২৫ এপ্রিলের ঘটনা প্রসঙ্গে জাবি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

Juসোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী অর্ধ-দিবস হরতালের সমর্থনে গত ২৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখ সোমবার আনুমানিক সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য জয়বাংলা গেইট সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টর মহোদয়কে ঘটনাটি ফোনে অবহিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাৎক্ষণিক ঘটনাটি মাননীয় উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্য মহোদয়কে অবহিত করেন। তিনি সহকারী প্রক্টরদেরকে ঘটনাস্থলে আসার অনুরোধ জানিয়ে নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় তাঁরা দেখতে পান যে, অবরোধকারীরা মহাসড়কের ওপর টায়ারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং হরতালের সমর্থনে স্লোগান ও বক্তব্য দিচ্ছে। তখন মহাসড়কের দু’পাশে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে ছিল। এ সময় বেশ কিছু বাইরের প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা জয়বাংলা গেইট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে থাকে। এমতাবস্থায় বাইরের যানবাহন ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ বন্ধ করতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে পকেট গেইট দুটি সার্বক্ষণিক খোলা রেখে জয়বাংলা গেইটসহ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য গেইটগুলো তালাবন্ধ না করে ভেজিয়ে রাখা হয়, যেমনটি প্রায় সবসময়ই রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে মহাসড়ক ছেড়ে দেয়ার জন্য অবরোধকারীদের বার বার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাদের অবস্থানে অনড় থেকে মহাসড়কে অবস্থান করতে থাকে। উক্ত পরিস্থিতি নিয়ে মাননীয় উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্য মহোদয়কে ব্রিফ করার জন্য প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর আনুমানিক সকাল ৮:৪০ মিনিটের দিকে উপাচার্য মহোদয়ের বাসভবন অফিসে আসেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদ্বয় ও প্রক্টর অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জয়বাংলা গেইটে অবস্থান করছিলেন।

 

আনুমানিক সকাল ৯:০০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায় যে, মহাসড়কে আটকে পড়া শত শত গাড়ি (যার মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৩/৪টি গাড়িও ছিল) চলাচলের জন্য পুলিশ মহাসড়ক থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। মাননীয় উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্য মহোদয়ের সাথে আলোচনারত অবস্থায় প্রক্টর মহোদয় জানতে পারেন যে, চারুকলা বিভাগের ৪২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মিতুল মাহমুদকে আটক করে আশুলিয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে প্রশাসনের উদ্যোগে উক্ত শিক্ষার্র্থীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে এনে তার পূর্ব-নির্ধারিত চলমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য পরীক্ষার হলে পৌঁছে দেয়া হয়। এরপরই সিএসই বিভাগের ৪২-তম আবর্তনের ছাত্র সৌমিত্র সাহা পার্থ জানায় যে, আরও ১১-১২ জন শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবন গেইটে তালা দিয়ে অবরোধ করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে উপাচার্য মহোদয় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। ঘটনার এক পর্যায়ে মাননীয় উপাচার্য ও প্রক্টর মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আটককৃত শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। এরপরই প্রক্টর মহোদয় আটককৃত শিক্ষার্থীদের জিম্মাদার হিসেবে পুলিশের কাছে লিখিত মুচলেকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনেন।

 

এখানে উল্লেখ্য যে, শিক্ষার্থীদের আটক করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ প্রশাসন জানায় যে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কটিতে যানবাহন চলাচল নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে পুলিশ বদ্ধপরিকর এবং বিষয়টি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখতিয়ার বহির্ভূত। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনুমতি নেওয়ার অপেক্ষা রাখে না।

 

 

Post MIddle

উপরোল্লিখিত ঘটনার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এমনকি তারা নতুন এসিবাসসহ কয়েকটি বাসে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেয়াল এবং প্রক্টর মহোদয়ের অফিসের দরজায় ‘চৎড়পঃড়ৎ রং উঊঅউ’ লিখেছে, যা অনাকাক্সিক্ষত এবং একজন শিক্ষকের জন্য মর্যাদা হানিকর। চলমান ঘটনার এক পর্যায়ে মাননীয় উপাচার্য ও প্রক্টর মহোদয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে ২৫ এপ্রিলে সংঘটিত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেন।

 

এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।#

 

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট