সাগরকন্যার ডেবিট ক্রেডিট

IMGসাগরকন্যা আর ডেবিট ক্রেডিট এই দুই শব্দের সাথে জড়িয়ে আছে কুয়াকাটা আর হিসাববিজ্ঞানের নাম । হ্যা, গত ২ মার্চ সাগরকন্যা থেকে ঘুরে এল গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা । বসন্তের আবহাওয়া আর সাগরের বিশালতার সুযোগ নিয়ে এই শিক্ষা সফরের শুরু । তাই ক্লাস, পরীক্ষা, এসেনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের ছকে বাধা জীবন থেকে কিছুটা রেহাই পেতে ও পুরো উদ্দ্যোম নিয়েকাজ করতে তাদের এই আনন্দ ভ্রমণ ।

 

শুরুটা হয় ২ মার্চ রাত ১১.৩০ এ ক্যাম্পাস থেকে বাস ভ্রমণের দ্বারা । দুইটি বাসে বিবিএ এর হিসাববিজ্ঞান পরিবার । পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের আনন্দ নিয়ে তাদের আনন্দ শুরু । রাতে দুটি বাসে গানের তালে তালে যাত্রা শুরু হয় । তাদের যাত্রা ছিল, হানিমুনের গানের তালে । তাইতো বাসের সকলের গলায় ভেসে উঠল, কুয়াকাটার জোয়ার ভাটায় হানিমুনে যাব ।

 

দীর্ঘ ৫ ঘন্টার বাস ভ্রমণ !!! গোপালগঞ্জ থেকে বরিশাল ও পটুয়াখালী হয়ে শেষমেষ ভোরেই হল তাদের সাগরকন্যার বিচে অবস্থান । এত বড় জার্নি তারপরেও ক্লান্তির অবসাদ নেই তাদের মাঝে । সারারাত গলা ছেড়ে গানের আভাসের ক্লান্তির প্রতিফলন গুড়িয়ে গেল কুয়াকাটার সাগরের বাতাসের তালে তালে । সকালে হোটেলে হালকা খাবারের পর সকলের নেমে পড়ল বিচের কোলে, হয়ে গেল ফুটবল । বালি ছুড়াছুড়ি, পানিতে ভিজা, ঝাপাঝাপি ।

 

সবকিছুর মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিলেন, বিভাগের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান । পানির ভিতরে গোল হয়ে তারা কৃত্রিম ঢেউ শুরু করল । তারপর আর কি, দুপুরে যাওয়া হল শুটকি পল্লী, কাকড়া চর । কাকড়ার চরে হল সূর্যাস্ত দেখা,নাচ আর গান আর কাকড়ার সাথে খুনসুটি । বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা রাঁধুনিও বাদ পড়ে নি তাদের আনন্দে । এক মিলনমেলায় শিক্ষক- শিক্ষার্থীর আনন্দে চোখ ছিল বাকী পর্যটকদেরও । এরপর কুয়াকাটার রাখাইন মার্কেটে গমন ।

 

১ ঘন্টার যাতায়াতে বাদ পড়ে নি কোন কিছুই । রাখাইন মার্কেটে কেনার জিনিস হল, হরেক প্রকার বার্মীজ আচার, ঝিনুকের মালা, রিচ ব্যান্ড, রাখাইনদের তাত শিল্পসহ আরও অনেক কিছু ! সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়ে রাতের খাওয়া, হোটেলের সামনে ছোট আনন্দ আড্ডা, গভীর রাতে কার্ড খেলা । তবুও ক্লান্তি থামে নি। পরদিন মানে রাত ৪ টায় সকলের যাত্রা ঝাউ বনের দিকে। আর সামনে জিরো পয়েন্টে দাড়িয়ে জল থেকে সূর্য উদয়ের দৃশ্য দেখা হল । এ দৃশ্য নিজের চোখ ধাধিয়ে দেওয়ার মত ।

 

Post MIddle

এরপর বৌদ্ধ মন্দির !!! বৌদ্ধ মন্দিরটি মিশ্রীপাড়াসীমা বৌদ্ধ বিহার নামে পরিচিত । যার ভিতরে গেলে দেখা যাবে বৌদ্ধের বিশাল মুর্তি । এর পাশেই রয়েছে একটি স্কুল । আর তার পরেই বিশাল কুয়া । ঠিক কিছুদূর গেলেও রাখাইন পল্লী । তাদের সঙ্গে হল রাখাইনদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি । রাখাইনদের মধ্যে একজন বলল, তাদের গোটা দিন যায় পর্যটকদের আশায় । তাত শিল্পের উপর হাতে বোনা কাপড়, নিজেদের তৈরি পিঠা বিক্রি করেই রাখাইন পল্লী চলে । তবে বেশীর ভাগই কৃষিকাজ ও দোকানপাটের ব্যাবসায় নিয়োজিত । কেউ কেউ কাজ করে কুয়াকাটার হোটেলগুলোতে । রাখাইনদের কয়েকটি দোকানে বেশ ধুম পড়ে গেল সাথে সাথে । নিজেদের হাতে বোনা কাপড়, সালোয়ার আর পাঞ্জাবীর আকর্ষণ ছিল সবার মাঝে ।

 

রাখাইনদের সাথে একটা আলোচনা সভাও হয়ে গেল আমাদের চাকমা বন্ধু প্রীতি কুসুমের সাহায্যে । রাখাইন ও চাকমা এই দুই আধিবাসী শুরু করল নিজেদের সুখ দু:খের ইতিহাস । এই শিক্ষা সফরে তাদের শিক্ষার বিষয়বস্তু পর্যটন ও হোটেল ব্যাবস্থাপনা থেকেও জ্ঞান আরোহন করতে বাদ পড়ে নি কেউ । তাই প্রায় সাতটার মত হোটেলে ঢু মারতে হয় হিসাববিজ্ঞান পরিবারকে । হাজারও উত্তর খুজতে হয় সেখান থেকে ।

 

১১.৩০ এ আমরা ফিরে গেলাম ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে । বিদায় দিলাম সাগরকন্যাকে । কিন্তু আনন্দ কি আর থামে? বাস গিয়ে থামল বরিশালের গৌরনদীতে । দুপুরের খাওয়া দাওয়া আর বিখ্যাত গৌরনদীর দই চুকিয়ে আয়েশ করে বাসে গান গাওয়া শুরু করল সবাই । সবশেষ বিকেল ৬ টায় পৌছান হল ক্যাম্পাসের মাটিতে ।

 

উল্লখ্যে, বশেমুরবিপ্রবিতে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের যাত্রা শুরু হয় গত ২০১৩-১৪ সেশন থেকে । এর আগেও প্রথম ব্যাচের ট্যুর হওয়াতেও এবার তিন ব্যাচ মিলে এই প্রথম সফর দেওয়া হয় কুয়াকাটায় ।

IMG2

নাসিমুল ইসলাম I বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় , গোপালগঞ্জ

পছন্দের আরো পোস্ট