কলেজ অধ্যক্ষদের সাথে শিক্ষামন্ত্রীর মতবিনিময়

NU Press Release 13.05.2016শুক্রবার বিকেল ৩ টায় বাংলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের সকল কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন ব্যবস্থা ও শিক্ষার মানোন্নয়ন’ বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি।

 

প্রধান অতিথির ভাষণে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু দেশের মধ্যেই বৃহত্তম নয়, সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠানে প্রধানত অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তানরা পড়াশুনা করে থাকে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাজারও সমস্যায় জর্জড়িত হয়ে পড়ে এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে মানুষের হতাশার অন্ত ছিল না। আমি আজ অত্যন্ত খুশি যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চরম হতাশা ব্যাঞ্জক একটি অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে উঠে আসছে এবং বহুলাংশে নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বিশেষকরে শিক্ষার্থীদের দুর্বিষহ সেশনজট নিরসনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে অনেক অগ্রগতি সাধন করেছে, যা নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়।

 

বিশ্বায়নের এই যুগে মেধা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও যোগ্যাতা ব্যতীত কী ব্যক্তি কী জাতীয় কোনোভাবেই টিকে থাকা ও উন্নয়ন অর্জন সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন মানসম্পন্ন শিক্ষা। তাই এ বিষয়টির প্রতি সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে যোগ্য গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারলে, তা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখবে। জাতীয় জীবনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিশেষ অবস্থান স্মরণে রেখে এটিকে সত্যিকার অর্থে একটি মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই।”

 

সভাপতির ভাষণে উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, “বর্তমান যুগে শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবলমাত্র জ্ঞান অর্জন নয়, শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠন ও তাদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করার পাশাপাশি তাদের শিক্ষালব্দ জ্ঞান হতে হবে বাস্তবে প্রয়োগধর্মী। সারা দেশজুড়ে অবস্থিত ২২০০ অধিভুক্ত কলেজের ২১ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে তথ্য-প্রযুক্তি অবলম্বনে সমাজ চাহিদা, দেশের প্রয়োজন তথা যুগপযোগী শিক্ষাদান সম্ভব হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটস নিজেদের জন্য কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

 

Post MIddle

সেকথা বিবেচনায় রেখে গত তিন বছর ধরে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিচালন পদ্ধতির বিকেন্দ্রীকরণ, জ্ঞানের নতুন বিষয় চালু, শিক্ষার্থীর জন্য মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনার ব্যবস্থা, কলেজ শিক্ষকদের নিয়মিত নিবিড় প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর আমরা চেষ্টা করে আসছি। সেশনজট ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা। এ থেকে উত্তরণে আমরা যে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এর ফলে অনকে শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে সেশনজটের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পেরেছে এবং আমি আবারও ঘোষণা করছি যে, ২০১৮ সালের মধ্যভাগ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হবে সম্পূর্ণ সেশনজট মুক্ত।

 

নিজস্ব জমি ও অবকাঠামোর ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থায়ীভাবে নির্মাণ এবং কলেজ শিক্ষার মানোন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় মোট ১৩০০ কোটির টাকার দুটি প্রকল্প সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যান্য পদক্ষেপের পাশাপাশি এ দুটি প্রকল্প কার্যকর হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠবে দেশে যোগ্য মানবসম্পদ সৃষ্টির প্রাণকেন্দ্র।

 

কলেজসমূহের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতার ধারা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই প্রথমবারের মত পারফরমেন্সভিত্তিক কলেজ র‌্যাংকিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা দেশেও প্রথম। ২০শে মে ঢাকায় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে র‌্যাংকিং-এ নির্বাচিত কলেজসমূহকে পুরস্কৃত করা হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলার আমাদের এ সব কর্ম-প্রচেষ্টার প্রতি আপনাদের সবার সহযোগিতা কামনা করছি।”

 

সভায় বিভিন্ন কলেজের ৪০০ জন অধ্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন। এঁদের মধ্যে প্রফেসর অধ্যক্ষ মোজাহিদ বিল্লাহ ফারূকী, অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম হাওলাদার, অধ্যক্ষ ড. আনোয়ার হোসেন, অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান, অধ্যক্ষ আবু বকর চৌধুরী, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, অধ্যক্ষ শহীদ খান, অধ্যক্ষ ফজলুল হক, অধ্যক্ষ গায়েত্রী চেটারর্জী, অধ্যক্ষ হাসান আলী, অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন মোল্লা, অধ্যক্ষ আবু হায়দার, অধ্যক্ষ শাহজাহান, অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম, অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন, অধ্যক্ষ আসাদুল হক, অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান, অধ্যক্ষ আবু সাঈদ, অধ্যক্ষ শিরিন আকতার বানু, অধ্যক্ষ জাকির হোসেন, অধ্যক্ষ রেজাউল করিম সহ ৪৫ জন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ নোমান উর রশীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনের ক্ষেত্রে সফ্টওয়ার তৈরিসহ এ পর্যন্ত গৃহীত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরেন। তাঁকে সহায়তা করেন আইসিটি শাখা প্রধান জনাব মো. মুমিনুল ইসলাম। সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড, আসলাম ভূইয়া।##

 

লেখাপড়া২৪.কম/এমএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট