ওদের খোঁজ কেউ রাখে না
নাম তার মোহাম্মদ হেলাল, নিজের দেয়া নাম হিরো। তার হাস্যোজ্জ্বল মুখটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডাপ্রিয় শিক্ষার্থীদের কাছে অতি পরিচিত। কারণ বিকেল হলেই ক্যাম্পাসের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে চা বিক্রি করে সে। ইসলামনগর মডেল একাডেমির চতুর্থ শ্রেনির ছাত্র হিরো তার চাচার সাথে থাকে ইসলামনগর। খুব ছোট বয়সেই মাকে হারিয়েছে। তিন ভাইকে ফেলে চলে যায় তাদের বাবা। তারপর থেকে যোগাযোগ নেই, শোনা যায় আবার বিয়ে করেছে সে। অনাথ হেলালের আশ্রয় হয় চাচার কাছে। গার্মেন্টস শ্রমিক চাচা-চাচীর আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল না হওয়ায় পড়াশোনা চালানোর খরচ হেলালকেই যোগাতে হয়। সেকারণেই বিকাল বেলায় তার পরিচয় “চাওয়ালা”। প্রতিদিন সে আয় করে ২০০ টাকার মত। টাকার সিংহভাগ খরচ হয় চাচার সংসারে, একটি অংশে চলে তার পড়াশোনা। যতদূর পর্যন্ত পড়াশোনা করলে পাইলট হওয়া যায়, ততদূর পর্যন্ত পড়াশোনা করে যাওয়ার ইচ্ছে তার।
এমন আরও অনেক শিশু ঘুরে বেড়াচ্ছে জাহাঙ্গীরনগরে। সব মিলে সংখ্যাটি ৩০ জনের উপরে। কেউ বিক্রি করে চা, কেঊ বাদাম। আবার কেঊ সরাসরি ভিক্ষাবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ত। চা বিক্রি করে এমন কিছু শিশু হল আবু সাঈদ, বাচ্চু , নাঈম, হোসেইন, আলমগির, নাজমুল। বাদাম বিক্রি করে মিজান, সোহান, রমজান। ভিক্ষাবৃওির সাথে জড়িত আছে আরমান, হাসান, মনিরুজ্জামান ,হোসেন আলী ,শাকিল,আমেনা।
দুই ভাই সোহেল ও সাগর জানায়, তারা সেচ্ছায় বাদাম বিক্রি করে, পরিবার থেকে কোন ধরনের চাপ নেই্। বাদাম বিক্রির টাকা তারা বাবা-মাযের হাতে তুলে দেয়। স্কুলে যায় না। তাদের বাবা আজিজুল রহমান বলেন, তিনি চান তার সন্তানরা স্কুলে যাক। কিন্তু তারা পড়াশোনা করতে চাওয়ায় তিনি বাঁধা দেন না বাদাম বিক্রিতে। তিনি স্বীকার করেন অর্থ কষ্টে থাকলে মাঝে মাঝে বাধ্য হয়ে তিনি সন্তানদের বাদাম বিক্রি করতে বলেন। ছোট থেকেই ক্যাম্পাসে বেড়ে ওঠায় ক্যাম্পাসের পরিবেশে এরা অভ্যস্ত। তাই নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন করে না।
তবে জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু শিক্ষার্থী ভয়-ভীতি দেখিয়ে, কখনো কখনো অস্ত্রেও মুখে এদের উপার্জিত অর্থ ছিনিয়ে নেয়। আবার কখনো কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রভাবে তারা সিগারেটসহ নানা মাদক দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়ে।#
লেখাপড়া২৪.কম/আরএইচ