প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর পরিচিতি

03অর্থের অভাবে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত দরিদ্র, মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার নিমিত্তে দেশের সকল স্কুল/কলেজ/মাদ্রাসা/বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের জন্য একটি ‘ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০/৪/২০১০ তারিখে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে একটি লিখিত নির্দেশনা প্রদান করেন। এ ফান্ড গঠনের সম্ভাব্যতা পরীক্ষাপূর্বক প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ১৪ সদস্য-বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৭/৮/২০১০ তারিখের প্রজ্ঞাপনে মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে আহ্বায়ক করে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ০৯/৮/২০১০ তারিখের সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন)-কে আহ্বায়ক করে একটি টেকনিক্যাল উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর সভাপতিত্বে ০৫ (পাঁচ)টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩১/০১/২০১১ তারিখের পত্রে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন সম্পর্কিত প্রতিবেদন, নীতিমালা ও আইনের খসড়া পরিকল্পনা কমিশনে পেশ করা হয়।

 

পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্বাহী সার-সংক্ষেপের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট পেশ করা হয়। ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড আইন, ২০১১’ প্রণয়নের জন্য মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী ০৬/৩/২০১১ তারিখে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বরাবরে একটি আধা সরকারি পত্র প্রেরণ করেন। মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী “প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড আইন, ২০১১” এর খসড়া প্রণয়ন করে Rules of Business, ১৯৯৬ এবং সচিবালয় নির্দেশমালা, ২০০৮ এর বিধান অনুযায়ী উক্ত ট্রাস্ট ফান্ড সংক্রান্ত প্রণীত খসড়া আইনটি ১২/০৯/২০১১ তারিখের মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়।

 

বর্ণিত অবস্থায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রণীত ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১১’ গত ১২/১২/২০১১ তারিখে মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। ১১ মার্চ, ২০১২ তারিখে নবম জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে “প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট বিল, ২০১২” পাস হয়। সংবিধানের ৮০(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ১৪ মার্চ, ২০১২ তারিখে উক্ত বিলে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং ঐ তারিখেই ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১২’ বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ট্রাস্ট আইনের ৩(১) উপ-ধারার বিধান অনুযায়ী “প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট” নামে একটি ‘ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়েছে।

 

এ আইনের ৭(১) উপ-ধারার বিধান অনুযায়ী ০৫ (পাঁচ) সদস্য-বিশিষ্ট ট্রাস্টের একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অথবা তদ্কর্তৃক মনোনীত অন্য কোন মন্ত্রী, যিনি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান। এ আইনের ৮(১) উপ-ধারা অনুযায়ী   ২৩ (তেইশ) সদস্য-বিশিষ্ট একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি। ঢাকার ধানমন্ডিস্থ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেন্টারের ২য় তলায় ইতোমধ্যে ট্রাষ্টের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর জন্য রাজস্ব খাতে ৭৪টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব ০৫/১১/১২ তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। এর আলোকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ০৩/০১/১৩ তারিখের পত্রে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর জন্য বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে ৪৪টি পদ সৃজনে সম্মতি প্রদান করে। এর ধারাবাহিকতায় ২৩/০১/১৩ তারিখে উক্ত ৪৪টি পদ সৃজনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চাওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ৩১/০৩/১৩ তারিখের পত্রে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর জন্য শর্ত সাপেক্ষে রাজস্ব খাতে ৩২টি পদ অস্থায়ীভাবে সৃষ্টিতে সম্মতি জ্ঞাপন করে। পরবর্তীতে ১৪/০৫/১৩ তারিখে উক্ত ৩২টি পদের বেতন স্কেল যাচাই/ভেটিং শেষ হয়। ১২/৮/২০১৩ তারিখে জনপ্রশাসন সংক্রান্ত প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির ২০তম সভায় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর উক্ত ৩২টি পদ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর বিভিন্ন ক্যাটাগরীর ৩২টি পদের জিও (অফিস আদেশ) জারী করা হয়েছে, যা অর্থ বিভাগ থেকে পৃষ্ঠাংকন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরি প্রবিধানমালা, ২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ গেজেট জুন ২৬, ২০১৪ তারিখে প্রকাশিত হয়।

 

এ আইনের ১২(৫) উপ-ধারার বিধান অনুযায়ী সরকারি খাত ছাড়াও নয়টি খাত থেকে সংগৃহীত অর্থে ট্রাস্টের চলতি তহবিল গঠিত হবে। মূলত: ট্রাস্টের চলতি তহবিলের অর্থেই ছাত্র/ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হবে।

 

Post MIddle

ট্রাস্টের কার্যক্রম শুরু করার জন্য ২০১১-২০১২ অর্থ বছরের বাজেট থেকে সিডমানি হিসেবে ১০০০ (এক হাজার) কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। উক্ত অর্থ পাঁচটি তফসিলি ব্যাংকে (দুইশত কোটি টাকা হারে) এফডিআর করা হয়েছে।

 

উল্লেখ্য, গত ১৩/৩/২০১৩ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ট্রাস্টের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ২০১২-১৩ অর্থ বছর থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রকল্পে’র উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে ট্রাস্টের অর্থে পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

 

গত ০২/৫/২০১৩ তারিখ মাননীয় মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর সভাপতিত্বে ট্রাস্টি বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১২-১৩ অর্থ বছরে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রকল্প এর আওতায় ১,২৯,৮১০ জন ছাত্রীকে মোট ৭২.৯৫ কোটি টাকা উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এ লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩০/৬/২০১৩ তারিখে করবী মিলনায়তন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ঢাকায় স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের নির্বাচিত ১৫ (পনের) জন ছাত্রীকে সরাসরি উপবৃত্তি বিতরণের লক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন। ট্রাস্টের অর্থে ¯স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান এই প্রথম, যা শিক্ষা ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে মানব সম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

 

২০১৩-২০১৪ অর্থ বছর থেকে ১১টি জেলার ৯০% ছাত্রী ও ১০% ছাত্র এবং বাকী ৫৩টি জেলায় ৩০% ছাত্রী ও ১০% ছাত্রসহ মোট উপবৃত্তি যোগ্য ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা = ১,৭৪,৪৪৬ জনের মধ্যে  ৯৮,০৩,৮৬,৫২০.০০ (আটানব্বই কোটি তিন লক্ষ ছিয়াশি হাজার) টাকা, যা ট্রাস্টের এফডিআর (ঋউজ) এর প্রাপ্ত সুদ/লভ্যাংশ থেকে প্রদানের সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

 

উল্লেখ্য, বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পাঁচটি প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে উক্ত প্রকল্পসমূহের মাধ্যমে মোট ২৮,৯১,৩৩০ (আটাশ লক্ষ একান্নব্বই হাজার তিনশত ত্রিশ) জন ছাত্র-ছাত্রীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হয় এবং এ খাতে মোট ৬৬৮.১৫ (ছয়শত আটষট্টি কোটি পনের লক্ষ) কোটি টাকা ব্যয় হয়। প্রকল্পসমূহের মেয়াদ শেষে দেশের ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের সার্বিক উপবৃত্তি কার্যক্রম ট্রাস্টের অর্থে পরিচালিত হবে।

 

সুত্র: http://www.pmedutrust.gov.bd/?p=14&ckattempt=2

পছন্দের আরো পোস্ট