স্কুল ব্যাংকিং হিসাব ১০ লাখ ছাড়িয়েছে

20151101014926স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও সঞ্চয়ী হয়ে উঠছে। সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তুলতে স্কুলে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম। বর্তমানে ১০ লাখ ছাড়িয়েছে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব। ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসা শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি সুদহার পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ সালে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। ওই বছরে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা ব্যাংকগুলোয় ৩০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আমানত রাখে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে খুদে সঞ্চয়ীদের ব্যাংকে জমা পড়ে ৮৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। স্কুল ব্যাংকিং যাত্রা শুরুর প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০ শিক্ষার্থী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৪টি।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশ স্কুলের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতেই স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম দিকে কিছুটা কম থাকলেও ক্রমান্বয়ে এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হওয়ার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ব্যাংকে হিসাব খুলেছে। তাদের সঞ্চয়ের পরিমাণ ৮৫০ কোটি টাকা। সামনের দিনে এ হিসাব খোলার প্রবণতা আরও বাড়বে।

 

Post MIddle

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুন শেষে খুদে শিক্ষার্থীর হিসাবের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৫২ হাজার। আর সঞ্চয় ছিল প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। আর ডিসেম্বরে ১০ লাখের বেশি হিসাবের মধ্যে পল্লী শাখায় ৩ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৭টি এবং শহরে ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৭টি হিসাব খোলা হয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে এ হিসাব খোলা ও জমার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আলোচ্য সময়ে বেসরকারি ব্যাংকের ৬ লাখ ৭ হাজার ৫৭৭টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৭৪৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ সময়ে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের ৩ লাখ ৩ হাজার ৮৬টি হিসাবে ৮৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, বিশেষায়িত ব্যাংকে ১ লাখ ২২ হাজার ৬৬০টি অ্যাকাউন্টে ১৪ কোটি ৪ লাখ ও বিদেশি ব্যাংকে (সিটি ব্যাংক এন এ ব্যতিত) ১ হাজার ৬৩১টি হিসাবে ২ কোটি ৮১ লাখ টাকা জমা রয়েছে। প্রথম দিকে, এসব হিসাবের বিপরীতে কম সুদহার দেয়া হতো বলে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হলেও অনেক অভিভাবক এ বিষয়ে আগ্রহী হতেন না। তাই পরবর্তী সময়ে এর সুদহার সর্বোচ্চ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাব সংখ্যা এবং টাকা জমার স্থিতি হিসেবে আলাদা করে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ করেছে।

 

তালিকায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯০টি, যা মোট হিসাবের ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। এরপর অগ্রণী ব্যাংকের ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৩৫টি হিসাব রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ডাচ্-বাংলা ৯৮ হাজার ৩২৮, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৯৬ হাজার ৩১৭ এবং উত্তরা ব্যাংকে ৭৩ হাজার ৫৪৫টি হিসাব রয়েছে। অন্যদিকে, টাকা জমার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ২৬২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা মোট স্থিতির ৩১ দশমিক ০৯ শতাংশ। এরপর ইসলামী ব্যাংকে ৮৭ কোটি ৪৪ লাখ, ইস্টার্ন ব্যাংকে ৭৭ কোটি ৯১ লাখ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৬৬ কোটি ৭৭ লাখ এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৩৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার স্থিতি রয়েছে।

 

জানা গেছে, ২০১০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিংয়ে নিয়মাবলী জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল সঞ্চয়ের মাধ্যমে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অংশ নেয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া। শুরুতে ১০ টাকা দিয়ে হিসাব খোলা হলেও পরে এ হিসাব খুলতে ১০০ টাকা জমা রাখতে বলা হয়। এসব হিসাব সাধারণ চলতি হিসাবেও রূপান্তরের সুযোগ আছে। কোনো কোনো ব্যাংক আলাদা কাউন্টার বা ডেস্ক খুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য এখন এ সেবা দিচ্ছে। এমনকি ব্যাংকগুলো কোনো এক নির্ধারিত দিনে স্কুলে গিয়েও শিক্ষার্থীদের হিসাব খুলে দিচ্ছে। উদ্বুদ্ধ করতে ক্যাম্পেইন করেছে রাজধানীর বেশ কিছু স্কুল ও বেসরকারি ব্যাংক। ‘ইয়ং স্টার’ ‘ফিউচার স্টার’, ‘প্রজন্ম স্টার’সহ ইত্যাদি উদ্দীপনাসূচক নামে ব্যাংকগুলো চালু করে আকর্ষণীয় স্কিম।#

 

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট