রোড টু জার্মানি ১ : জামার্নিতে উচ্চশিক্ষার আদ্যোপান্ত
জামার্নিতে এসেছি প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল। চোখের পলকে জীবনে একটা প্রত্যাশিত পরিবর্তন চলে এলো। আসার পথে বিমানে কয়েকবার কেঁদেছিলাম এই ভেবে যে “সবকিছু ফেলে আমি কোথায় চলে যাচ্ছি”! প্রিয় মানুষ, প্রিয় দেশ হতে ১০ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা অতটা সহজ নয়।এইখানে ঘুম ভাঙে পরীক্ষা-ল্যাব কিংবা অন্যান্য বহু টেনশনে, এইখানে মায়ের হাতের রান্না নেই, প্রিয় শহরের প্রাণবন্ততা নেই, টং-এর চা নেই, নেই ভাঙা রাস্তা আর গাড়ির ধোঁয়ার মাঝে একরাশ প্রশান্তি। এত নেই এর মাঝে শুধু আছে স্বপ্ন পূরণের তৃপ্তি। হয়ত এই তৃপ্তির জন্যই বর্তমানে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ আমার মত দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন!
স্বপ্ন হবে না কেন ? আমাদের দেশের মেধাবীরা যখন ছোট বেলা হতেই বুয়েট, মেডিক্যাল কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন লালন করে বড় হয় তখন আন্তর্জাতিক পরিসরে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থানও বেশ নাজুক। আন্তর্জাতিক Ranking-এ শীর্ষ ২০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও আমাদের স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠানগুলো নেই; আসলে এই Ranking দিয়ে কি বোঝায়? Ranking গুলো আসলে করা হয় মূলত বিশ্বদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক মৌলিক গবেষনা এবং এই গবেষনার ফলাফল বিশ্বের অগ্রগতিতে কেমন ভুমিকা রাখছে তার উপর। অতএব Ranking এটিই বলে দিচ্ছে বৈশ্বয়িক অগ্রগতিতে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুমিকা বেশ নাজুক। এছাড়া পাশ করার পর চাকুরির টেনশনে অধিকাংশ গ্র্যাজুয়েটের মাথার চুল পড়ে যায়। সবকিছু মিলিয়ে নিজের যোগ্যতা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহনযোগ্য পেশাগত দক্ষতা অর্জন, বিশ্ব সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী, দেশের কর্মক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া, সর্বোপরি নিজের জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদেশে পড়ে আসা বর্তমান ছাত্রদের অন্যতম প্রধান স্বপ্ন। তবে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে পারে না কারণ তারা মনে করে বিদেশে মাস্টার্স-পিএইচডি এইসব হলো অন্য গ্রহের এলিয়েন কিংবা অতীব মেধাবীর কাজ, ইহা তাদেরকে দিয়ে সম্ভব হবে না। কিন্তু ইহা সকলকে দিয়েই সম্ভব যদি ইচ্ছে এবং সঠিক দিকনির্দেশনায় অগ্রসর হওয়া যায়।
তবে যাব বললেই আসা যাবে না, প্রিয় মাতৃভুমি ছাড়ার আগে অনেক গুলো বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেমন, পছন্দের বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহনযোগ্যতা, স্কলারশীপ, টিউশন ফি, গবেষনার সুযোগ, ভবিষ্যত চাকরির বাজার ,জীবন যাত্রার খরচ, আবহাওয়া,(ছবি পাগলরা সুন্দর সুন্দর ছবি তোলার স্হানও বিবেচনা করে) ইত্যাদি। সবকিছু বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া ও ইউরোপ ছাত্রদের পছন্দের জায়গা। একেক দেশে একেক রকম সুযোগ সুবিধা কিংবা অসুবিধা আছে । যেমন আমার ক্যার্লিফোনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, USA তে প্রফেসর কনভিন্সড হয়েছিল ফান্ডিং সহ কিন্তু GRE দিতে হবে ভর্তির জন্য। আমি অলস প্রজাতির হওয়ায় এই পেইন নিতে পারি নি । আবার কানাডায় রিসার্চের সুযোগ হয়েছিল কিন্তু কবে নাগাদ আমাকে প্রফেসর নিতে পারবেন ঐটা নিশ্চিত করে বলতে পারছিলেন না। আমিও আর ধৈর্য্য ধরি নি জার্মানিতে সুযোগ পাওয়া মাত্র উড়াল দিলাম। তাই জার্মানিতে আসার বিভিন্ন দিক আমার অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরছি। সকল তথ্য ১০০% ধ্রুব নয়; স্হান, কাল , পাত্র ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে ।
আগামী পর্বে: জার্মানীতে পড়তে যাওয়ার যোগ্যতা
Rabiul H Chowdhury,Masters in Chemistry.Department of Chemistry and Biology.
University of Siegen.Siegen, Germany.