যবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণা, ২৭ শিক্ষার্থী আটক

00যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। ছাত্রদের সন্ধ্যা ৬টা ও ছাত্রীদের বুধবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ছাড়তে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবীব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

জানা গেছে, মঙ্গলবার সাড়ে তিন ঘণ্টা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। দুপুরে পুলিশ গিয়ে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস। এরপর পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। পুলিশ ২৭ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়েছে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী।

 
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক হায়াতুজ্জামান বলেন, গ্রীষ্মকালীন ছুটি এগিয়ে এনে ২৭ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ ২৭ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বলে প্রাথমিকভাবে শুনেছি।

 

মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপাচার্য প্রফেসর আবদুস সাত্তারকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে পুলিশ ক্যাম্পাসে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করেছে। এতে ২০জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের দাবি। পুলিশ অন্তত ১৮/২০ জনকে আটক করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

 

কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন জানান, সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত উপাচার্য প্রফেসর আবদুস সাত্তার তার কক্ষে অবরুদ্ধ ছিলেন। খবর গেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে উপাচার্যকে মুক্ত করা হয়েছে। তবে লাঠিচার্জের অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি বলেন, আটকের বিষয়টি নিশ্চিত নয়। আটকদের এখনো থানায় হস্তান্তর করা হয়নি।

 

Post MIddle

টানা ১৬ দিনের আন্দোলনে ধরে আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস। চলছে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন কর্মসূচি। রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ জন শিক্ষার্থীসহ ২৮ জনের নামে তথ্য প্রযুক্তি আইনে দুটি মামলা হয়েছে। এই মামলার ফলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার সকাল শিক্ষার্থীরা আরও বেশি ক্ষোভে ফুঁসে উঠে।

 

শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন বাদলসহ ৫ শিক্ষার্থীর বহিষ্কার সুপারিশ ও শিক্ষার্থীদের নামে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অপরদিকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দাবি নৈশপ্রহরী বদিউজ্জামান বাদলের বহিস্কারের সুপারিশ প্রত্যাহার করতে হবে। পাল্টাপাল্টি দাবি নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

 

২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে মূল সড়কে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রীকে মারপিট করে কর্মচারী বদিউজ্জামান বাদলের ভাই শরীফ। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।

 

একপর্যায়ে কর্মচারী বাদল তার বহিরাগত বন্ধুদের সঙ্গে ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ৯ এপ্রিল তদন্ত কমিটি রিজেন্ট বোর্ডের সভায় তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে কর্মচারী বদিউজ্জামান বাদল ও শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন বাদলকে স্থায়ী বহিস্কার এবং আরও ৪ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানির পর দুই পক্ষের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

 

১০ এপ্রিল ক্যাম্পাসে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা বাদলের স্থায়ী বহিষ্কার ও পাঁচ শিক্ষার্থীর বহিষ্কার প্রত্যাহার দাবিতে আন্দোলনে নেমে পড়েন ছাত্রছাত্রীরা। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ১৬ দিন ধরে। অপরদিকে কর্মকর্তা কর্মচারীরা বদিউজ্জামান বাদলের আজীবন বহিষ্কার প্রত্যাহার ও পাঁচ শিক্ষার্থীর শাস্তির দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিল।#

 

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট