ঢাবিতে ‘পতাকা উত্তোলন দিবস’ উদযাপন

2-3-2016মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকল্প নেই- এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে শৃক্সখলার সাথে সমৃদ্ধ ও আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি (২ মার্চ) বুধবার সকালে ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান। কলাভবনের সামনে ঐতিহাসিক বটতলায় অনুষ্ঠিত আলোচনা, দেশাত্ববোধক সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। অনুষ্ঠানে বক্তারা পতাকা উত্তোলন দিবসের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অবদানের কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন নজরুল অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। অনুষ্ঠানে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ ও নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করতে হয় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে এবং দায়িত্বহীন ও বিকৃত মন্তব্য অনেকেই করছেন। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে একই সাথে করা হচ্ছে কটাক্ষ। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সচেতন থাকার জন্য নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রতিটি পরিবারে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন- রয়েছে বীরত্ব গাঁথা। উপাচার্য লেখক মুস্তফা চৌধুরী লিখিত ‘৭১-এর যুদ্ধশিশু অবিদিত ইতিহাস’ শীর্ষক গ্রন্থের উল্লেখ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিরল উপকরণ, উপাদান ও তথ্য অজানা রয়েছে। যুদ্ধশিশুরা পশ্চিমা দেশে বড় হয়েছে এবং বসবাস করছে।

 

Post MIddle

আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে যোগসূত্র স্থাপনের দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইচ্ছাকৃতভাবে মুক্তিযুদ্ধের অনেক দলিল-দস্তাবেজ ধ্বংস করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল তরুণ প্রজন্মকে শৌর্য-বীরত্বগাঁথা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। তাই আজ নবীণ শিক্ষার্থীদের ভাষা-শহীদসহ মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনাকে জানতে হবে, তা থেকে অণুপ্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

 

উপাচার্য আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ এই ঐতিহাসিক বটতলায়ই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল যা বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অনন্য মাইলফলক। ঐতিহাসিক বটতলায় এই পতাকা উত্তোলনের তাৎপর্য নিয়ে বিশদভাবে আলোকপাত করে উপাচার্য বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে ধাপে ধাপে জাতিকে প্রস্তুত করেছিলেন স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে। ১৯৪৮ সালে এই মহান মাসে বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেন। তখনই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন বাঙালির মুক্তির জন্য স্বতন্ত্র ভূখণ্ড প্রয়োজন।

 

উপাচার্য দৃঢ়তার সাথে বলেন, ভাষা আন্দোলনের শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে তার অগ্রযাত্রাকে কেউ রোধ করতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, তরুণ প্রজন্মকে এই সত্যকে প্রচার করতে হবে, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য জ্ঞানের আলোকে, শিক্ষার আলো দিয়ে অন্ধকার দূর করে সমাজকে প্রজ্জ্বলিত করা। আলোকিত মানুষের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। মানুষের চিন্তাশীলতা ও মননশীলতার মধ্য দিয়ে গড়ে তুলতে হবে অসাম্প্রদায়িক আলোকিত বাংলাদেশ।

 

লেখাপড়া২৪.কম/ঢাবি/পিআর/এমএএ

পছন্দের আরো পোস্ট