মানবিকতার শক্তি সৃষ্টির প্রত্যয়ে বাংলা নববর্ষের সূচনা

picture-1 (14-4-2016)‘মা ও শিশু’কে চেতনায় ধারণ করে “অন্তর মম বিকশিত কর অন্তর তর হে” এই প্রতিপাদ্যকে সামনের রেখে নববর্ষ আবাহনের বর্ণময় আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। গতকাল ১৪ এপ্রিল ২০১৬ (১লা বৈশাখ ১৪২৩) বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে উপাচার্যের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সম্মিলনে শাহবাগ মোড় হয়ে হোটেল রূপসী বাংলা থেকে টিএসসি হয়ে চারুকলায় এসে শোভাযাত্রা শেষ হয়।

 

‘মা ও শিশু’র প্রতীকী কাঠামো উপস্থাপনায় মঙ্গল শোভাযাত্রায় সামাজিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রায় এনে দিয়েছে; প্রকাশিত হয়েছে বিকশিত মনের চেতনাবোধের। শোভাযাত্রায় প্রতিটি কাঠামো একেকটা মোটিভ ধারণ করে বাঙালি সংস্কৃতির শক্তিকে উদ্ভাসিত করেছে। অসংখ্য মুখোশ, ঢোল, ডুগডুগি, একতারা আর বাঁশির সূর মূর্ছনায় বিশ্ববিদ্যালয় নতুন তাৎপর্যে মানবিকতার উন্নয়নে পারিবারিক আবহে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে সূচনা করেছে ১৪২৩ বাংলা সনের।

 

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মঙ্গল শোভাযাত্রা উদ্বোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা জানান। উপাচার্য সকলের মঙ্গল কামনা করে বলেন, মা ও শিশুর মঙ্গল কামনার অর্থ হচ্ছে বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশবাসীর মঙ্গল কামনা করে মানবিকতার শক্তি দিয়ে দেশ ও সমাজের অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করে বিকশিত অন্তরের প্রত্যাশা জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, সমাজ ও পরিবার সর্বোপরি বাঙালি জাতির ঐক্যের অবস্থান হচ্ছে আজকের এই পহেলা বৈশাখ। পুরাতন জরাজীর্ণতা দূর করে নতুনের আবাহন-ই হচ্ছে বর্ষবরণের শিক্ষা। শিশুদের কথা মনে রাখতে হবে। শিশুরা পৃথিবীর নেতৃত্ব দিবে, শিশুদের জন্য পৃথিবী নিরাপদ করতে হবে। দেশ, সমাজ ও পরিবারে তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। মায়েদের ভূমিকা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারিক বন্ধন, শিশু ও নারীর প্রতি সংবেদনশীল মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রেরণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই আজকের মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

Post MIddle

picture-2 (14-4-2016)
সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় সংগীত বিভাগের সংগীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনের কর্মসূচী। উপাচার্য এতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন। সকলকে শুভেচ্ছা জানান এবং দিনের তাৎপর্য তুলে ধরেন। এরপর বাংলা বিভাগ ও বাংলা অ্যালামনাইয়ের উদ্যোগে আয়োজিত কলাভবন প্রাঙ্গণে সকালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন উপাচার্য। অনুষ্ঠানে এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানসহ বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সকল শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিভাগের শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের উদ্যোগে নাট-ম-ল প্রাঙ্গণে বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় পট-গান ও দেশের গান। বিভাগের চেয়ারম্যান সুদীপ চক্রবর্তী সকলকে শূভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন।

 

সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও নন্দন চত্বরের উদ্বোধন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সম্পাদক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ বি এম শহিদুল ইসলাম। উপাচার্য উদ্বোধন করেন ক্লাব প্রাঙ্গণের দৃষ্টিনন্দন চত্বরের। পরিশেষে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

এছাড়া,বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোরদের নিয়ে নববর্ষের অনুষ্ঠান। মলচত্বর এলাকায় ছিল দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আরও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। বিভিন্ন হল আয়োজন করে বিশেষ প্রীতি ভোজের।

 

picture-3 (14-4-2016)

পছন্দের আরো পোস্ট