জাতীয় শিক্ষানীতি এবং বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ভাবনা

images-2উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হবে জ্ঞান সঞ্চালন ও নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন এবং সেইসঙ্গে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলোর জন্য স্বশাসন ব্যবস্থা অপরিহার্য। একইসঙ্গে শুধু আইন প্রণয়ন নয়, বরং তা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে

 

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে; কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন (ইউজিসি) তাদের সঠিক কাজটি যথাযথভাবে করতে পারছে না। তবে দেরিতে হলেও বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্দেশ্য এবং ইচ্ছা নিয়ে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিতের লক্ষ্যে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৬ এর খসড়া সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের সনদ ছাড়া এখন আর উচ্চশিক্ষার সনদ দিতে পারবে না। সুুতরাং আশা করা যেতে পারে, উচ্চশিক্ষা প্রদানের ব্রত নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘ব্যবসা বিদ্যালয়’ এর মতো খ্যাতি পাওয়ার কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে পারবে।

 

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর অধ্যায় ২৭-এ উচ্চশিক্ষা প্রশাসনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেসব কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে তার চার নম্বর কৌশলে একটি যথাযথ ক্ষমতা ও দক্ষতাসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে এতে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমান কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী বেসরকারি উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্নাতক ও পরবর্তী) মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণা পরিচালনায় সক্ষম কিনা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ব্যয় যৌক্তিক কিনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পড়ানোর যথাযথ ব্যবস্থা আছে কিনা, সে সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন জরুরি। স্বাস্থ্য, প্রকৌশল এবং কৃষিশিক্ষা প্রদানকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

 

অন্যদিকে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান নির্ণয় এবং সেই ভিত্তিতে প্রতি বছর এগুলোর র‌্যাংকিং নির্ধারণ করা ও উন্নয়নের পরামর্শ দান করা হবে। দেখা যাচ্ছে, আইনে এখানে পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় ব্যবধান তৈরি করা হয়েছে। আইনে নব্যপ্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগতমান নির্ধারণের জন্য কোনো কথা বলা হয়নি। তাদের জন্য মানোন্নয়নের কোনো প্রশ্নও রাখা হয়নি। শুধু র‌্যাংকিং করার জন্য বলা হয়েছে। অথচ দেশে অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলোতে এখনও দক্ষ মানের শিক্ষক নেই। নেই কোনো আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো। নেই চাহিদা অনুযায়ী গবেষণা।

 

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের মানদ- কী হবে, তার কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল আইনে এসব বিষয়ের কোনো বর্ণনা পাওয়া যায়নি। শিক্ষকদের মানোন্নয়নে কী ব্যবস্থা সরকার করবে, তার কোনো স্পষ্ট ধারণা আইনে নেই। এ নীতির আওতায় উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (অধ্যায় ৮) বাস্তবায়নে যেসব কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে, তুলনামূলক আলোচনার জন্য এখানে তার কিছুটা উপস্থাপন করছি। কৌশল নম্বর ৩-এ বলা হয়েছে, শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে পারে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর (যেমন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে) উচ্চশিক্ষা প্রদান করা হবে। কোটা পদ্ধতি বা অন্য কোনো কারণে ন্যূনতম যোগ্যতার শর্ত শিথিল করা হবে না। কিন্তু বাস্তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এর বিপরীত দৃশ্য দেখা যায়। দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (পোষ্য কোটা) এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কৌশলে বিশেষ শর্ত তৈরি করে ন্যূনতম যোগ্যতার সঙ্গে আপস করে কর্তৃপক্ষ মেধাশূন্য জাতি গঠনের হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কৌশল নম্বর ১৬ তে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। এ লক্ষ্যে ছুটির সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকদের সমন্বয়ে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ-সেমিনারের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (দুই-একটি ব্যতীত) এ নীতির দিকে সামান্য তোয়াক্কা করে না। কৌশল নম্বর ১৭ তে বর্র্ণিত হয়েছে, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ নির্ধারিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করবে। কৌশলটি দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথভাবে অনুসরণ করলেও দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তা অনুসরণ করে না। ফলে সেখানে সেশনজট যেন এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

Post MIddle

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ৯(৮) এ বর্ণিত হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী যার মধ্যে ৩ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ৩ শতাংশ অনুন্নত অঞ্চলের মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে তার তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কিন্তু বস্তুতপক্ষে দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এটি মেনে চলছে না। এ ধারার উপধারা ৬-এ বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাৎসরিক বাজেটের ব্যয় খাতে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত একটি অংশ গবেষণার জন্য বরাদ্দপূর্বক উহা ব্যয় করিতে হইবে।’ আইনের এ ধারাটিও দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তেমনটা মেনে চলছে না।
অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের এখতিয়ার সম্পর্কিত বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে এভাবেÑ (ক) উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করা। (খ) একাডেমিক প্রোগ্রাম এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অভিস্বীকৃত করা। তবে উচ্চশিক্ষার গুণগতমান বলতে কী বোঝানো হবে, তার কোনো সংজ্ঞা আইনে প্রদান করা হয়নি। ঠিক করা হয়নি এর কোনো মানদ-। গুণগতমান কত সময়ের ভিত্তিতে, যেমনÑ এক বছর না তার বেশি সময় পরপর নির্ধারণ করা হবে, সে বিষয়টিও আইনে বলা নেই। উপধারা (খ) তে বর্ণিত একাডেমিক প্রোগ্রাম ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিস্বীকৃতির জন্য যদি কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদনই না করে তবে তার কী শাস্তি বা দ- হবে, তাও আইনে স্পষ্ট নয়। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি তারিখ ও সময় জালিয়াতি করে সনদ প্রদান করে তা নির্ণয়, আলোচনা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো কৌশল আইনে নেই। কিছু থাকুক বা না-ই থাকুক, কৌশলে এ আইনের ধারা ৪ এর উপধারা ৪ নম্বরের (গ) তে উল্লেখ করা হয়েছে, এ আইনের আলোকে প্রয়োজনীয় বিধিমালা ও প্রোবিধিমালা প্রস্তুত করা যাবে। কৌশলে আইনের ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান আইনসমূহের সাথে এই আইনের অসঙ্গতি বা দ্বন্দ্ব দৃষ্ট হইলে এই আইনটি বলবৎ থাকবে।’ যা আমার মতে একটি অপআইন। কারণ এ বাক্য ব্যবহার করে কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নেবে। এখানে পরামর্শ হলো, যে কোনো আইন প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে একটি কমিটি রাখা দরকার, যে কমিটি দেশে সময়ে সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ সাধনের ফলে প্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে উদীয়মান সমস্যা নির্ধারণ করে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে তা সমাধানের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সুপারিশ মূল কমিটির কাছে পেশ করবে এবং কমিটি তার নিরিখে দ্রুত সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ কমিটির নাম হতে পারে ‘উদীয়মান ইস্যু নিষ্পত্তিকারী টাস্কফোর্স (উইনিটাফ)’, যাকে আমরা ইংরেজিতে বলতে পারি ঊসবৎমরহম ওংংঁবং ঝবঃঃষবসবহঃ ঞধংশ ঋড়ৎপব (ঊওঝঞঋ).
যে কোনো আইনের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতার ধারা হলো, ‘আইনের প্রাধান্য’, যেখানে বিধৃত হয়ে থাকে বিদ্যমান আইনগুলোর সঙ্গে এ আইনের অসঙ্গতি বা দ্বন্দ্ব দৃষ্ট হলে এ আইনটি বলবৎ থাকবে। অভিস্বীকৃতি (অ্যাক্রিডিটেশন) আইন ২০১৫ এর ব্যতিক্রম নয়।

 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান ও শিক্ষকদের গুণগতমান নিয়ে দেশের প্রায় সব মহলেই প্রশ্ন রয়েছে। তবে কেন এমন হীন পরিস্থিতি? সেটি সমাধানের একটি সমন্বিত উপায় নির্ধারণে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আজ পর্যন্ত একবিন্দু পরিমাণ গবেষণা করতে আমরা দেখিনি বা দেখছি না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সামান্য শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে এক্ষেত্রে যে বিষয়টি দৃষ্ট হয়েছে তা হলো, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার প্রসপেক্ট না থাকায় দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা এ পেশায় এসেও খুব দ্রুত পেশা বা কর্মস্থল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। কেননা এখানে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো চাকরির নিরাপত্তা নেই। সেজন্য এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের চাকরির পেশাদারিত্ব গড়ে ওঠে না। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে এসে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা শিক্ষকতা পেশার বিষয়ে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই ক্লাসে যান। আবার কোনো ধরনের পরিপক্বতা আসার আগেই তারা চাকরি পরিবর্তন করে অন্য পেশা গ্রহণ করেন। এর পেছনে আরও যেসব কারণ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিবিধি নেই। ভালোমানের বেতন অর্থাৎ প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতা, প্রকৃত দায়িত্ব ঘণ্টা ও গবেষণার কোনো ক্ষেত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। গবেষণা করার জন্য শিক্ষক-গবেষকদের অনুকূলে পর্যাপ্ত সময় ও ছুটি বরাদ্দ নেই। আধুনিকমানের শিক্ষা উপকরণ নেই। নেই ডিজিটাল ল্যাব। শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বলতে আবাসন ব্যবস্থা, সৃজনশীল কাজের জন্য স্বতন্ত্র ক্লাব গঠন, শিক্ষক সমিতি গঠনের কোনো সুযোগ নেই। ২৪ থেকে ২৫ (১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাসের পর থেকে) বছর ধরে এত অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও সরকারের বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই না। তবুও দেশের প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সেটি খ্যাতনামা হোক আর অখ্যাত হোক, তাদের বিজ্ঞাপনে একটি বাক্য অতি গুরুত্ব সহকারে ব্যবহার করে থাকে, আর তা হলো, ‘আমাদের বৈশিষ্ট্য হলো, দক্ষ শিক্ষকম-লী’। তবে কর্তৃপক্ষের এ দাবিটি সর্বদা অমূলক নয়। কেননা, দেশে এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যাদের আইনসম্মত ক্যাম্পাসই (২৫ হাজার বর্গফুট নিজস্ব বা ভাড়া সাময়িকভাবে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১ একর ও অন্যান্য অঞ্চলে ২ একর জায়গায় স্থাপিত ক্যাম্পাস) নেই, অথচ সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি ও প্রোভিসির দায়িত্বে রয়েছেন দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদরা। তাদের বেতন কাঠামো আর অন্যসব নিয়মিত শিক্ষকদের বেতন কাঠামোতে রয়েছে বিস্তর তফাৎ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, রক্ষকই যেন ভক্ষক। এখানে সাধারণ শিক্ষকের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

 

যা হোক, আমার কাছে মনে হয়, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে সামঞ্জস্য করা হবে। এ ধারাটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। বিষয়টি অতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে একটি সমন্বিত ভর্তিনীতি গ্রহণ করতে হবে। উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে শিক্ষানীতির এ কৌশল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জোরদার করতে হবে।

 

উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হবে জ্ঞান সঞ্চালন ও নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন এবং সেইসঙ্গে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলোর জন্য স্বশাসন ব্যবস্থা অপরিহার্য। একই সঙ্গে শুধু আইন প্রণয়ন নয়, বরং তা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। এজন্য নিয়ন্ত্রণকারী ও মঞ্জুরি কর্তৃপক্ষকে পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত প্রতিনিধি দ্বারা গঠিত হতে হবে। কারণ প্রত্যেক মানুষ তার নিজ নিজ কর্ম সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে। বিশ্বমানের শিক্ষামান নিশ্চিতকরণে মান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানের শর্তগুলো অর্জনের ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। তাহলে জাতীয় জীবনে সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের উপযোগী বিজ্ঞানমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক, উদারনৈতিক, মানবমুখী প্রগতিশীল ও দূরদর্শী নাগরিক আমাদের দেশেই তৈরি হবে। উচ্চশিক্ষার পথচলা শুভ হোক।  সূত্র-আলোকিত বাংলাদেশ।

 

লেখক: শিক্ষক, বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ ও সহকারী প্রক্টর
নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী

পছন্দের আরো পোস্ট