পড়াশুনা ও খেলাধুলায় সমানে সমান সুপ্তা

11028354_1663345257232506_8967824421494758691_nশারমিন আক্তার সুপ্তা। পড়ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। তার অন্য আরেকটি বড় পরিচয় হলো বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে। ডান হাতি ব্যাট করা এ খেলোয়ারের ২০ বছর বয়সেই রয়েছে অনেক কীর্তি। খেলেছেন টি-টোয়েন্টি ২০১৬ বিশ^কাপে। ছোট বেলা থেকেই সুপ্তা যেমন খেলাধুলায় হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন, তেমনি পাশাপাশি পড়াশুনাও চালিয়েছেন সমানতালে।

 

গাইবান্ধা জেলায় অজপাড়াগায়ে বেড়ে উঠা সুপ্তা ছোট বেলা থেকেই ছিলেন চঞ্চল প্রকৃতির। ২০০৬ সালে প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন উচ্চ মাধ্যমিকে। স্কুলে একবার ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন হয়। সেখানেই চ্যাম্পিয়ন হয়েই মূলত খেলাধুলায় নিয়মিত হন তিনি। বাবলু নামের এক স্থানীয় একজন কোচের সাথে পরিচয় হয় তার। তিনিই তাকে ক্রিকেট খেলার কথা বলেন। যিনি তাকে বলেন বিকেএসপির কথা, যেখানে পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলাও করা যায়। কিন্তু অনেক কষ্টে একজন মেয়ে হয়ে প্রথমে বাবাকে রাজি করিয়েছেন,কিন্তু মাকে রাজি করানো যায়নি। তবে পরে সবাইকে অবশেষে রাজি করিয়ে ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল ভর্তি হন বিকেএসপিতে।

 

প্রথমদিকে মা বাবাকে ছেড়ে ভাল লাগত না তার। কিন্তু মাকে তো আর বলা যায় না। বললেই তো বাধ্য হয়ে বাড়ি যেতে হবে। তখন নিজেকে তিনি মানিয়ে নিয়েছেন সবার মাঝে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম খেলেন প্রিমিয়ার লীগে। সেখান থেকেই ভালো পারফরমেন্স করে ২০১১ সালে সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে চান্স পান জাতীয় দলে। ওডিয়াই স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রথম ম্যাচ হয় আয়ারল্যান্ড এর সাথে। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি করেন ৫৩ রান। মহিলা দলের প্রথম অর্ধশত রানকারী হিসেবে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়। ২০১৩ বিকেএসপির সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন তিনি। এর পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বর্তমানে সময়ে খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।

 

Post MIddle

12910700_1746399992260365_1049387049_nএ তো গেল তার খেলার কথা, পাশাপাশি পড়াশুনাও করতে গিয়ে পড়েছেন অনেক প্রতিবন্ধকতায়। একদিন খেলছেন মিরপুর ২নং স্টেডিয়ামে। দূর্দান্ত চার ছয় মেরে বোলারদের কুপোকাত করে চলেছেন। অর্ধশত পার করে করেন ৬৫ রান। অন্যদিকে সেদিন তার এসএসসি’র রেজাল্ট হয়। ৪.৫৬ পয়েন্ট এসএসসি পাশ করেন। তার রেজাল্ট একটু খারাপের কারণে মনটা খারাপ হয়ে যায়। পরে কিন্তু সেদিন প্লেয়ার অব দ্যা ম্যাচ হয়ে সব দু:খ ভুলে যান। তারপর এইচএসসি পাস করেন ৪.৪০ পেয়ে। এবার পড়াশুনার পালা বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে। ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পান ঢাবিতে ইসলামের ইতিহাসে, জবিতে ইংরেজীতে। কিন্তু ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেও তিনি কোন খেলোয়ার কোটা ছাড়া চান্স পান বাংলা, ভূগোল ও পরিবেশ এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। পরে প্রথম ক্যাম্পাসে এসে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হতে দেখেন। মনটা তার ভরে যায়। ভাবতে থাকেন আর যাই হোক এখানে ভর্তি হয়ে তিনি খেলাটা ভালভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন। তাই ভর্তি হন সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। প্রথম প্রথম তাকে ছেলেদের সাথেই অনুশীলনে যেতে হতো মাঠে। যেখানে একজন মেয়ে হয়েও তিনি তার খেলাধুলার কথা চিন্তা করেই কোন সংকোচ বোধ না করে নিজেকে ফিট করে তোলেন।

 

সুপ্তা জানান, সত্যি পড়াশুনা ও খেলা একসাথে চালানো খুব কঠিন তবে শিক্ষকদের উৎসাহ ও সহপাঠিদের সাহায্যে আমি তা চালিয়ে নিচ্ছি। এছাড়া একজন মেয়ে হয়ে এতটা পথ পাড়ি দেওয়া অনেক কঠিন একটা কাজ হয়তো, কিন্তু আমি কখনো এটা মনে করতাম না। কারণ আমি নিজের প্রতি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম ও নিজের কাজকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মনে করতাম। আমার জীবনে বাবার পরে দুইজন মানুষ অনেক বেশি অনুপ্রেরণা যোগিয়েছেন, তারা হলো মাশরাফি বিন মুর্তুজা ও মুশফিকুর রহিম। তারা দুজনেই মাঠের ভেতরে ও বাহিরে খুব আত্মবিশ্বাসী মানুষ।#

 

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট