবনে সাহায্য করবে মন্তব্য করে নাটোর সিরাজ-উদ্-দৌলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল কুদ্দুস মৃধা বলেন, পলাশী দিবসে কলেজে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা না হলেও সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সর্বোপরি নাটোরবাসী নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলাকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে।

লেখাপড়া২৪/এমটি/২৩১

পছন্দের আরো পোস্ট