রাবিতে শিক্ষক সমিতির মহাসম্মেলন

13161078_543830555799161_2070029431_oবাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেছেন,‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকদের ওপর বারবার আঘাত আনা হয়েছে। যার শেষ পরিণতি অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী। এটা শুধু অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যা নয়, একটি গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সৃষ্টি করে একটা জ্ঞান ভিক্তিক মানবসম্পদ তৈরি করার যে প্রতিশ্রুতি তার ওপর সরাসারি হামলা। এ হামলা শুধু অধ্যাপক রেজাউল করিমের ওপর নয়, তিনি একটা প্রতীক মাত্র।’

 

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে রাবি শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক মহাসম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যা করার পরে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে, তিনি ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। আজকে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে সারা বাংলাদেশের চরিত্রের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হয়েছে। এরা সেই চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, তারা সভ্যতাকে, ইতিহাসকে মানে না। এরা সাংস্কৃতিকে চর্চা করতে জানে না। যারা শুধু জানে মানুষের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়া, মুক্তি বুদ্ধির চিন্তাকে রুদ্ধ করা।’

 

অধ্যপক মাকসুদ কামাল আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এই আন্দোলনকে থামিয়ে রাখবে না, আমরা এ আন্দোলনের যৌক্তিক পরিণতি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অগ্রসর করে নেবো। রেজাউল করিমের হত্যাকা-ের পর আমরা আর কোন লাশ দেখতে চাই না। কোন শিক্ষকের ওপর হামলা আমরা বরদাস্ত করবো না।’

 

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী র‌্যালি শেষে শিক্ষক সমিতির মহাসমাবেশে মিলিত হয়। রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ্ আজমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপকড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা।

 

Post MIddle

সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোকাদ্দাম হোসেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি নীরেন্দ্র নাথ মোস্তাফী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান, রাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধরণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম, সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন মাতিন, নিহত শিক্ষকের স্ত্রী ও মেয়ে।

 

সমাবেশে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দেশের উন্নয়নের চাকা পিছনে ঘুরিয়ে নিতে বাংলাদেশের পরাশক্তিরা বিভিন্ন ভাবে একটার পর একটা আঘাত হানছে। স্বাধীনতার যারা পরাজিত শক্তি ছিলো তারা চাইছে বাংলাদশকে আবারো একটা আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো করছে কিন্তু আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলোা করতে পারছি না। একটার পর একটা খুন হচ্ছে কিন্তু আমরা তাদের শনাক্ত করতে পারছি না। এটা আমাদের বড় ধরনের ব্যর্থতা।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে আমরা এখনো সুস্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি পাইনি। ভালো হতো যদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এখানে আসতেন, ঢাকা থেকে পুলিশ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এখানে এসে শিক্ষকদের সাথে সংহতি জানাতেন। এটি তাদের ব্যর্থতা, দূর্বলতা’।

 

গত ২৩ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় রাজশাহীর শালাবাগান এলাকায় নিজ বাসা থেকে ৫০ গজ দূরে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সেদিনই নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেছে ওই শিক্ষকের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ। পরে গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ মামলায় তিনজনকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট