সময়োপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা
ময়মনসিংহ জেলা ও তার পাশ্ববর্তী জেলার সাধারন মানুষের স্বপ্ন বুননের হাতিয়ার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববদ্যালয়। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আয়তনে ছোট পরিসরের হলেও এখানকার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ গুলোর মধ্যে এটি একটি। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নানা ইতিবাচক ও নেতিবাচক ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই প্রাণের ক্যাম্পাস জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। সবুজে ঘেরা ৪২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই ছোট্ট ক্যাম্পাসটিতে অফুরন্ত প্রাণের মেলায় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলেমিশে সবাই একাকার। এই সুন্দর মনোরম পরিবেশে আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি প্রেম,দ্রোহ,সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে। যার নামে আজ আমাদের এই প্রিয় বিদ্যাপীঠ দেশের বুকে তথা বিশ্বের কাছে জাতীয় কবির একটি নামফলক হিসেবে মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ বছরের পথচলা অগণিত সাফল্যে ভরপুর। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত অসংখ্য দুর্ঘটনায়ও জর্জরিত। সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ইতিবাচক অর্জনের মধ্যে নতুন এই বছরের উজ্জ্বল অর্জন, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগীতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরষ্কার জিতে সেরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে উল্লেখ করার মত। এবং সম্প্রতি নতুন এই বিভাগগুলো যেমনঃ ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, ফকলোর বিভাগ, এনভায়ার্নমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলোর আগমনে তথা প্রযুক্তি এবং তথ্য নির্ভর আধুনিক পাঠদানের আরেক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে।
এছাড়াও শিক্ষাদানের মৌলিক ও ব্যবহারিক গুণাগুণ বর্ধনের জন্য শিক্ষকদের দেশ ও বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগও করে দিচ্ছে বিস্তর। শিক্ষকদের পাশাপাশি মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই বর্তমানে নিজ ক্যাম্পাসে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সুযোগও পাচ্ছে।
এসব সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদানে প্রত্যয়ী করে গড়ে তুলতে বিভাগীয়, অবকাঠামোগত, আবাসন, পরিবহন উন্নয়নের পাশাপাশি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে আরো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে তৎপর অতিব জরুরী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে আধুনিক ও মানসম্মত বই-পুস্তকের সমাগম ঘটাতে হবে দক্ষ মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরী করতে। গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলোর জন্য উন্নত ল্যাব এবং অনলাইন প্রকাশনা সহ ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আরো সুযোগ বৃদ্ধি করে যুগোপযোগী করে গড়তে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের উৎসাহী করে কর্ম চঞ্চল করে তুলতে হবে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দ্রুত গতির ওয়াই-ফাই চালিত ইন্টারনেট সুবিধার ব্যবস্থা করে দিতে হবে যাতে করে আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতির দ্বারা নিজেদের কে আরো আধুনিক করে তোলার সুযোগ তৈরী করতে পারে।
ছাত্র-ছাত্রীদের বিষয়গত জ্ঞানার্জনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকভাবে আন্তরিক করে তুলতে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসিক হল (বাসস্থান) তৈরী করতে হবে এতে করে ময়মনসিংহ ত্রিশালে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের দূরত্বটুকু অনেক নিকটবর্তী ও যোগাযোগ নির্ভর করে তুলতে এবং আমাদের এই প্রাণের ক্যাম্পাসকে চাঞ্চল্যে ও তারুণ্যে নির্ভর করে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও একসঙ্গে থাকার মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কোন্নয়ন ও তাদের নিকটবর্তী করে বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলতে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করবে ।
এসব কাংখিত উন্নয়নের পাশাপাশি আসংখ্য হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনাও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন কে করছে নির্লিপ্ত । এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তারণ্যে এবং আনন্দঘন মূহুর্তে অনাকাংখিত দুর্ঘটনাগুলো একেবারেই বেমানান। তারপরও আমাদের জানা দরকার আসলে দুর্বলতা কোথায়…? কোন কোন নেতিবাচিক দিকগুলো আমাদের পরাজয় ডেকে আনছে…!
অন্যদিকে জানা যায়, শুধু রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে কিছু ছাত্র-শিক্ষক সুবিধাভোগী হয়ে উঠেছে এবং একই কাজে নতুনদেরও প্ররোচিত করছে। সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অনেকেই এমনটি ভাবা শুরু করেছে যে, রাজনীতি ও রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া কোন কিছু হয় না । অর্থাৎ একাডেমিক কর্মকান্ডে করো বা না করো রাজনৈতিক পরিচয় অটুট থাকলে সব হবে।
শুধু এই কারণে শিক্ষক সহ ছাত্র সমাজ নানা খণ্ডে বিভক্ত হতে চলেছে আর এই বিভক্তির সুযোগেই স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতির অনুপ্রবেশের রাস্তাটা সহজ করে দিতে পারে । যা পরবর্তীতে জন্ম দিতে পারে অসংখ্য অপ্রতাশিত ও অনাকাংখিত ঘটনা । আর এরই মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্ম মেধায় ও মননের কতটুকু প্রয়োগ করতে পারবে তা প্রশ্ন থেকে যায়? তাই একমাত্র শিক্ষকরাই পারেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সহায়ক শক্তি হতে। একজন শিক্ষকের ক্ষণিক বন্ধুসুলভ আচরণ অনেক ছাত্র ছাত্রীর জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে ।
আর তাই এখানকার প্রতিটি শিক্ষার্থী আশাবাদী যে, আমাদের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকরাই শিক্ষা ও নতুন নতুন গবেষণায়, সৃষ্টিশীলতায় যৌথ অবদানের মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কে পরিচিত করে তুলবে । এবং সবাই একত্রে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ ও জাতির জন্য কাজ করে যাবো।
৩য় বর্ষ, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালন বিদ্যা বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ত্রিশাল, ময়মনসিংহ। মোবাইল: ০১৯৫২৮৮২৬৫৯