শাবান মাসের বিশেষ আমল

৯৯পবিত্র মাহে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের মাঝে হাজির হলো পবিত্র শাবান মাস। সর্বশ্রেষ্ঠ মাস রমজানের আগাম প্রস্তুতির তাগিদ ও শবেবরাতের উপহার নিয়ে এলো বরকতময় শাবান মাস। খোদ শাবান মাসটিও বিভিন্নভাবে বিশেষ গুরুত্ব ও তাত্পর্য রাখে। এ মাসকেই রাসুল (সা.) ‘শাবানু শাহরি’ (শাবান আমার মাস) বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতেন। রজব ও শাবানজুড়েই তিনি রমজানের অধীর অপেক্ষায় থাকতেন। এরই ধারাবাহিকতায় রজবের শুরু থেকেই রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাজান।’ (শুআবুল ইমান : ৩৫৩৪) রমজানের আগমনের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকতেন তিনি। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) শাবান মাসের (দিন-তারিখের হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (আবু দাউদ : ২৩২৫) স্বীয় উম্মতকেও তিনি শাবান মাসের দিন-তারিখের হিসাব রাখার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।

 

তিনি এ মাসে অধিক হারে নফল রোজা রাখতেন। হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, আমি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে শাবান ও রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৩৬) হজরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, একটি বর্ণনায় তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে শাবান মাসের মতো এত অধিক (নফল) রোজা আর অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের অল্প কয়েক দিন ছাড়া বলতে গেলে সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৭)

 

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রমজানের পরে কোন মাসের রোজা সবচেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ? উত্তরে তিনি বলেন, শাবানের রোজা—রমজানের সম্মানার্থে। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৬৩)

 

এ ছাড়া আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের এ মাসে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত উপহার দিয়েছেন। কোরআনের ভাষায় এটাকে লাইলাতুম মুবারক ও আমাদের এ অঞ্চলের পরিভাষায় ‘শবেবরাত’ বলে অভিহিত করা হয়। বিভিন্ন হাদিসে এ রাতের ফজিলতের বিস্তারিত আলোচনা এসেছে। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৬৬৫)

 

Post MIddle

বিশুদ্ধ মতানুসারে শবেবরাত ও শবেকদরের নফল আমলগুলো একাকী করণীয়। ফরজ নামাজ অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। বিভিন্ন হাদিস থেকে এ রাতে দীর্ঘ নামাজ পড়া, সিজদা দীর্ঘ হওয়া, দোয়া-ইস্তেগফার করার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। (শুআবুল ইমান, বায়হাকি : ৩/৩৮২, ৩৮৩)

 

তবে এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদিস শরিফেও নেই, আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। তবে হ্যাঁ, যদি কোনো প্রকার ঘোষণা বা আহ্বান ছাড়া কয়েকজন মানুষ মসজিদে একত্রিত হয়ে যায়, তবে তারা একাকী ইবাদত করবে। এক শ্রেণির যুবক আছে, এ রাতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাস্তায় সময় কাটায় উচ্চস্বরে জিকির করে—এগুলো সম্পূর্ণ বর্জনীয়। কারণ এতে করে কোনো রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট হতে পারে। আর নফল ইবাদত অন্যকে কষ্ট দিয়ে করার কোনো বিধান নেই।

 

১৫ শাবানের রোজা

শাবান মাসজুড়ে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলতের কথা হাদিস শরিফে রয়েছে। এ ছাড়া ‘আইয়ামে বিজ’ তথা প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার ব্যাপারেও হাদিস শরিফে উৎসাহিত করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসে বিশেষভাবে ১৫ তারিখে রোজা রাখার নির্দেশনাও পাওয়া যায়। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা তা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং পরদিন রোজা রাখো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৪)। সূত্র-কালেরকন্ঠ

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক

পছন্দের আরো পোস্ট