জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ অধ্যক্ষদের মতবিনিময়

 

????????????????????????????????????
শুক্রবার (০১-৪-২০১৬) শুক্রবার বিকেল ৩ টায় চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ অডিটরিয়ামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত চট্টগ্রাম বিভাগের সকল কলেজ অধ্যক্ষদের সঙ্গে ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন ব্যবস্থা ও শিক্ষার মানোন্নয়ন’ বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

 

সভাপতির ভাষণে উপাচার্য বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু দেশের বৃহত্তম বিশ্বদ্যিালয় নয়, সমগ্র বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। অধিভুক্ত কলেজসমূহের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২১ লক্ষ শিক্ষার্থী বা দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রের শতকরা ৭০ ভাগ ছাত্র/ছাত্রী লেখাপড়া করছে। শিক্ষক সংখ্যা ৬০ হাজারের উর্দ্ধে। অধিভুক্ত কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ২ শত। গতানুগতিক পদ্ধতিতে গাজীপুর ক্যাম্পাস থেকে সাড়া দেশব্যাপী বিস্তৃত এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছুতেই সুষ্ঠুভাবে পরিচালন করা সম্ভব নয়।

 

অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেশনজটে নিমজ্জিত। ৩ বছর পূর্বে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে তথ্য-প্রযুক্তি অবলম্বন ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজাতে সহকর্মীদের নিয়ে উদ্যোগী হই। আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভবত: দেশের ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেটি প্রায় শতভাগ আইটি নির্ভর। একমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েই ই-ফাইলিং চালু হয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের সমূদয় কর্মকর্তা এখন অন-লাইনে পরিচালিত হচ্ছে। ৬টি আঞ্চলিক কেন্দ্রকে ক্রিয়াশীল করা হয়েছে। ত

 

ড়িৎ সেবাদানের লক্ষ্যে অনস্টপ সার্ভিস সেন্টার ও কলসেন্টার-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিজ জায়গায় বসেই সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ তাদের একাউন্টে পরীক্ষার সম্মানি পাচ্ছেন। পূর্বের ন্যায় এখন আর অধিকাংশ কাজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বশরীরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাসে আসতে হচ্ছে না। আর দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সেশনজটকে এক নম্বর চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত করে এ থেকে শিক্ষার্থীদের পরিত্রান দেয়ার লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ নামে বিশেষ পদক্ষেপ। ফলে অনেক শিক্ষার্থী সেশনজট থেকে ইতোমধ্যে বের হতে সক্ষম হয়েছে। এ

 

প্রোগ্রাম অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যভাগ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পর্যায়ে আর সেশনজট থাকবে না। সে সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হবে সম্পূর্ণ সেশনজটমুক্ত। সেশনজটের পর এখন আমাদের সামনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে, কলেজ শিক্ষার মানোন্নয়ন। এটি নি:সন্দেহে সহজসাধ্য বিষয় নয়। তবে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দেশের উচ্চশিক্ষার শতকরা ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী যুক্ত, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহের শিক্ষার মানোন্নয়ন ব্যতীত জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে খুব বেশী দূর অগ্রসর হওয়া যে সম্ভব নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

 

Post MIddle

তথ্য-প্রযক্তির ব্যবহার, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তকের ব্যবস্থা, ল্যাব-এর সুযোগ সৃষ্টি, পরীক্ষা হল নির্মাণ, শিক্ষকদের অধিকতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, নিবিড় মনিটরিং ইত্যাদির মাধ্যমে সারা দেশের কলেজ শিক্ষার মানোন্নয়নে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োজিত করতে হবে।

 

পরিকল্পনা রয়েছে সব কলেজে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা। তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানে সম্পৃদ্ধ মানসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েটস ব্যতীত বিশ্বয়নের এই যুগে কোনো জাতির পক্ষে উন্নয়ন ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। এসব দিক বিবেচনা করে বিশ্ব ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ‘কলেজ এডুকেশন ডেভলোপমেন্ট প্রজেক্ট’ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা যায়, কয়েক মাসের মধ্যে এর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ চাহিদা, জাতীয় উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার দিক বিবেচনায় রেখে আমাদের নতুন নতুন বিষয়ে বিভাগ খোলা বা শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

 

সম্প্রতি আমরা ‘ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট’ ও ‘এ্যারোনটিকস এন্ড এভিয়েশন সায়েন্স’ বিষয়ে কলেজ পর্যায়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচী যুগোপযোগী করা হয়েছে, যা বলা যায় এখন আন্তর্জাতিক মানের। আমাদের নতুন প্রজন্ম যাতে করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার ইতিহাস এবং জাতির জনকের নেতৃত্ব, আদর্শ ও বাঙালির জাতীয় মুক্তির জন্য তাঁর জীবন-সংগ্রাম সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে, সে লক্ষ্যে আমরা ২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক ও স্নাতক সম্মানের সকল শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ অবশ্য পাঠ্য বিষয় করেছি।

 

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমার্বতন অনুষ্ঠিত হবে। আমি জানি, ক্রাশ প্রোগ্রামসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গৃহীত অন্যান্য কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আপনারা যারা কলেজে শিক্ষাদানে নিয়োজিত আছেন, সরকারি ছুটি ভোগসহ আপনাদের অনেক কিছু পরিত্যাগ করতে হচ্ছে। দেশ-জাতি ও লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী-সন্তানের কথা বিবেচনা করে আর মাত্র দু‘টি বছর এ ত্যাগ করতে হবে। আমি এও জানি যে, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করতে গিয়ে এ পর্যায়ে আমাদের কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সবকিছু শুন্য থেকেই শুরু করতে হয়েছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে এসব সমস্যাও আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। এক্ষেত্রে আমি আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি।”

 

সভায় বিভিন্ন কলেজের তিন শতাধিক অধ্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্য থেকে ৩০ জন অধ্যক্ষ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের বক্তব্যে বিভিন্ন সুপারিশ ও অভিমত ব্যক্ত করেন। এদের মধ্যে অধ্যক্ষ প্রফেসর আইয়ুব ভূইয়া, অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ, অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবু সালেহ সেলিম, অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল ওয়াহাব, অধ্যক্ষ প্রফেসর অঞ্চন কুমার নন্দী, অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী, অধ্যক্ষ মতিন মিয়া, অধ্যক্ষ মো. আমজাদ আলী, অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম, অধ্যক্ষ রফিক উদ্দিন, অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ দেওয়ান, অধ্যক্ষ এ কে এম গিয়াসউদ্দিন, অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার, অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন, অধ্যক্ষ মেজর মো. আসাদুজ্জামান, অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। স

 

ভার শুরুতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার শাখা প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন ব্যবস্থা স্বচ্ছ, জবাবদিহি ও গতিশীল করতে বিভিন্ন সফ্টওয়ার তৈরিসহ এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে তা অধ্যক্ষবৃন্দের সম্মূখে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে উপাচার্য ছাড়াও, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোঃ আসলাম ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ নোমান উর রশীদ, রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন, আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক আবুল কাশেম ও আইসিটি পরিচালক মো. মুমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।##

 

লেখাপড়া২৪.কম/এমএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট