সেশনজটে চবির সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা

Exif_JPEG_420

শিক্ষকদের অন্তর্কোন্দল, ক্লাস রুমের সংকট, দায়িত্বরত শিক্ষকদের ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা, শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন, রুটিন মাফিক ক্লাস চালু না করা, বিভাগের সেমিনার খুলে না দেয়া এবং ফলাফল প্রকাশে বিলম্বের কারণে তীব্র সেশনজোটে গ্যাড়াকলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

 

বেশ কিছুদিন ধরে বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে বিভাগের সভাপতির সাথে কথা বলতে চাইলেও তাদের কোন প্রকার আশ্বাস বা আলোচনা না করায় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় বিভাগের সভাপতিকে নিজ কক্ষের ভেতরে অবস্থানরত অবস্থায় কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ১ ঘন্টারও অধিক সময় অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় শিক্ষার্থীরা সেশনজট নিরসনসহ বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুরোধে তারা বিভাগের সভাপতির কক্ষের তালা খুলে দেয়।

 

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে পালি ও সংস্কৃতি বিভাগ একসাথে যাত্রা শুরু করলেও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়কার দাবির সাথে সম্মতি প্রদান করে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি সংস্কৃতি বিভাগ আলাদা হয়ে যাত্রা শুরু করে। এর পর ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন প্রফেসর ড. শান্তি রানী হাওলাদার। তিনি দায়িত্ব থেকে অবসরে যাওয়ার পর দায়িত্ব অর্পন করা হয় প্রফেসর ড. সুপ্তিকনা মজুমদারকে। তিনি ২১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই সাবেক চেয়ারম্যানের সাথে একাধিকবার পূর্বের হিসাবপত্র,অফিস বিবরনী,তথ্য সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইলেও আজ কোন প্রকার কাগজপত্র অফিসে না থাকায় এবং রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠিপত্র দিয়েও কোন সাড়া না পাওয়ার ফলে আপাতদৃষ্টিতে কোন প্রকার দায়িত্ব গ্রহন করতে পারেননি। এছাড়াও পালি ও সংস্কৃতি বিভাগ একসাথে থাকা অবস্থায় একটি সেমিনার ব্যবহার করা হলেও তিন বছরের অধিক সময় পার হয়ে গলেও আজও সংস্কৃতি বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত সেমিনারে কর্মচারি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ২০১১-১২ থেকে ২০১৫-১৫ পর্যন্ত আটটি সেশনের জন্য ক্লাস রুম রয়েছে দুটি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৫৮ জন শিক্ষার্থী থাকলেও সিট সংখ্যা রয়েছে ৩৮ টি।

 

যথাযথ সময়ে ফলাপল প্রকাশ না করায় প্রথম বর্ষে এখন রয়েছে তিনটি সেশন। তাছাড়া ১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের গত নভেম্বর পরীক্ষা শেষ হলেও নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু হতে সময় লেগেছে চার মাসেরও অধিক সময়। এছাড়াও আটটি শিক্ষাবর্ষের কোনটির ফলাফল আজও প্রকাশ করতে পারেনি বিভাগ।

 

এত সব সমস্যার মাঝেও শিক্ষকদের অন্তর্কোন্দল ও নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া এবং আজও পর্যন্ত কোন শিক্ষাবর্ষের জন্য রুটিন মাফিক ক্লান প্রণয়ন করতে না পারার দরুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দেয়। এর মধ্যে মাঝে মাঝে শিক্ষকরা ক্লাস নিলেও তাতে রয়েছে চোখ রাঙ্গানো সহ আশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি।

 

Post MIddle

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, আমাদের সেমিনার কক্ষ সব সময় বন্ধ রাখা হয়। আমরা শিক্ষকদের সেশনজোট নিয়ে কোন কথা বলতে গেলে শিক্ষকরা আমাদের ক্লাস রুমে নানা কথা বলে শাসিয়ে দেন। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের রুটিন মাফিক কোন ক্লাস নেয়া হয়না। দুটি ক্লাস রুমে আমাদের ক্লাস করতে হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. সুপ্তিকনা মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়গুলো নিয়ে একজন শিক্ষার্থী আমার কাছে আসে। এর কিছুক্ষন পর কয়েকজন শিক্ষার্থী স্লোগান দিয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

 

এতদিনের মধ্যে দায়িত্ব গ্রহন করতে না পারার বিষয়ে তিনি বলেন, এর আগে যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি আজও আমায় কোন প্রকার হিসাব বিবরনী সহ কোন প্রকার কাগজপত্র বুঝিয়ে না দেয়ায় কোন প্রকার একাডেমিক কাজ করতে পারছিনা।

 

ফলাফল প্রকাশে ধীরগতি ও ক্লাস রুম সংকট ও রুটিন মাফিক ক্লাস প্রণয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, আগের কোন হিসাব আমার কাছে না আসলে নতুন এবং এত অল্প সময়ের মাঝে ক্লাস রুটিন করা সম্ভব নয়। এছাড়াও শিক্ষকদের অন্তর্কোন্দল বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

 

এদিকে বিভাগের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. শান্তি রানী হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার থেকে প্রথমেই হিসাব বিবরনী চাওয়া হয়েছে। আমি দিবনা তা বলি নাই। কিছুদিনের মধ্যে সব হিসাব জমা দিতে পারবো।#

 

 

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট