লন্ডনে তনু হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন
লন্ডন ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর জাস্টিস এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়া কমিউনিটি ইউকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন না থাকার করণে তনুরা বর্বর হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে। একটি হত্যাকান্ডেরও সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার কারণে হত্যাকারী ও ধর্ষণকারীরা বারবার একই ধরনের অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে । রাষ্ট্র এই দায় থেকে মুক্তি পেতে পারেনা । দেশের সরকারের উচিত জনগণের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু বর্তমান সরকার তা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে । গতকাল শুক্রবার লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গগণ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবিসহ বিভিন্ন পেশাজীবির মানুষ বক্তৃতাকালে এইসব কথা বলেন।
ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর জাস্টিসের চেয়ারম্যান এম সাঈদ বাকির পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ, প্রবীন সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন, ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশের প্রতিনিধি সাংবাদিক আতাউল্লাহ ফারুক, ব্যারিস্টার বদরে আলম দিদার, ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর জাস্টিসের ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক মাহবুব আলী খানশূর , সাংবাদিক নূরে আলম বরষণ, চ্যানেল২৪ এর সাংবাদিক আশিক মাহমুদ, সলিসিটর আব্দুল হালিম সরকার, ছাত্রনেতা আশফাকুল মাওলা প্রোটন , মানবাধিকার কর্মী আব্দুর রউফ রুবেল, সাংবাদিক তৌহিদুল করিম মুজাহিদুল, সাংবাদিক আমিমুল ইসলাম তামিম, মাওলানা শামিম আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কমিউনিটি ইউকে’র সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক জামিল ভূইঁয়া, মুহম্মদ সেলিম, বিপিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্রী রওনক নিশাত নদী, ব্যারিস্টার আব্বাস ইসলাম খান নোমান, সাজ্জাদুল ইসলাম , গণমাধ্যম কর্মী এম এ সাত্তার মিশু প্রমুখ।
ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ বলেন, আমি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর জাস্টিস এর দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করছি এবং বাংলাদেশের আনাচে -কানাচে সকল অজানা তনুদের হত্যার বিচারের দাবি করছি। তনু আজকের রক্তাক্ত বাংলাদেশের একটি চিত্র । সারা দেশে অসংখ্য তনুদের হত্যা করা হচ্ছে কিন্তু বিচার হচ্ছে না ।
প্রবীন সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন বলেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণপূর্বক হত্যার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। কয়েক বছর আগে ভারতে দামিনী নামক একটি মেয়ে এমন ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। ভারত সরকার ওই হত্যাকান্ডের উপযুক্ত বিচার করেছিল, কিন্তু বর্তমান সরকার এইসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ কেন ? সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্যে আহব্বান জানান, আরো বলেন, আমরা কোনো সরকারের বিরুদ্ধে না, রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে না, আমরা জাস্টিস এর পক্ষে।
ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ বলেন, শুধু মাত্র বিবেকের তাড়নায় আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি, বাংলাদেশের সংবিধানের তিন ভাগের এক ভাগ মানবাধিকার সম্পর্কে, এগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে। আইন বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে বারবার বাংলাদেশে মানবাধকিার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।
সাংবাদিক আতাউল্লাহ ফারুক বলেন, রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন জনগনের জন্যে ,তনুর ব্যাপারে রাজনীতিবিদরা চুপ কেন ? তিনি সবাই কে এক সাথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহব্বান জানান। বাংলাদেশে মানবাধকিার লঙ্ঘন চরম আকার ধারণ করছে। এইভাবে একটি সভ্য সমাজ চলতে পারেনা।
মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার বদরে আলম দিদার বলেন, বাংলাদেশের মেইন স্টিম মিডিয়া এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ভূমিকা রহস্য জনক এবং প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা আজ দল মত, ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে সকলের ঐক্যবদ্ধ হয়েছি তনুর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য । বাংলাদেশে গত ৬ বছরে ২৫০০০ হাজার আমার সম্মানিত মা বোনরা ধর্ষণ হয়েছে , এসবের বিচার হচ্ছে না কেন?। তনু আমার বোন আজ আমি তনুসহ সকল নির্যাতিত মা বোনদের ন্যায় বিচার দাবি করছি।
ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর জাস্টিসের ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক মাহবুব আলী খানশূর এক আবেগঘন বক্তব্যে সমাজে নারী জাতি কতটা অবহেলিত তা তুলে ধরে তাদের সুষ্ঠু নিরাপত্তার দাবি করেন সরকারের কাছে।
সাংবাদিক নূরে আলম বরষণ বলেন, বহু কষ্টের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে।কিন্তু বর্তমানে দেশে মানুষের স্বাভাবিক ভাবে চলা -ফেরা করার স্বাধীনতা নেই। মানবাধিকার লঙ্ঘন চরম আকার ধারণ করেছে।
চ্যানেল২৪ এর সাংবাদিক আশিক মাহমুদ বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার ঘাটতির কারণে সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে । এবং ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে আহব্বান করেন। বর্তমান সময়ে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে অনেকাংশে দায়ী।
সলিসিটার আব্দুল হালিম সরকার বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নিশ্চুপ থাকায় আমরা অবাক হয়েছি !। সারা দেশে যেভাবে দিন দিন নারী- শিশু নির্যাতন বেড়েই যাচ্ছে তাতে জনগনের জীবন অনিরাপদ হয়ে উটছে।
ছাত্রনেতা আশফাক মাওলা প্রোটন বলেন, আমরা এখানে দাড়িয়েছি বিবেকের তাড়নায় , বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নৈতিক অবক্ষয়, নৈতিক অবক্ষয় রোধ না করতে পারলে সুন্দর সমাজ গঠন করা সম্ভব না এবং এই হত্যাকান্ডের সুষ্টু তদন্ত দাবি করেন।
মানবাধিকার কর্মী আব্দুর রউফ রুবেল বলেন, সরকার এই সব নির্যাতন দমনে সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে এই সব ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। বরং বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার নিয়ে প্রহসন চলছে। রাষ্ট্রের মন্ত্রীরা তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে লাঞ্ছনাকারীদের মদদ দিয়েছে, পৃষ্ঠপোষকতা দান করছে। তাই তনুরা বারবার নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করছে।
ইউনিভার্সাল ভয়েস এর সেক্রেটারি সাজ্জাদুল ইসলাম – তিনি মানব বন্ধনে অংশ গ্রহণ কারীদের ধন্যবাদ জানান এবং আর কোনো বোন্ যেন তনুর মত ধর্ষণের শিকার না হয় সে দিকে সবাইকে গনসচেনতা বৃদ্ধির আহব্বান জানান।
সমাপনী বক্তব্যে ইউনভার্সাল ভয়সের চেয়ারম্যান এম সাঈদ বাকি বলনে -” আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে মানবাধকিার লঙ্ঘন চরম আকার ধারণ করছে। দল-মত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশাজীবির মানুষ মানববন্ধন অংশ নেনেয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানায় । মানব বন্ধনে সবার মুখে একটি কথাই প্রতিধ্বনিত হতে থাকে – আমরা সবাই তনু’র ভাই , তনু হত্যার বিচার চাই। ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর জাস্টিস মনে করে , চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত দু‘একটি হত্যার বিচার না করে সব হত্যা মামলার সুষ্ঠু বিচার হলেই রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এভাবেই সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রত্যাশা করা যায়।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রাত সাড়ে ৭টায় টিউশন শেষে বাসায় ফেরার পথে সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণপূর্বক নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর ময়নামতি সেনানিবাসের অলিপুর এলাকায় একটি কালভার্টের কাছ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।#
আরএইচ
…