অরক্ষিত শাবি, সীমানা প্রাচীর হয়নি ২৫ বছরেও

4১৯৯১ সালের ১লা ফাল্গুন ৩টি বিভাগের ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রযুক্তির ব্যবহার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর মুক্ত সংস্কৃতির বাঁধনে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। নিত্য নতুন সাফল্য আর প্রযুক্তির উদ্ভাবন যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বর্তমানে ছাব্বিশটি বিভাগে প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। সময়ের আবর্তনে শাবিপ্রবি ২৫তম বসন্ত শেষ করে ২৬তম বসন্তে পদার্পন করেছে।

 

তবে প্রতিষ্ঠার ২৫ তম বছর পেরিয়ে ২৬ তম বছরে পা রাখলেও আজ পর্যন্ত সীমানা প্রাচীরে বেষ্টিত হয়নি দেশের সর্ব প্রথম এ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। অরক্ষিত ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক অঘটন ঘটলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ল্যাব ,সংগঠনের কার্যালয়ে চুরি ও রাস্তাঘাটে ছিনতাই যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠছে। ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধাঁধরা কোন নিয়ম না থাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করে সহজেই পালিয়ে যায় দূবর্ৃৃত্তরা। এমনকি গত কয়েক বছর থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। নিয়মিতভাবেই এ ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে গেলেও এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

 

২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়রি ২য় ছাত্রহল সংলগ্ন পুকুর পাড় থেকে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পলিথিনের ব্যাগে মোড়ানো লাশটির গলায় নাড়ি দিয়ে পেছানো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। তবে এ ঘটনার তদন্তে পুলিশ সংশ্লিষ্ট কাউকে সনাক্ত করতে পারেনি।

 

২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়রি সৈয়দা সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের পেছনে গাজী কালুর মাজারের টিলার পাশ থেকে বিশ^বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী বড়গুল এলাকার ইজ্জত উল্লাহ’র ছেলে বাচু মিয়ার (২৫) লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। গলা, হাত, পাসহ শরীরের নানা স্থানে আঘাতের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায়ও পুলিশ কাউকে সনাক্ত করতে পারেনি।

 

বছরের ২০ নভেম্বর হলে উঠাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইনিভার্সিটিতে পড়ুয়া এক বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়।এসময় বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মীদের অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

 

চলতি বছরের ৯ জানুুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মিউজিক্যাল সংগঠন ‘রিমের’ বাদ্যযন্ত্র চুরি, ২৮ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম ওয়াজেদ মিয়া আইঅইসিটি ভবন থেকে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ চুরি, ১২ জানুয়ারি পরিসংখ্যান বিভাগের একটি কক্ষ থেকে কম্পিউটার ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরি, ১৭ ফেব্রুয়ারি শারীরিক শিক্ষা ভবনে চুরি, এছাড়াও সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রক্টরের মটরবাইক চুরিসহ নানা ঘটনা ঘটছে। ৩২০ একর আয়তনের এই সবুজ ক্যাম্পাস সীমানা প্রাচীরের মাধ্যমে সুরক্ষিত না থাকায় এমন দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

 

Post MIddle

সাস্ট সাহিত্য সংসদের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, সীমনা প্রাচীর না থাকা, অপ্রচুর নাইট গার্ড, অটোরিক্সা চালকদের অপরাধ প্রবনতা ও প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্যই মূলত ক্যাম্পাসে এরকম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।

 

এদিকে গত ১০ জানুয়ারী নবীবরণ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্য ২১৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে বলে জানান। যা দ্বারা নতুন একাডেমিক ভবন, ল্যাবরেটরি, গবেষনাগার এবং ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা আলাদা হল তৈরি করা হবে। তবে এ প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়কে সুরক্ষিত রাখার জন্য সীমানা প্রাচীর তৈরিতে কোন বরাদ্দের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. ইশরাত ইবনে ইসমাইল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর খুবই গুরুত্বপূর্ন। এটি একটি জটিল ও বড় ইস্যু। আমি যতটুকু জানি এটি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে।

 

সম্প্রতি সময়ের ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে সহকারী প্রক্টর জাহিদ হাসান বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় সতর্ক অবস্থায় আছি, ভবিষ্যতে এইজাতীয় ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।

 

চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে অপারগ উল্লেখ করে বলেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। তবে শুধুমাত্র সীমানা প্রাচীর না থাকার কারনে এসব ঘটনা ঘটেনি। এসবের সাথে অন্যান্য কারনও জড়িত। এসব দূর্ঘটনার প্রতিরোধে সকলের সম্মিলিত সহযোগিতার প্রয়োজন।#

 

 

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট