ঢাবি ক্রিমিনোলজি বিভাগের ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

(2) 14-05-2016_Criminology-বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিমিনোলজি বিভাগের ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব আজ (১৪ মে) শনিবার সকালে উদযাপিত হয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ফারুক খান এমপি এবং ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান।
 

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বিভাগের উত্তরোত্তর অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত সম্পদের মধ্যেও এই বিভাগ তাদের নানা সমস্যা মোকাবেলা করে পরিপূর্ণ বিভাগে রূপ লাভ করবে। তিনি অপরাধ বিজ্ঞানের গুরুত্ব ও ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, একটি দেশ ও সমাজ সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন আইনের শাসন। জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়ন করে আইন অমান্য করলে আইনের ভিত্তিতে বিচারক শাস্তির বিধান করেন। আইন সঠিকভাবে সমাজে প্রয়োগ হচ্ছে কি-না, অপরাধ কেন হচ্ছে তা দেখার দায়িত্ব পুলিশ এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার। আজকের পৃথিবীতে প্রতিদিন অপরাধের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে, সাইবার ক্রাইম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই এই বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অপরাধ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। লেখাপড়া, গবেষণা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে অপরাধ সংগঠনের প্রকৃতি চিহ্নিত করা, প্রতিবিধান করা, প্রতিরোধ করা, সর্বোপরি সমাজে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অপরাধ প্রবণতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা জরুরী। ভবিষ্যতে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অপরাধমুক্ত সমাজ ও সুন্দর দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

 

উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে স্মরণ রাখতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ভাষা আন্দোলন থেকে নানা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগণিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছেন। তাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে ফরাসী দার্শনিক আর্দ্রে মারলো-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তাঁর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবিত ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে মৃত ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি।”

 

উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, নৈতিক শক্তি দিয়ে গড়ে তুলতে হবে নিজেদের। এগিয়ে নিতে হবে দেশ ও সমাজকে। দুর্নীতি নয়, সত্যের পথে থাকতে হবে, সত্য থেকে বিচ্যুত হলে চলবে না। নৈতিকতা দিয়ে জীবন শুরু, নৈতিকতা দিয়ে শেষ, নৈতিকতা ও সততা হবে মূল্যবোধের ভিত্তি।

 

Post MIddle

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিভাগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, জাতিগতভাবে আমরা এগিয়ে চলেছি উন্নত দেশের দিকে। মধ্যবর্তী আয়ের দেশের এই ক্রান্তিকালীন সময়ে অপরাধ বিস্তৃত হতে পারে। সমাজ অপরাধমুক্ত নয়, তবে অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে অপরাধ বিজ্ঞান পড়া ও গবেষণা অত্যন্ত সময়োপযোগী। ঝর্ণা যেমন নদীর সৃষ্টি করে তেমনি সমাজে অপরাধ সৃষ্টি হয়, অপরাধ থাকবে, অপরাধ সভ্যতার অংশ। অপরাধ বিজ্ঞান পড়ার মাধ্যমে বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে অপরাধ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবেন বলে মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন। প্রদর্শন করা হয় বিভাগের চার বছরের নানা কর্মকান্ড নিয়ে এক প্রামাণ্য চিত্র। এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি মধ্য দিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিনব্যাপী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসবের উদ্বোধন করেন।

 

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের শাপলা কনফারেন্স হলে Social Disorganization and Violence in Bangladesh: Recent Experiences শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে অপরাধ ও সহিংসতা’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান এবং গোল টেবিল সঞ্চালনা করবেন বিভাগের প্রভাষক মিজ উম্মে ওয়ারা।

(1) 14-05-2016_Criminology

 

পছন্দের আরো পোস্ট