৩ গবেষক ও ৬৭ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিল আহ্ছানউল্লা ট্রাস্ট

০০০মেধাবী গবেষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ পরিচালিত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ট্রাস্ট ফান্ডের বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। রোববার সোসাইটি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষক ও ৬৭ শিক্ষার্থীকে এ বৃত্তি প্রদান করা হয়। বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ট্রাস্ট ফান্ডের নমিনি কাজী রফিকুল আলম। ট্রাস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সচিব ড. সাব্বির আহমেদ।

 

অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) তার জীবনের সব অর্জন মানবসেবায় দান করে গেছেন। বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি টিচার্চ ট্রেনিং কলেজ এবং একটি ক্যান্সার হাসপাতালসহ বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমান সমাজে এ ধরনের উদ্যোগ শুধু প্রশংসনীয় নয়, বরং অদ্বিতীয়।

 

কাজী রফিকুল আলম বলেন, খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) ছিলেন একাধারে একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক এবং সুফি সাধক। ১৮৯৬ সালে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতার মাধ্যমে পেশা জীবন শুরু করেন। পরে তিনি তৎকালীন ভারত উপমহাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পদে আসীন ছিলেন। তিনি আরও বলেন, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য। সে সময় তিনি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলেন; যা পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে।

 

কাজী রফিকুল আলম বলেন, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা মানবসেবার জন্য একটি মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষা, সামাজিক এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সারা জীবন তিনি সাধনা করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় দেশের মেধাবীদের সাহায্য করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খন্দকার বজলুল হক বলেন, যে জাতি শিক্ষায় পিছিয়ে সে জাতি উন্নতি করতে পারে না। বিগত সব সময়ের চেয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে ভালো সময় অতিবাহিত করছে। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ভর্তুকিও দিচ্ছে।

 

Post MIddle

তিনি বলেন, শিক্ষা এমন একটি জিনিস যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষকে সাহায্য করে। সমাজ জীবন, জাতীয় জীবন এবং ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের জীবনে যে কোনো সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং বিকশিত করতে একমাত্র অবলম্বন শিক্ষা।

 

খন্দকার বজলুল হক বলেন, ভূ-রাজনীতি সমস্যার সমাধান করতে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ছিলেন একজন সমাজসেবী। তিনি তার জীবনের শিক্ষা, অর্থ যা কিছু অর্জন করেছিলেন; সবটুকু সমাজের মানুষের জন্য দান করেছেন। তার মৃত্যুর পরও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন যেভাবে মানুষকে সেবা করে যাচ্ছে, তা বর্তমান সমাজের একটি উদাহরণ। এই সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানটি যারা পরিচালনা করছেন, বিশেষ করে কাজী রফিকুল আলমকে নিয়েও আলোচনা করা যায়। তিনি কতটা সমাজসেবী, উদার ব্যক্তি হলে এভাবে জনসেবা করে যাচ্ছেন; তা নিয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠান করা যায়।

 

স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং অমুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন অবদান রাখছে এশিয়াটিক সোসাইটি।
আলোচনা শেষে তিনজন গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। ঢাবির দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ীকে তার ‘সুফিজম অ্যাজ দি এসেন্স অব ইসলাম অ্যান্ড সুফি ডকট্রিন অব লাভ উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু সাম লিডিং সুফিস অব দি ইন্ডিয়ান সাব-কনটিনেন্ট’ নামক গবেষণা কর্মের জন্য বৃত্তি তুলে দেন কাজী রফিকুল আলম। অন্য দুইজন গবেষক হলেন ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মামুন আল মোস্তফা এবং গবেষক রেবেকা আহমেদ।

 

বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- ঢাবির হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার বিভাগের নুরুন্নাহার নুরী, হাশেম রেজা, শামিমা নাসরীন, সোহাগ হোসেন, রিয়াজ উদ্দীন, মিনথাল আহমেদ মাসুম, সামসুজ্জোহা, মনজুরুল ইসলাম, সাইদুর রহমান, শাহীন আহমেদ, মুসলিমা মুন্নির, আহমেদ মোরশেদ, মাইজুর রহমান, নাজমুল ইসলাম, আল আমীন, মরিয়ম রুমি, শাখির আহমেদ, রিশাত জাহান শিল্পী, মাহাবুবা সিদ্দিক, অলিভিয়া, সারমিন আক্তার এবং আলেয়া। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আহসান হাবিব, হাবিবুর রহমান, তাওহিদা, কামরুজ্জামান, মনিরা, আফরিন, রাজিব, শরিফুল ইসলাম, শারমীন সুলতানা, তানিয়া সুলতানা, মিঠু রহমান, নয়ন তারা, নাজনীন, খাদিজা এবং সুস্মিতা রানী দাস। দর্শন বিভাগের জান্নাতুল ফেরদাউস মিতা, প্রিয়াঙ্কা রানী, রাসেল আহমেদ, হাসনা হেনা, মোঃ জামিউল হক, সিফাতুল ইসলাম, লাভলু হাসান, ফাতেমা জান্নাত, আসমা খাতুন ও সজিব কুমার। লিঙ্গুইস্টিক বিভাগের হাবিবুর রহমান। রিলিজিয়ন অ্যান্ড কালচার বিভাগের আমির হামজা, মিনাক্ষি ম-ল, ফিরোজ কবির, আয়েশা আক্তার, মাহমুদা, জুলকার নাইন ও আয়েশা সিদ্দিকা। পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের সাইদুর রহমান ও আল মাসুদ। মাস কম্যুনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের শরিফা উম্মে শিরিনা এবং মৌসুমি খাতুন। এনথ্রোপোলজি (নৃবিজ্ঞান) বিভাগের আসমা আক্তার, পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট বিভাগের ওসমান গনি, ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শামিমা আক্তার।
এছাড়া বাংলা বিভাগের মনিরুল ইসলাম, আইন বিভাগের সাজেদুল ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগের আবুল মিয়া এবং আরবি বিভাগের আরিফুর রহমানকে বৃত্তি প্রদান করা হয়।#

 

আরএ্ইচ

পছন্দের আরো পোস্ট