জীবনের বিষাদ রংয়ে আঁকিয়ে লোকমান হাকিম

RU Feature photo (2)বাম হাতের তালুতে একটা ইংরেজী শব্দ লিখতেই পাশ থেকে বললেন বাবা হাতে ফুল আঁকিয়ে দেবো? কথাটা শুনে অবাক হলাম, বললাম খাতায় এঁকে দিন। একটা খাতা বের করে দিতেই নিজের ভিক্ষার ঝুলি থেকে সাত থেকে আটটি বিভিন্ন রংয়ের কলম বের করলেন। অনায়াসে এঁকে যাচ্ছেন ফুলের সুন্দর নকঁশা। নিজের আঁকা ফুলের নকঁশায় বিভিন্ন রং দিলেও জীবনটা তার বিষাদ রংয়েই রঙিন।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সামনের মিডিয়া চত্বরে দেখা মিললো তার। নাম লোকমান হাকিম (৭২)। সত্তরোর্ধ্ব এ বৃদ্ধ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। বাম হাত আর ডান পা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নন্দাপুর গ্রামে। চার মেয়ে আর দুই ছেলের এক বড় সংসার। সহায় সম্বলহীন লোকমান হাকিম মরার উপর খরার মতোই এক ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন।

 

সংসার চলে কীভাবে জানতে চাইলে খানিকটা চুপ মেরে গেলেন। জানালেন, ছেলেদের সংসার আছে তবে তারাই চলতে পারে না। ব্যাগে সারাদিন পেন্সিলগুলো নিয়ে ঘুরে বেড়ান। তবে কখনো কখনো কাউকে ফুল এঁকে দিয়ে তুষ্ট করেন। পান কিছু বকশিস। উপায় না থেকে হাত পাততে হয় মানুষে কাছে। সারাদিন শেষে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয়। এভাবেই চলে সংসার।

 

Post MIddle

ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। তবে ইংরেজী, বাংলা ছাড়াও আরবিতে লিখতে পারেন। রুমাল, ওয়ালমেট এবং পোশাকে বিভিন্ন নকঁশা তুলতে পারেন। বৃদ্ধ বয়সেও এসব অসাধারণ প্রতিভা দেখে খুশি হয়ে সামান্য বকশিশ দেয় অনেকেই। কখনো বা ঘটকালি এবং কবিরাজি করেও দিন কাটে তার। শারিরীক অক্ষমতার কারণে ভারী কাজ করে সংসার চালানোর পথ নেই।

 

জীবনের বহু রং থাকলেও তার জীবনটা বিষাদ রংয়েই রঙিন। দুঃখ ভরা মন নিয়ে জনালেন, মানুষের দ্বারে হাত পাততে ভালো লাগে না। তবে উপায় নেই। অভাবে স্বভাব নষ্ট।

 

ক্যাম্পাস খোলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারেই ঘুরে বেড়ান। বেশিরভাগ সময়ই শিক্ষার্থীদের খাতায় ফুল এঁকে দেন। বৃদ্ধ বয়সের এ প্রতিভা দেখে খুশি হয়ে সামান্য বকশিস দেন তারা। এভাবেই চলে বৃদ্ধ লোকমান হাকিমের সংসার।

 

সংসার সাগরে সুখ-দুঃখের মেলা/ আসা তার একমাত্র ভেলা। আশাটা কী হয়তো সেটাই জানে না তিনি। তবে হয়তো জীবনটাকে নান রংয়ে রাঙানোর স্বপ্ন দেখে না। তার চোখে মুখে শুধু বেঁচে থাকার স্বপ্ন। দুবেলা ক্ষুধা মেটানোর স্বপ্ন।

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট