আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

ausশুক্রবার নানা আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হলো আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এইউএসটি) প্রথম পুনর্মিলনী ‘গেট টুগেদার ২০১৬’। দিনব্যাপী এ উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসজুড়ে। এতে অংশ নেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ সাবেক শিক্ষার্থী। দিনভর আলোচনা, আড্ডা ও গানের সুখকর স্মৃতি স্মরণ করেন শিক্ষার্থীরা।

 

সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এইচ খান অডিটরিয়ামে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। ভিসি অধ্যাপক ড. এ এম এম সফিউল্লাহর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল আলম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এইচ খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এবং পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. কাজী শরিফুল আলম।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী রফিকুল আলম বলেন, প্রকৃতপক্ষে সন্তান সন্তানই, ছাত্র ছাত্রই এবং শিক্ষক শিক্ষকই। যারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছ, তারা আমাদের সারা জীবনই ছাত্র। আমরা সারা জীবন তোমাদের ছাত্র হিসেবে দেখতে চাই। তোমাদের যে কোনো ভালো সংবাদ আমাদের অনেক বেশি আনন্দিত করে, মনটা ভরিয়ে দেয়। এ ভালো লাগা এবং ভালোবাসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়া সামনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাবেক সব শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকবে বলে আমি আশা করি। তিনি বলেন, আশুলিয়ায় ৪১ বিঘা জমি ক্রয় করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের জন্য। সেখানে শিগগিরই কাজ শুরু হবে। আশা করি, এর মাধ্যমে আমাদের ক্যাম্পাস আরও বিস্তৃৃতি পাবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই এইউএসটিয়ান হিসেবে পরিচিত থাকবে। আশা করি, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হলে সবাই সবার সুখে-দুঃখে এগিয়ে আসতে পারবে, আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য ফান্ড তৈরি করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।

 

অধ্যাপক ড. এম এইচ খান বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেকরা আজ একত্রিত হয়েছে। পুনর্মিলনীতে আসার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংগঠন এখনও হয়নি। এটা হওয়া দরকার।

 

Post MIddle

সভাপতির বক্তব্যে ভিসি অধ্যাপক ড. এ এম এম সফিউল্লাহ বলেন, দেশের প্রাইভেট ইউনিভার্র্সিটি অ্যাক্ট-২০১০ অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন থাকতে হবে। কারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ভর করে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া গ্র্যাজুয়েটদের কর্মকা-ের ওপর। এটাকে বলা হয় আউটকাম বেজড ইভালুয়েশন। অর্থাৎ আমাদের প্রোডাক্ট বের করে দিলাম, সেটা কীভাবে কাজ করছে তা জানার মাধ্যম হচ্ছে এ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। তাই আমরা একটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছি।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অধ্যাপক এম এইচ খান অডিটরিয়ামে শুরু হয় সাবেক শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। এ সেশনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এফ এম আনোয়ারুল হক। এতে সাবেক শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস জীবনের বিভিন্ন স্মৃতির কথা স্মরণ করেন। দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ফের অনুষ্ঠিত হয় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। এ সেশনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেসের ডিন অধ্যাপক ড. আমান উল্লাহ। সাবেক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও তাদের আলোচনায় পুরনো দিনগুলোর কথা তুলে এনেছেন।

 

সাবেক শিক্ষার্থী খন্দকার মামুন স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী। আমাদের সময়ে বুয়েটের পর এ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক সময় দেখা যেত বুয়েটে পছন্দের বিষয় না পেলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতো শিক্ষার্থীরা। তিনি বলেন, আমাদের সময়ে সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক ছিল, বিপদ-আপদে শিক্ষকরা আমাদের পাশে দাঁড়াতেন। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ব করি। আশা করি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আগামীতেও একটি পরিবারের মতো সুখে-দুঃখে সবার পাশে দাঁড়াবেন।

 

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রী মেঘনা তার স্মৃতিচারণে বলেন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন না থাকায় আমাদের অনেককে অনেক সময় বড় সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

 

এদিকে মূল অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে এবং বিরতিতে ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়া, বারান্দা, প্রিয় ক্লাসরুমের করিডোরসহ নানা জায়গায় দিনব্যাপী চলে সাবেক শিক্ষার্থীদের আড্ডা। গান, আড্ডা ও ফটোসেশনে শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দিনগুলোতে ফিরে গেলেন। সাবেক শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা মিলেই একটি পরিবার। পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের সুখে-দুঃখে সাড়া দেবেন- এটাই কাম্য। অনেকদিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে বলে তিনি জানান। এদিকে বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় র‌্যাফেল ড্র। বিকাল ৫টা থেকে অধ্যাপক এম এইচ খান অডিটরিয়ামে আহ্্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করা হয়। এতে উপদেষ্টা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল আলম, ভিসি অধ্যাপক ড. এ এম এম সফিউল্লাহ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাজী শরিফুল আলমকে। পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। সন্ধ্যা ৭টার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর রাত ৯টার দিকে সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিনব্যাপী এ পুনর্মিলনী উৎসব।

পছন্দের আরো পোস্ট