ক্যাম্পাসে বৈশাখী আড্ডা

IMG_5566পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, উৎসবের দিন। বাংলা সাহিত্যে, গানে, চলচ্চিত্রে,চারুকলায়- মোট কথা শিল্প-সংস্কৃতির সব শাখায় বৈশাখী উৎসবে মাতেন সবাই। গ্রাম-শহর সর্বত্রই ঘটা করে নববর্ষকে সাদর আমন্ত্রণ জানানো হয়। এক সর্বজনীন উৎসবেই পরিণত হয়েছে পহেলা বৈশাখ।পহেলা বৈশাখকে ঘিরে নতুন প্রজন্মের  সঙ্গে বৈশাখী আড্ডায় সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার, সারা বেনজীর, আয়েশা আক্তার নিশো, এনায়েতউল্লাহ কৌশিক, শাহীনুর আলম ও এস. এম. আহমেদ মনি।

 

নিশো পহেলা বৈশাখ নিয়ে অনেক রকমের পরিকল্পনার কথা বললেন। শাহিনুর ও কৌশিকের রয়েছে অনেক ভাবনা। তবে তাদের ভাবনায় কিছু কিছু ভিন্নতার আওয়াজও ছিল। আড্ডার শুরটা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুল তলায় পহেলা বৈশাখের দিন ঠিক এভাবেই‘পহেলা বৈশাখ’ তো এসে গেল। আর মাত্র কয়েকটা দিন চলবে । এ মাসে বাঙালী জাতি মেতে উঠবে প্রাণের উৎসবে। আমি কিন্তু সম্পূর্ণ প্রস্তুত। শাড়ি তো কেনা হয়েই গেছে। কিভাবে সাজব এই বৈশাখ মাস জুড়ে তাও ঠিক করে ফেলেছি’, বললেন ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী সারা বেনজীর।

 

আইন বিভাগ ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার জানান, কিন্তু যা গরম, সেজেগুজে বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণের ভেতরই সাজটা কেমন যেন নষ্ট হয়ে যায়। প্রচণ্ড গরমে সবকিছু কেমন যেন অস্থির লাগে। তাই এমনভাবে সাজব, যেন প্রচণ্ড গরমেও সতেজ, ফুরফুরে থাকতে পারি।আইন বিভাগ ৩য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার নিশো বলেন,  গরম হোক আর যা-ই হোক এসেছে আমাদের প্রাণের উৎসব বৈশাখ মাস। একটু ছুতানাতা পেলেই আমরা বেরিয়ে পড়ি আর এমন দিনে ঘরে বসে থাকা তো প্রায় অসম্ভব।

 

‘ঘোরা, ঘুড়ি উৎসব উদযাপন সবই ঠিক আছে, আসলে আমরা তো সবাই প্রতি বছরে পহেলা বৈশাখের এই মাসের জন্য দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা সবাই কি জানি এই পহেলা বৈশাখের ইতিহাস। আমি নিশ্চিত না হয়েও বলতে পারি, আমরা অনেক বাঙালীই জানি না বৈশাখের ইতিহাস, বৈশাখের ঐতিহ্য, বৈশাখের আবেদন একজন বাঙালীর জীবনে কতটুকু।’ এই কথাগুলো বললেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শাহীনুর আলম।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সারা বেনজীর বললেন, ‘হ্যাঁ শাহিনুর তুমি আসলে ঠিক কথাই বলেছ। আমরা আসলে অনেকেই এই পহেলা বৈশাখের ইতিহাস জানি না।’

 

Post MIddle

আইন বিভাগ ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী  মনির বলেন – হ্যাঁ নিশো ঠিক সেটাই, আসলে বৈশাখ বাঙালীর জীবনে এমনি এমনি আসেনি। এদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি বারবার চেষ্টা করেছে বৈশাখের ঐতিহ্যকে রুখে দিতে, তার ইতিহাসকে ধ্বংস করতে, প্রচার করেছে ‘হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি’ বলে। কিন্তু ইতিহাস বলে, যার হাত দিয়ে বৈশাখ কিংবা বাংলা নববর্ষের গোড়াপত্তন হয়েছে তিনি কেবল মুসলমানই ছিলেন না বরং সারা মুসলিম বিশ্বে একজন নামকরা,উদারপন্থী শাসক হিসেবে আজও পরিচিত।

 

প্রকৃতপক্ষে ১৫৫৬ সালে সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণের দিনটি থেকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বছরের সূত্রপাত হয়। সম্রাট আকবরের আমল থেকেই বাংলা নতুন বছরাগমনের অর্থাৎ বৈশাখের প্রথম দিনটির উৎসবমুখর উদযাপন হয়ে আসছে। শাহিনুর, তবে সম্রাট আকবরের আমলে সর্বভারতে খাজনা আদায়ের নতুন বছরের সূচনা হলেও, পুরনো দিনের সকল হিসাব পেছনে ফেলে আনন্দের নতুন বছরে পদার্পণ বাঙালীদের মাঝে ঐতিহ্য হিসেবে টিকে গেছে ‘পহেলা বৈশাখ’।

 

আইন বিভাগ ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী কৌশিক,  প্রতি বছরই চেষ্টা করে থাকি পহেলা বৈশাখে বাসায় থাকার জন্য। এবার যেতে পারছি না। সামনেই পরীক্ষা, তাই মন মানছে না। বাসার সবাই একসাথে বৈশাখে না থাকতে পারাটা আমার কাছে অনেক কষ্টের। তাই কিছুই করা হয়নি এবার। সারাটা দিন পড়াশুনা করেই কাটালাম। ইলিশের স্বাদও নিলাম না। নিশো, হ্যা সবার মতো এইবার আমরা ও আমাদের ইউনিভার্সিটির আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছি। আর এইবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে আমি আসলে অন্যান্য বছরের থেকে একটু বেশিই আশাবাদী।

 

শেষ দিকে সারা বেনজির বললেন, ‘মোটকথা আমাদের অনেকের এটা ক্যাম্পাসের শেষ বৈশাখ। তাই আমাদের কাছে অন্যদের চেয়ে দিনটার গুরুত্ব মনে হয় একটু বেশিই। তাই আশা করি সবাই মিলে এই বৈশাখ মাসে অনেক আনন্দই হবে। শাড়ি পড়েছি। পান্তা ইলিশ খেয়েছি। গালে নকশা আঁকিয়েছি। সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রায় গিয়েছি। ইচ্ছেমত সারাদিন ঘুরেছি। ফের যদি ক্যাম্পাসে আসি, তবে পহেলা বৈশাখের টানেই আসবো।

IMG_5606

 

পছন্দের আরো পোস্ট