রাবিতে সাংবাদিকের কক্ষে তালা!

Rajshahi RU SM Hall Provost News Pic by mithu date-07.05.16সংবাদ প্রকাশের জের ধরে রাজশাহীর স্থানীয় ‘দৈনিক সানশাইনের’ স্টাফ রিপোর্টার ও ‘পরিবর্তন ডটকম’ এর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রতিনিধিকে তার কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছেন শাহ মখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম। শনিবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ওই সাংবাদিকের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন তিনি।

 

ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম জাকির হোসেন তমাল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের পরীক্ষা শেষ করেছেন, কিন্তু এখনো ফল প্রকাশ হয়নি।

 

তিনি অভিযোগ করেন, তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেয়ার সময় তার কাপড়চোপড় ও ব্যবহার্য জিনিসপত্রসহ পাঁচ হাজার টাকাও নিয়ে যায় হল প্রাধ্যক্ষ। প্রাধ্যক্ষের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ করায় কোনো রকম নোটিশ ছাড়াই তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে হলের প্রাধ্যক্ষ বলছেন, নিয়ম মেনেই তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

 

ভুক্তভোগী সাংবাদিক জাকির হোসেন তমাল বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে কক্ষে এসে আমাকে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এরপর তিনি নিজেই আমার মশারি টেনে ছিড়ে ফেলেন। সেই সময় সঙ্গে আসা কর্মচারীরা আমার ও আমার রুমমেটের জামাকাপাড়, বিছানাপত্রসহ সবকিছু নিয়ে যান। এসময় আমার বেডের নিচে থাকা পাঁচ হাজার টাকাও নিয়ে যায়।’

 

জাকির হোসেন তমাল আরও বলেন, ‘কক্ষে এরকম তা-ব চালানোর সময় আমাকে গালিগালাজ করে বের করে দেন প্রাধ্যক্ষ। পরে রুম থেকে সবকিছু নিয়ে যাওয়ার সময় প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘এটা কী তোর বাবার হল, দুই ঘণ্টার মধ্যে হল থেকে বেরিয়ে যাবি। পরে দুপুর ১২টার দিকে রুমে তালা লাগিয়ে দেন প্রাধ্যক্ষ।’

 

ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরো বলেন, ‘আমি ওই কক্ষে বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থী। প্রাধ্যক্ষ হলে দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রাধ্যক্ষের অনিয়ম নিয়ে এ পর্যন্ত আমি পাঁচটি সংবাদ করেছি। গত বৃহস্পতিবার কর্মচারী ও হল প্রাধ্যক্ষের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রাধ্যক্ষ আমার ওপর ক্ষেপে যান। তার জের ধরেই আমাকে কোনো রকম নোটিশ না দিয়ে কক্ষ থেকে জোর করে বের করে দেন তিনি।’

 

Post MIddle

ওই হলের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিক মেহেদী হাসান বলেন, ‘কোনো সংবাদের জন্য ফোন দিয়ে প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি বরাবরই খারাপ ব্যবহার করেন। এমনকি বক্তব্য দিতে চান না। ‘আগে সত্য কথা বলা শেখ-তারপরে আমার সঙ্গে যোগযোগ কর’ মাঝে মাঝে এমন কথাও বলেছেন।’

 

এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ী বলেন, ‘একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক হিসেবে জাকির হোসেন তমালের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে তা নিয়ম বহির্ভূত, অনৈতিক। আমরা এই ঘটনায় প্রাধ্যক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি দ্রুত এ ঘটনার বিচার না করে তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।ে’

 

এ বিষয়ে ওই হলের প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নিয়ম মেনেই তার কক্ষ থেকে সব কিছু অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে যা কিছু আছে তা হল থেকে যাওয়ার সময় তাকে ফেরত দেয়া হবে।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘শাহ মখদুম হলের ওই ঘটনায় ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। এরপর হলের প্রাধ্যক্ষকে ডেকে আমি কথা বলেছি। লিখিত অভিযোগ না পেলে তবেই আমরা সিদ্ধান্তে যাবো।’

 

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন, রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাবি প্রেসক্লাব। এছাড়াও রাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন ও উদীচী রাবি সংসদ প্রাধ্যক্ষের এ কাজকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকা-’ হিসেবে আখ্যায়িত করে দ্রুত পদত্যাগ দাবি করেছেন।#

 

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট